একটি স্লুইস গেট : ত্রিশ হাজার কৃষকের মরন ফাঁদ

দশটি গ্রামের ত্রিশ হাজার কৃষক ও সাধারন মানুষের মরন ফাঁদ হয়ে দাড়িয়েছে। স্ল্ইুসগেটটি নির্মানের ফলে একদিকে যেমন কৃষককের মরন ফাঁদ তৈরি হয়েছে অপরদিকে এলাকার কতিপয় প্রভাবশালীরা যাতায়াতের সুবির্ধার্থে খালের মধ্যে বিভিন্ন অংশে পাঁচটি বাঁধ দিয়ে সড়ক নির্মান করেছে। স্লুইসগেট ও বাঁধ নির্মান করায় জনগুরুত্বপূর্ণ খালটিতে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে ক্রমইে মরা খালে পরিনত হচ্ছে। স্লুইসগেট ও প্রভাবশালীদের নির্মানকৃত বাঁধ অপসারন করে জনগুরুতপূর্ণ খালটিতে পানি চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও স্থানীয় জনসাধারন।
এলাকাবাসি, ভুক্তভোগী কৃষক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল এলজিইডি ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের আওতায় ২০০১-২০০২ অর্থ বছরে প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কালনা গ্রামের মোল্লারখাল নামকস্থানে স্লুইসগেট নির্মান করা হয়। স্থানীয় মোঃ আলাউদ্দিন ঘরামী (৪৮), গোলাম হেলাল মিয়া (৪৫), মোঃ লাল মিয়া বেপারী (৬৫), হানিফ বেপারী (৪৮), রব মাতুব্বর (৪৫), নজরুল শরীফ (৩৫), হাবিব সরদার (৬৮) সহ  অনেকেই জানান, কৃষকদের সুবির্ধার্থে এ স্লুইসগেটটি নির্মান করা হলেও অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত হওয়ায় তাদিয়ে সাধারন কৃষকরা কোন সুবিধা ভোগ করতে পারেননি। বরং কৃষকের মরন ফাঁদ তৈরি হয়েছে। তারা আরো বলেন, খালের সংযোগস্থলে চরপরে পানি প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় সেখানে খাল খনন না করে স্লুইসগেট নির্মান করায় পানি প্রবাহ হচ্ছে না। তারা জরুরি ভিত্তিতে এ স্লুইসগেটটি অপসারনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। কাসেমাবাদ গ্রামের কৃষক মোঃ হাবিব সরদার, মোজাম্মেল হোসেন, হাপানিয়া গ্রামের হারুন অর রশিদ, লেবুতলী গ্রামের মনিরুজ্জামান, গেরাকুল গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সাহানুর বেপারীসহ স্থানীয় কৃষকরা জানান, মোল্লারখাল সংযোগস্থল থেকে খালটি লেবুতলী গ্রাম হয়ে গেরাকুল, কাসেমাবাদ, হাপানিয়া গ্রামের মধ্যদিয়ে গৌরনদী-ধামুরা খালের সাথে যুক্ত হয়েছে।  তারা আরো জানান, এ খালের আওতায় থাকা লেবুতলী, গেরাকুল, কাসেমাবাদ, হরিসেনা, বেজহার, দিয়াশুর, হাপানিয়া, আশোকাঠী, জঙ্গলপট্টি ও শরিফাবাদ গ্রামের প্রায় ত্রিশ হাজার কৃষক এ খালে মেশিন বসিয়ে সেচ দিয়ে জমি চাষ করে আসছিল। কিন্তু সংযোগস্থলে স্লুইসগেট নির্মানের ফলে পানির যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। এ সুযোগে এসব গ্রামের কতিপয় প্রভাবশালীরা খালের বিভিন্ন অংশে বাঁধ দিয়ে যাতায়াতের জন্য ব্যক্তিগত সড়ক নির্মান করেন। ফলে খালটিতে পানি প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব গ্রামের প্রায় ত্রিশ হাজার কৃষকের চাষাবাদ ব্যহৃত হচ্ছে। কৃষকরা আরো জানান, ইরি-বোরো মৌসুমে অনেকাংশ জমি ধান চাষো অনুপযোগী হয়ে পরেছে। ফলে ওইসব গ্রামের সাধারন কৃষকদের এখন পথে বসার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারো কারো ভাষায় স্লুইসগেট ও বাঁধ এখন কৃষকদের মরন ফাঁদ তৈরি হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে ৩৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে স্লুইসগেট নির্মান না করে অনেক কম ব্যয়ে খাল খনন করা হলে কৃষকরা সবচেয়ে বেশী উপকৃত হতো। এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার মন্ডল বলেন, স্লুইসগেট এবং বাঁধের কারনে পানি চলাচল বন্ধ থাকায় ইরি-বোরো মৌসুমে চাষাবাদ ব্যহৃত হচ্ছে। তবে ত্রিশ হাজার নয় দশ হাজার কৃষক চাষাবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এলাকাবাসি ও কৃষকরা আবেদন করলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে। গৌরনদী এলজিইডি প্রকৌশলী আবুল মুনসুর মিয়া অপরিকল্পিত স্লুইসগেট নির্মান প্রসঙ্গে বলেন, স্লুইসগেটটি আমি আসার পূর্বেই নির্মিত হওয়ায় এ বিষয়ে আমি অবহিত নই। অপরিকল্পিত প্রসঙ্গে বলেন যদি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন তাহলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।