গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (GHI) ২০২৩ অনুযায়ী, ভারতের অবস্থান ১২৭টি দেশের মধ্যে ১০৫তম, স্কোর মাত্র ২৭.৩, যা এই দেশকে “সিরিয়াস ক্ষুধার্ত” ক্যাটাগরিতে ফেলে। ভারতের এই সমস্যাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হলো:
ভারতের ক্ষুধার্ত পরিস্থিতি: সমস্যার গভীরতা
- ক্যালরি ঘাটতি: ভারতের ১৩.৭% জনসংখ্যা দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় ক্যালোরি পায় না।
- শিশু অপুষ্টি:
- স্টান্টিং (Stunting): ৩৫.৫% শিশু উচ্চতার তুলনায় কম বেড়ে ওঠে।
- ওয়েস্টিং (Wasting): ১৮.৭% শিশু ওজনের তুলনায় কম উচ্চতা অর্জন করেছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।
- শিশু মৃত্যুহার: প্রতি ১০০০ শিশুর মধ্যে ২.৯% পাঁচ বছরের আগেই মারা যায়।
ভারতের কৃষক ও অসমবণ্টন সমস্যা
ভারতের কৃষকরা এই সংকটের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। বিশ্বে কৃষক আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি ভারতে। খাদ্য উৎপাদনে কৃষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও, তারা ন্যায্য দাম পান না। খাবারের মূল্য না পেয়ে তাদের জমি-জমা বিক্রি করতে বাধ্য হতে হয়।
এর চেয়েও আশ্চর্যের বিষয় হলো, ভারতের মতো একটি ক্ষুধার্ত দেশ বিপুল খাদ্য রপ্তানি করে। কিন্তু এই রপ্তানির কারণ হলো অভ্যন্তরীণ বাজারে কৃষকের ফসলের সঠিক দাম না থাকা এবং অসম বণ্টন।
বাংলাদেশ: একটি তুলনামূলক সাফল্যগাঁথা
অপরদিকে, বাংলাদেশ ৮৪তম অবস্থানে রয়েছে এবং “মাঝারি ক্ষুধার্ত দেশ” হিসেবে চিহ্নিত। এই উন্নতির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:
- উন্নত শিশু পুষ্টি:
- স্টান্টিং হার ৩১% (ভারতের তুলনায় অনেক কম)।
- ওয়েস্টিং হার ১১.২%, যা ভারতের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো।
- সামাজিক সংগঠন ও কমিউনিটি সেবা:
- বাংলাদেশে মাদ্রাসা ও এতিমখানাগুলো সমাজের নিম্নবিত্ত শ্রেণির ক্ষুধা মেটাতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
- এসব প্রতিষ্ঠান যাকাত ও দান সংগ্রহ করে সেবা প্রদান করে, যা ভারতের তুলনায় উল্লেখযোগ্য।
- সরকারি উদ্যোগ:
- বাংলাদেশের কৃষি দপ্তর একটি সফল সংস্থা। কৃষকদের জন্য বিভিন্ন রকম ভর্তুকি, প্রশিক্ষণ, এবং প্রযুক্তি সহায়তা দেওয়া হয়।
- কৃষি গবেষণায় অগ্রগতি:
- বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। উদাহরণস্বরূপ, জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী ধান গবেষণায় বিশ্বে অসামান্য অবদান রেখেছেন।
বাংলাদেশ বনাম ভারতের উর্বরতা ও বণ্টন
বাংলাদেশের মাটি ভারতের তুলনায় বেশি উর্বর। যদিও কৃষকরা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হন, তবু তারা সরকারি সহায়তা ও কমিউনিটি সেবার মাধ্যমে উপকৃত হন। ভারতে যেটি অসম বণ্টন ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় আটকে আছে, বাংলাদেশ সেখানে তুলনামূলক সুশৃঙ্খল।
উপসংহার
ভারত একটি বড় দেশ হলেও তার বিপুল জনগোষ্ঠী ক্ষুধা, অপুষ্টি এবং কৃষি সমস্যার শিকার। অপরদিকে, বাংলাদেশ তার সীমিত সম্পদ ও আয়তনের মধ্যেই ভারসাম্যপূর্ণ উন্নতি করে যাচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা, সামাজিক সংহতি, এবং কৃষি গবেষণায় বিনিয়োগের কারণে বাংলাদেশের এই সফলতা সম্ভব হয়েছে।
এই তুলনা থেকে পরিষ্কার, সঠিক নীতি ও উদ্যোগই একটি দেশের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।