মোড়লদের চাপে কন্যাকে তেজ্য ঘোষনা – পুত্রকে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে অংশগ্রহনে বাঁধা

বাবা হরিচাঁদ হালদার। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত আহুতিবাটরা গ্রামে।
ওই গ্রামের মৃত পুলিন হালদারের পুত্র বিপ্লব চন্দ্র হালদার জানান, প্রেমের সম্পর্কে একই গ্রামের তার পিসতুতো বোন হরিচাঁদ হালদারের কন্যা শিল্পী হালদারকে (২২) বিবাহ করার অপরাধে গ্রামের মোড়ল মনোতোষ হালদার, শৈলেন হালদারসহ তাদের সহযোগীরা গতকাল সোমবার তাকে তার বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে অংশগ্রহন করতে দেয়নি। তার (বিপ্লবের) স্থলে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে জোড়পূর্বক পিন্ডদান করানো হয় বিপ্লবের কাকাতো ভাই সমির হালদার, মানিক হালদার ও বাদল হালদারকে দিয়ে। আক্ষেপ করে বিপ্লব বলেন, ভালবেসে বিয়ে করা যদি অপরাধ হয়। তাহলে দু’জনের জীবন দিয়েই সে ভালবাসা অমর করে যাব। 
বিপ্লবের স্ত্রী শিল্পী হালদার জানান, ভালবেসে বিয়ে করার অপরাধে তার পিতা হরিচাঁদ হালদারের ওপর গ্রাম্য মোড়লরা বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করেন। গ্রাম্য মোড়লদের অব্যাহত চাপের মুখে গত রবিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে মোড়লদের উপস্থিতিতে তার পিতা তাকে মৌখিখ ভাবে তেজ্য ঘোষনা করেছেন।
বিপ্লব ও শিল্পী হালদার গ্রাম্য মোড়লদের কুসংস্কারের হাত থেকে রেহাই পেতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। 
উল্লেখ্য, প্রেমের সম্পর্কে গত ২১ জুলাই বিপ্লব ও শিল্পী বিয়ে করে নিরুদ্দেশ হন। এরইমধ্যে গত ৬ আগস্ট সকালে বিপ্লবের পিতা পুলিন হালদার (৬৫) দুরারোগ্যব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবার মৃত্যুর খবর শুনে স্ত্রীকে নিয়ে বিপ্লব ৬ আগস্ট বেলা এগারোটার দিকে বাড়িতে আসেন। বাড়ির সম্মুখে পৌঁছলে গ্রাম্য মোড়ল রেনুপদ হালদার, ডাঃ হরেকৃষ্ণ হালদার, সুধীর মলি¬ক, ধীরেন্দ্র নাথ বৈদ্ধ, রমেশ হালদার, মনতোষ হালদার, মোনাই হালদার ও তাদের সহযোগীরা বিপ্লব ও তার স্ত্রী শিল্পীকে বাড়িতে প্রবেশ করতে বাঁধা সৃষ্টি করে। মোড়লরা জানায়, হিন্দু ধর্মের রিতী অনুযায়ী নিকট কোন আত্মীয়কে বিয়ে করা যাবে না। সেক্ষেত্রে সামাজিক ভাবে বিয়ে না করায় বিপ্লব তার মৃত পিতার সৎকারে অংশগ্রহন করতে পারবে না। এনিয়ে মোড়লদের সাথে বিপ্ল¬বের বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে মোড়লরা তাকে (বিপ্ল¬বকে) একঘোরে করে রাখার হুমকি দেয়। উপায়অন্তুর না পেয়ে বিপ্লব আগৈলঝাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অশোক কুমার নন্দির সরনাপন্ন হন। অবশেষে ওসি অশোক কুমার নন্দির হস্তক্ষেপে দিনমজুর পুলিন হালদারের মৃত্যুর ৩৩ ঘন্টা পর গত ৭ আগস্ট তার পুত্র বিপ্লব হালদার পিতার লাশের সৎকার সম্পন্ন করেন। গতকাল ছিলো তার (মৃত পুলিন হালদারের) শ্রাদ্ধানুষ্ঠান।