গৈলা ছোটমনি নিবাস : “ঈদের দিন মুই রাজিব ভাইয়ার কাছে যাইতে চাই”

তয় ঈদের দিন মুই রাজিব ভাইয়ার কাছে যাইতে চাই। রাজিব ভাইয়ায় মোরে খুব আদর করে” কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পরে মাত্র ৭ বছরের শিশু পুত্র সুমন।

সুমন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের “ছোটমনি নিবাসে”থাকে। নিজের পরিচয় ও ঈদের কথা তুলতেই সে বলে, মোর আব্বার নাম মিজান। হে ঢাকার শ্যামবাজারে কাঁচামালের (কচুর লতির) ব্যবসা করে। মোগো বাড়ি ফরাশগঞ্জ বড়বাড়ি। মোর মায় মইরা গ্যাছে। হ্যারে কবরে হোয়াইয়া (শুইয়ে) রাখছে। কথার ফাঁকে ফাঁকে শিশু সুমন শুধু বিলাপ করে বলে, মুই রাজিব ভাইয়ার ধারে যামু।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল লঞ্চ টার্মিনাল এলাকা থেকে শহরের রাজিব হাসান নামের এক যুবক গত ১০দিন পূর্বে শিশু সুমনকে উদ্ধার করে। তার কাছে তিনদিন রেখে সুমনকে গত এক সপ্তাহ পূর্বে গৈলা ছোটমনি নিবাসে রেখে গেছেন।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের “ছোটমনি নিবাস”-এ আশ্রিত ২৬ জন শিশুর বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাদের অনেকের বাবা-মা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। আবার অনেকের বাবা-মায়ের পরিচয়ই নেই। তাই বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করারও সুযোগ নেই তাদের।

গতকাল রবিবার আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ছোটমণি নিবাসে গিয়ে কথা হয় আশ্রিত শিশুদের সঙ্গে। শিশু পরিবারের সাকিব হোসেন (৯) বলে, “মোর বড় ইচ্ছা হয় কেউর বাড়িতে গিয়া হক্কলডির লাগে ঈদের আনন্দ করতে পারতাম কিন্তু কেউ মোরে বাড়িতে লইয়া যায় না। গত ঈদের দিন মুই ঘুমাইয়া কাডাইছি।  গৈলা ছোটমনি নিবাসে আশ্রয় নেয়া শিশুদের মধ্যে অধিকাংশরই বাবা নেই। কারো কারো মা ঝিয়ের কাজ করে। আবার অনেকেরই অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। ছোটমনি নিবাসের আশ্রিত ২৬ জনের অধিকাংশরাই তাদের বাবা-মায়ের পরিচয় জানে না।

ছোটমনি নিবাসের তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ঈদের দিন কেন্দ্রের এতিম শিশুদের অনেকেরই মন ভারি থাকে। কেউ চুপচাপ বসে থাকে। কেউ সারাটাদিন ঘুমিয়ে কাটায়। তাদের এ অবস্থা দেখে আমাদেরও মন খারাপ হয়ে যায়” তিনি আরো জানান, ছোটমনি নিবাসের আশ্রিত বেশির ভাগ শিশু কুড়িয়ে পাওয়া। আবার অনেক শিশুকে জন্মের পর রাস্তায় ফেলে দেয়া হলে পুলিশ তাকে কুড়িয়ে ছোটমণি নিবাসে রেখে যায়। সূত্রমতে, বরিশাল RAB-৮ এর সদস্যরা ৯ মাস পূর্বে পটুয়াখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩দিন বয়সের এক শিশু কন্যাকে পাচারকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করে ছোটমনি নিবাসে রেখে গেছেন। RAB সদস্যরা ওই শিশুটির নাম রেখেছেন ইরা।

আশ্রিত রুপা, রুবিনা, মিলনের বাবা নেই, মা আছে। তবে তারা কোথায় আছেন কেউ জানে না। পথশিশু হিসেবে পুলিশ তাদের উদ্ধার করে ছোটমনি নিবাসে রেখে গেছেন। ওদের বাবা-মায়ের পরিচয় না থাকায় ঈদের দিনে ওদের কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই তারা ছোটমনি নিবাসের কেন্দ্রের ভেতরেই ঈদের সময়টুকু অতিবাহিত করবে বলে জানায়।

ছোটমণি নিবাসের আয়া শাহিদা আক্তার বলেন-“এতিম শিশুদের ঈদের অনন্দ দিতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি কিন্তু মায়ের অভাব কি মাসি দিয়ে মেটে”। আয়া পাপরি বেগম বলেন, ঈদের দিনে আমরা সবাই ওদের (আশ্রিত শিশুদের) সঙ্গে সময় কাটাই। শিশুরা যাতে মন খারাপ করে বসে না থাকে, সে জন্য আমরা তাদের সব সময় আনন্দ দিয়ে রাখি।

আশ্রিত শিশু মিলন (৮) বলে, “বড়ই ইচ্ছা করে ঈদের দিন মাকে জড়িয়ে ধরে থাকব এবং আমার মা আমাকে খুব আদর করবে” গত বছর ঈদের দিন রাতে এ রকম চিন্তা করে ঘুমিয়ে পড়লে স্বপ্নে নাকি তার মাকে দেখেছিল। এতেই তার মনে অনেক সান্ত্বনা পেয়েছিল। রুপা (৭) ও রুবিনা (৬) বলে, “ঈদের দিন নতুন কাপড় পাই। ভালো খাবার খাই কিন্তু এত কিছুর পরও ঈদের দিন আমাদের খুব খারাপ লাগে। শুধু মা-বাবার কথা মনে পড়ে