এই লেখাটা পড়লে আপনি একটু অস্থির হয়ে উঠতে পারেন। এমনকি কিছুটা আতঙ্কও ধরতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, এখন একটু অস্থির হওয়াটাই দরকার। কারণ উটপাখির মতো চোখ বন্ধ করে থাকলে ঝড় থেমে যায় না।
শুরুতেই একটা জিনিস জানিয়ে রাখি—আমারও একটা চার বছরের ছেলে আছে, নাম “ডোডো”। আমি যেমন ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি, আপনিও নিশ্চয়ই ভাবেন। এই লেখাটার উদ্দেশ্য কাউকে ভয় দেখানো নয়। বরং চোখ খুলে দেওয়া।
আপনি যদি ভাবেন এটা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা দুর্নীতি নিয়ে কোনো বক্তৃতা—তাহলে ভুল করছেন। আমি এর চেয়েও গভীর, মৌলিক একটা বিপদ নিয়ে কথা বলছি।
প্রথমেই প্রশ্নটা ছুড়ে দিই – “পড়াশোনা করে আসলে কী হবে?”
আজকের দিনে অধিকাংশ মা-বাবার মাথায় একটা প্ল্যান থাকে—পড়াশোনা করবে, ভালো রেজাল্ট করবে, ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে, কিংবা একটা চাকরি পাবে।
শুধু একটা কথা বলি—আপনি ২০-৩০ বছর পরের পৃথিবীটাকে চিন্তা করতে পারছেন তো?
AI (Artificial Intelligence) আসছে না—AI ইতিমধ্যেই অনেক চাকরি গিলে নিয়েছে। ফটো এডিটিং, ভিডিও বানানো, পোস্টার ডিজাইন—সব AI করে দিচ্ছে এখন। এসব কাজে জীবিকা চলত এমন অনেকেরই এখন জীবন বদলে গেছে।
আমি নিজে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এই ফিল্ডে। আমি জানি এই টেকনোলজির স্পিডটা কতটা ভয়ানক।
Custom AI টিউটর – আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ রক্ষার উপায়
আপনার বাচ্চা যদি সেভেনে পড়ে, তাহলে আপনি সহজেই তার বইগুলো স্ক্যান করে AI দিয়ে একটা Custom GPT বানাতে পারেন।
এই AI টিউটর তার যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেবে, ক্লাসের রেফারেন্স দেবে, এবং সবচেয়ে বড় কথা, একদম নির্ভুল হবে।
এই পুরো প্রক্রিয়াটাই আপনি করতে পারেন ওপেন সোর্স টুল ব্যবহার করে—একদম বিনা পয়সায়।
তাহলে মাসে মাসে টিউটরের পিছনে এত টাকা খরচ করার মানে কী?
বিশ্বাস করুন, ২০ বছর পরের পৃথিবীতে মানুষ টিউটর থাকবে না—থাকবে কেবল AI টিউটর।
জ্ঞান এখন মোবাইলে—মূল্য পাবে কেবল Critical Thinking
আগে যারা অনেক জানত, সমাজ তাদের সম্মান করত। এখন মোবাইলে, AI-তে, ইন্টারনেটে সব উত্তর হাতের মুঠোয়।
আজকের দিনে তাই “তথ্য” নয়, “ভাবনা”—মানে Critical Thinking-এর দাম।
আপনার বাচ্চা যদি সারাদিন টিউশন, স্কুল, হোমওয়ার্কে ডুবে থাকে—সে কখন ভাববে?
সময় দিন, খেলতে দিন, প্রশ্ন করতে দিন। একটু বোর হলে হোক—সেখান থেকেই তো প্রশ্ন আসে, চিন্তা আসে।
আপনার বাচ্চার জীবনটা প্রতিযোগিতার শিকার না হোক
অসংখ্য বাবা-মা অন্যদের দেখে ছুটছেন এবাকাস, আঁকা, গিটার, অলিম্পিয়াডের পিছনে।
প্রশ্ন করুন—আপনার বাচ্চার সত্যিকারের ইচ্ছেটা কী?
একটা বাচ্চা আঁকতে ভালোবাসে, সঙ্গে সঙ্গে আঁকার স্কুল, টিউশন, কম্পিটিশন—শেষমেষ আঁকার প্রতি আগ্রহটাই শেষ।
এভাবেই আজকের সমাজ বাচ্চাদের সময় কেড়ে নিচ্ছে। আর ওদের জীবন হয়ে উঠছে শুধুই “Target Achieve” করার মেশিন।
শেষ কথা – আপনি গাছ লাগান, ফল নিজে থেকে আসবে
একটা গাছকে যেমন শুধু সঠিক আলো-বাতাস-পানি দিলেই হয়, তেমনি আপনার সন্তানের জন্য আপনাকে শুধু পরিবেশটা বানিয়ে দিতে হবে।
জোর করে ফল চাইলেই ফল আসবে না।
আজ আপনার শিশুটি যদি নিজের মতো করে সময় পায়, ভাবতে শেখে, চেষ্টা করতে শেখে—তবেই সে আগামী পৃথিবীতে টিকে থাকবে। কারণ ওখানে জানার চেয়ে ভাবার ক্ষমতা, সৃষ্টি করার ক্ষমতা—এসবই আসল সম্পদ।