Menu Close

ফের ফিলিং স্টেশনে হামলা: মাদকচক্রের নেতৃত্বে তালা ঝুলিয়ে জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা

Arif filling station tarakupi kataksthal gournadi barishal

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কটকস্থলে অবস্থিত ‘মেসার্স আরিফ ফিলিং স্টেশন’-এ আজ শনিবার (৩ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সংঘবদ্ধভাবে হামলা ও জোরপূর্বক দখলের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় হিরা মাঝি ও মানিক মাঝির নেতৃত্বে শতাধিক ব্যক্তি স্টেশনে অনধিকার প্রবেশ করে মালিকপক্ষকে হটিয়ে দখল নেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন মালিক হারুন বেপারী ও তার পরিবার।

ঘটনার বিবরণ:

চোখে পড়ার মতো শতাধিক নারী পুরুষ হঠাৎ স্টেশনে প্রবেশ করে মালিক হারুন বেপারীর ওপর হামলার চেষ্টা চালায় এবং স্টেশনের অফিস কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় বাধা দিতে গেলে কর্মচারী হুমায়ুন গুরুতর আহত হন। দ্রুত খবর পেয়ে গৌরনদী থানার পুলিশ এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাজিব হোসেন ঘটনাস্থলে পৌঁছান। প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

রাজনৈতিক প্রভাব ও পুরনো বিরোধ:

সূত্রমতে, ফিলিং স্টেশনটির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। অভিযোগ রয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ মুন্সি একটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে স্টেশনটি জোরপূর্বক ভোগদখলে নেন। এরপর হারুন বেপারীর স্বাক্ষর জাল করে মাদকসম্রাট হিরা মাঝির পক্ষে তার বাবা মজিবুর মাঝির নামে এবং ফরহাদ মুন্সির অংশ মানিক মাঝির নামে আরেকটি চুক্তিপত্র তৈরি করা হয়, যা সম্পূর্ণ অবৈধ বলে দাবি করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী অভিযোগ ও প্রশাসনের নির্দেশনা উপেক্ষা:

হারুন বেপারীর মেয়ে পপি বেপারী জানান, গত বছরের ৫ আগস্টের পর থানায় অভিযোগ করা হলেও অভিযুক্তরা তাতে সাড়া দেয়নি। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তিনি দুই দফা শুনানি নিয়ে হিরা মাঝি ও মানিক মাঝি গংদের ফিলিং স্টেশনের আশপাশে না যাওয়ার নির্দেশ দেন। তবে, সেই নির্দেশ অমান্য করেই আজকের এই সংঘবদ্ধ হামলা চালানো হয়েছে।

পপি আরও অভিযোগ করেন, এর আগেও হিরা মাঝির নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ দল স্টেশনে প্রবেশ করে প্রায় ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা লুট করে নেয়। ঘটনার প্রেক্ষিতে থানায় মামলা দাখিল করলে হিরা মাঝি ও তার ছেলে সিফাত মাঝিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। তারা জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই প্রাণ নাশের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিল।

রাজনৈতিক যোগাযোগ ও হুমকি:

সম্প্রতি বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মিজানুর রহমান খান মুকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি হিরা মাঝির পক্ষে কথা বলে ফিলিং স্টেশনের মালিক হারুন বেপারীকে কাগজপত্র তুলে দিতে বলেন এবং স্টেশনে তালা লাগানোর হুমকি দেন। সংশ্লিষ্ট কথোপকথনটি স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচিত হয় এবং গৌরনদী এলাকায় এটি ‘টক অব দ্য টাউন’-এ পরিণত হয়। এতে অনেকেই ধারণা করছেন, এই ঘটনার প্রভাব মুকুলের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে নেতিবাচকভাবে পড়তে পারে।

এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি বিভিন্ন ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানের মালিকানা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। এসব বিষয়ে ইতিমধ্যেই জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

আজকের হামলার মূল ঘটনা:

আজকের হামলায় হিরা মাঝি ও মানিক মাঝি গং একত্রে এসে স্টেশনে জোরপূর্বক প্রবেশ করে মালিক হারুন বেপারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে এবং তাকে স্টেশন থেকে বের করে দিয়ে অফিসে তালা মেরে দেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।

প্রশাসনের অবস্থান ও পরবর্তী পদক্ষেপ:

ঘটনার বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাজিব হোসেন বলেন, “আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করি। তালার চাবি স্টেশনের কর্মীদের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বসে মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র ও লাইসেন্স যাচাই করে সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা হবে।”

Related Posts