মেয়েটা রাতুলের এই অবাক অবাক চেহারা দেখে কাতর কণ্ঠে বলল, ‘আমায় একটু সাহায্য করবে? আমার ভ্রুটা কেটে গেছে। বেশ রক্ত ঝরেছে। তোমার কাছে কোনো অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম হবে?’
মেয়েটার কথা শুনে রাতুল আরো অবাক হলো। কী চমৎকার রিনরিনে কণ্ঠ! মনে হয় দূর থেকে বৃষ্টির শব্দ ভেসে আসছে। রাতুল ভালো করে চেয়ে দেখে সত্যি সত্যি মেয়েটার বাঁ পাশের ভ্রুটা কেটে গেছে। রক্ত বের হচ্ছে, সবুজ রঙের! মানুষের রক্তের লং লাল। মেয়েটার সবুজ। রাতুলের আর সন্দেহ রইল না- ওটা একটা পরীর মেয়ে।
রাতুল চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে বলল, কিভাবে কেটে গেল?’
‘আকাশ থেকে নামার পথে একটা পাজি মেঘের সঙ্গে ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়েছিলাম। তখনিই কেটে গেছে।’
‘তুমি আকাশে থাক?’
‘হ্যাঁ, আমরা আকাশেই থাকি।’ মেয়েটা মিষ্টি করে হেসে জবাব দিল।
‘তুমি কি তাহলে পরী?’
‘দেখে মনে হয় না বুঝি!’
রাতুল মাথা নেড়ে বলল, ‘হ্যাঁ, হয়। নাম কী তোমার?’
‘আমার নাম -বৃষ্টিপরী।’
‘বৃষ্টিপরী? কী চমৎকার নাম! আমার নাম রাতুল। ক্লাস থ্রি-তে পড়ি।’
বৃষ্টিপরী বলল, ‘হ্যাঁ, আমি সব জানি।’
‘সব জান! কী করে?’ রাতুলের কণ্ঠে বিস্ময়।
‘আমরা আকাশ থেকে পৃথিবীর সবকিছু দেখতে পাই, তাই পৃথিবীর সবকিছুই আমরা জানি।’ বৃষ্টিপরীর কথা শুনে রাতুল এতোই অবাক হলো যে, কিছুই বলতে পারল না।
বৃষ্টিপরী তার কেটে যাওয়া ভ্রুটাতে হাত দিয়ে বলল, ‘ইশ্, এখনো রক্ত বের হচ্ছে….’
রাতুল লজ্জা পেয়ে বলল, ও আচ্ছা আনছি। আমার তো একদম মনে ছিল না, তুমি একটু বোসো আমি এক্ষুণি ক্রিমটা নিয়ে আসছি।’ রাতুল এক ছুটে ঘর থেকে অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম আর কিছু তুলা নিয়ে এলো।’
তুলা দিয়ে রক্ত মুছতে মুছতে বৃষ্টিপরী বলল, ‘তোমাকে শুধু শুধু কষ্ট দিলাম, তাই না?’
‘কষ্ট? কী যে বল!’ রাতুল একটু থেমে বলল, ‘আচ্ছা তোমার নাম বৃষ্টিপরী হলো কেন?’
‘আমরা বৃষ্টির দেশে থাকিতো তাই আমাদের নাম বৃষ্টিপরী’ পৃথিবীতে যখন বৃষ্টি নেমে আসে বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে আমরাও পৃথিবীতে নেমে আসি।’
‘বৃষ্টিতে ভিজে যাও না?’
‘নাহ্, ভিজব কেন? আমরাতো বৃষ্টি দিয়েই তৈরি।’ ‘সত্যি?’ রাতুল অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে।
‘হ্যাঁ, সত্যি।’ বৃষ্টিপরী বলল।
রাতুল বৃষ্টিপরীর ভ্রু-তে ভালো করে ক্রিমটা লাগিয়ে দিয়ে বলল, ‘চিন্তা নেই সেরে যাবে।’
বৃষ্টিপরী মিষ্টি করে হেসে বলল, ‘তুমি খুব ভালো ছেলে তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।’
রাতুল অপ্রস্তুত হয়ে বলল, ‘না, না ঠিক আছে।’
বৃষ্টিপরী হঠাৎ জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল,
‘ও মা! অনেক বেলা হয়ে গেল। আমায় এক্ষুণি ফিরতে হবে। সূয্যিমামা এসে গেলেতো মহাবিপদ!’
রাতুল অবাক হয়ে বলল, ‘মহাবিপদ কেন?’
‘সূর্যের তাপ আমাদের একদম সহ্য হয় না। সূর্যের তাপ পেলেই আমাদের শরীর পুড়ে যায়তো তাই।’
‘ও, আচ্ছা’
বৃষ্টিপরী তার গোলাপি ডানা দুটো নেড়ে বলল, ‘আজ তাহলে আসি। আবার দেখা হবে।’
রাতুল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে। আবার এসো।’
বৃষ্টিপরী ঘর থেকে বের হতে যাচ্ছিল ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, ‘ওহ হো তোমাকে তো একটা জিনিস দেয়াই হয়নি! এই নাও’ বলেই তার ডানা থেকে এক টুকরো গোলাপি রঙের মেঘের মতো নরম কিছু রাতুলের হাতের তালুতে তুলে দিল। বৃষ্টিপরী বলল, ‘এটা আমার ডানার পালক।’
রাতুল পালকটা ভালো করে চেয়ে দেখল। দেখতে কী চমৎকার, মিষ্টি একটা গ ছড়াচ্ছে, আর কী ঠাণ্ডা!
বৃষ্টিপরী হেসে বলল, ‘এবার আসি তাহলে?’
রাতুল মাথা নেড়ে বলল, ‘এসো।’ এরপর বৃষ্টিপরী ছাদের মাঝখানটায় দাঁড়িয়ে প্রজাপতির মতো ডানা নেড়ে শূন্যে উড়ে গেল।
এরপর অনেকদিন কেটে গেছে। রাতুল এখনো বৃষ্টি এলেই আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে বৃষ্টিপরীকে দেখার জন্য। কিন্তু অনেকদিন চেষ্টা করেও রাতুল আর বৃষ্টিপরীর দেখা পায়নি। তবে বৃষ্টিপরীর দেয়া পালকটা এখনো রয়ে গেছে তার কাছে।