তারেক সদ্য এসএসসি পাস করেছে। রেজাল্ট বেশ ভালো। আশেপাশের লোকেরা তাকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিতে শুরু করল। কেউ বলল, “পড়াশোনায় মন দাও, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হও।” কেউ বলল, “তোমার বাবার জমি আছে, কৃষিকাজ করো।” আবার কেউ পরামর্শ দিল, “একটা কারিগরি শিক্ষা নাও, বিদেশ যাও। ভালো আয় হবে।”
তারেক ভাবনায় পড়ে গেল। সে কী করবে?
একদিন তার স্কুলের স্যার তাকে ডেকে বললেন,
“শোনো তারেক, জীবনে এগোতে হলে পরিকল্পনা দরকার। তুমি কী চাও, সেটা বুঝতে হবে। কিছু পরামর্শ শোনো:
- যদি উচ্চশিক্ষায় যেতে চাও, এখন থেকেই সময় নষ্ট না করে পড়াশোনায় মনোযোগ দাও।
- যদি দ্রুত আয় করতে চাও, তাহলে ড্রাইভিং, ইলেকট্রিক কাজ বা এসি-ফ্রিজ মেরামতের মতো দক্ষতা শিখে ফেলো।
- যদি বাবার জমি বা সম্পত্তি থাকে, গরুর খামার শুরু করো। নিজের পায়ে দাঁড়াও।
- আর যদি সাহস থাকে, বাহিনীগুলোর সার্কুলারগুলোতে আবেদন করো। তোমার বয়স এখনই উপযুক্ত।
সবচেয়ে বড় কথা, যেটা করবে, মন দিয়ে করবে। আর কখনো সার্টিফিকেটের গুরুত্ব ভুলে যেও না। লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।”
তারেক মন দিয়ে স্যারের কথা শুনল। এরপর সে নিজের লক্ষ্যের কথা ভাবতে বসল। কয়েকদিনের মধ্যে তারেক সিদ্ধান্ত নিল, সে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখা শুরু করবে। কারণ তার ইংরেজি আর অংকে ভালো দক্ষতা আছে। একই সঙ্গে একটা কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাবে।
এক বছর পর, তারেক গ্রামের প্রথম ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে পরিচিত হলো। সে এখন মাসে ভালো আয় করে, আর অনলাইনে কাজ করেও সবার কাছে অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে উঠেছে।
শিক্ষা:
জীবনে সঠিক পরিকল্পনা আর মনোযোগ থাকলে যে কোনো পথেই সফল হওয়া যায়। এসএসসি পাসের পর নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই জরুরি।
১. দক্ষতাভিত্তিক কাজ শিখুন:
যদি আপনার পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য থাকে (৪-৫ লাখ টাকা), তাহলে ড্রাইভিং, ইলেকট্রিক কাজ, এসি ও ফ্রিজ মেরামত বা পাইপলাইন সংক্রান্ত কাজ শিখুন। এক বছর মনোযোগ দিয়ে শিখলেই দক্ষ হয়ে উঠবেন। এর পাশাপাশি পাসপোর্ট করে রাখুন। ভালো কোনো এজেন্সি দেখে মধ্যপ্রাচ্যে যান। দক্ষতা থাকলে বিদেশে কাজের অভাব নেই, এবং মাসে লাখ টাকা আয় করা কোনো ব্যাপার না।
২. মানবিক বিভাগ এবং কারিগরি শিক্ষা:
বিদেশ যেতে না চাইলে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়ে অটোমোবাইল মেকানিকের কাজ শিখুন। এই পেশায় চাহিদা অনেক, বিশেষ করে গাড়ির মালিকেরা এর গুরুত্ব বুঝবেন।
৩. গবাদি পশু পালনে বিনিয়োগ:
আপনার বাবার জমি থাকলে বিদেশ যাওয়ার দরকার নেই। এক-দুই লাখ টাকা বিনিয়োগ করে গরুর খামার শুরু করুন। আপনার বন্ধু ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার আগেই আপনি ১০টি গরুর মালিক হতে পারেন।
৪. ভাষা শিখুন:
রাশিয়ান, চাইনিজ, জার্মান, ইংরেজি, কোরিয়ান এবং আরবি ভাষা শিখুন। এসব ভাষার দক্ষতায় বড় কোম্পানিতে কাজের সুযোগ পাবেন, যেখানে মাসে ৫ লাখ টাকা আয় সম্ভব। তবে এই সঙ্গে ইন্টারমিডিয়েটের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে।
৫. উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি:
ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলে আপনার রেজাল্ট যদি সেই মানের হয়, তাহলে পড়াশোনায় মনোযোগ দিন। ৩ হাজার টাকা দিয়ে একটি ভালো স্টাডি টেবিল কিনুন এবং ফোন থেকে মনোযোগ সরান। এখন থেকেই কঠোর পরিশ্রম শুরু করুন।
৬. সার্টিফিকেট অর্জন করুন:
যেকোনো কলেজে ভর্তি হয়ে অন্তত একটি সার্টিফিকেট অর্জন করুন। এটি আপনাকে “মুর্খ” বা অদক্ষ বলা থেকে বাঁচাবে।
৭. বাহিনীগুলোর চাকরির সুযোগ নিন:
আপনার যদি শারীরিক গঠন ভালো এবং বয়স অনুকূলে থাকে, তাহলে সশস্ত্র বাহিনী বা পুলিশে আবেদন করতে ভুলবেন না। চেষ্টা করলে সফলতা আসতে পারে।
৮. প্রযুক্তিতে দক্ষতা:
ইংরেজি এবং গণিতে ভালো হলে ওয়েব ডেভেলপমেন্টের দিকে মনোযোগ দিন। এটি ভবিষ্যতে ভালো উপার্জনের সুযোগ করে দেবে।
শেষ কথা:
উপরের পরামর্শগুলো স্ক্রিনশট করে রাখুন। এখন হয়তো এগুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে না, কিন্তু যখন অনার্স পাস করেও একটি মালি বা সাধারণ চাকরির জন্য লাখ লাখ মানুষ পরীক্ষা দিচ্ছে, তখন এর গুরুত্ব বুঝবেন।
সবাইকে ধন্যবাদ। আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হোক! 🙏