সমুদ্র সফেন – আহমদ রাজু

হাতের কাছে থাকা ঘর কুড়ানো ঝাটা ছুড়ে মারতে মারতে কথাগুলো বলে রইজ উদ্দিন।

রইজ উদ্দিনের তাড়া খেয়ে মুরগীগুলো ছুটে পালায় দিক বিদিক। সে বারান্দা থেকে নেমে উঠানের একপাশে ছুটে যাওয়া ঝাটা কুড়িয়ে এনে হেলান দিয়ে রাখে ঘরের কোনে।

খুব বেশি ধান হয়না তার। ছয় কাঠা জমিতে যা হয় তাতে টেনেটুনে সর্বোচ্চ তিন মাস চলে। বাকী মাসগুলো পরের ক্ষেতে কাজ করে চলতে হয়। কুন্নীর কেনা গাভীর দুধ বিক্রি করে যে পয়সা হয় তা রেখে দিতে হয় জমির সার, মাটি, বীজ কেনার জন্যে। যতদিন দুধ হয় ততদিন তাকে চিতা করতে হয়না। আর পরের ক্ষেতে কাজ করা?  সেতো তিন মাস পরের চিতা।

এ বছর তার ভাগ্যে কি আছে তা ভাবলে কষ্টে ভরে ওঠে মন। বর্তমান সরকারের ব্যর্থতার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে জমানো টাকায় ফসল করতে পারবেনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত। দু’বছর আগে আলুর কেজি দশ থেকে বারো টাকার মধ্যে ছিল, বর্তমানে সেই আলু পঁচিশ থেকে ত্রিশ টাকা। শুধু আলু নয়, পেয়াজ রসুন থেকে শুরু করে সার কীটনাশকের দাম ঠিক আলুর মতো বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল বেগুনের দাম। যে বেগুন তিন থেকে চার টাকা কেজি কিনতে চায়না লোকে, সেই বেগুন আশি টাকা বিক্রি হয়েছে ঘুনীর বাজারে। কোথাও কোথাও একশ’ বিশ টাকা বিক্রি হয়েছে। রইজ উদ্দিনের বেগুনের প্রতি দুর্বলতা থাকলেও রোজার মাসে সে বেগুনের দাম পর্যত শুনতে পারেনি। যদি দাম শুনলে আবার বিশ টাকা গুনতে হয়!

খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় রইজ উদ্দিনকে। পাঁচ ছেলে-মেয়ের পিতা হয়েও এই বৃদ্ধ বয়সে নিজের পরিশ্রম করাকে সে নিয়তি বলে ধরে নিয়েছে। শুধু একটা বিষয় তাকে সব সময় পীড়া দেয়। তা হলো, কুন্নীকে সে আজো বিয়ে দিতে পারেনি। চার ছেলে এক মেয়ের মধ্যে কুন্নী সবার ছোট। ছেলেগুলো বিয়ে করে যার যার মতো আলাদা হয়েছে। রইজ উদ্দিন ছেলেদের প্রাপ্য জমি দিয়েই তাদের আলাদা করে দিয়েছে। তার ইচ্ছা ছিল, চার ছেলেকে বিয়ে দিয়ে সবাই একসঙ্গে বসবাস করবে। কোন দিন কোন ছেলেকে আলাদা হতে দেবেনা।

ও পাড়ার নন্দ মাষ্টারের পরিবার দেখে সেও তার মতো পরিবার গড়ার স্বপ্ন রচনা করেছিল মনের মন্দিরে। সে স্বপ্ন বেশিদূর এগুতে পারেনি। বড় ছেলে রমজানের বিয়ে দেবার ক’দিন পরেই ঘটে বিপত্তিটা। রমজানের বউ একদিন সরাসরি রইজ উদ্দিনকে বলে বসে, এত পাল পুরীর ভোগ আমি রানতি পারবো না।

রইজ উদ্দিনের স্ত্রী বরাবরই অসুস্খ। তাকে নিয়েও সারাক্ষণ চিতিত থাকতে হয়। অসুস্খ হলে কি হবে, রান্না থেকে শুরু করে সকল কাজে সে ছেলের বউকে সহযোগিতা করতো। অসুস্খ শাশুড়ীর সহযোগিতায় মন ভরেনি রমজানের স্ত্রীর। যার কারণে শ্বশুরের মুখের ওপর এমন একটা কথা সেদিন বলতে পেরেছিল।

একে একে চার ছেলেকে বিয়ে দিয়ে বউ ঘরে আনলেও সংসারে সুখ বলে যে জিনিসটা আসে তা আসেনি রইজ উদ্দিনের সংসারে। সব ছেলে বউয়ের চোখে মুখে যেন স্পষ্ট ফুটে ওঠে, শ্বশুর শাশুড়ী আর একমাত্র ননদ তাদের বোঝা হয়ে আছে। একথা তারা অনেকভাবে বোঝাতে চেষ্টা করেছে। কথায় কথায় কুন্নীকে তারা বলতো, আইবড় মেয়ে ভাইদের সংসারে বসে বসে খেতে লজ্জা করেনা, কোন সংসারে এমন মেয়ে নেই, থাকলেও তারা ঢাকায় যেয়ে গার্মেন্সে চাকরী করছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

শেষ পর্যত ছেলেদের আলাদা করে দিলেও কুন্নী বাপের সংসারে আর থাকেনি। একদিন কাউকে কিছু না বলে ঢাকায় চলে যায়। সেখানে এক গার্মেন্সে চাকরী নিয়ে রইজ উদ্দিনকে চিঠিতে জানায়, সে যেন কোন চিতা না করে, ঢাকায় সে ভাল আছে। বেতনও বেশ ভাল। ক’দিন পরে বাড়িতে কিছু টাকাও পাঠাতে পারবে। রইজ উদ্দিন মনে মনে বলে, আমার জন্যি তোর কুনো চিতা এরতি হবেনানে মা, তুই শুধু ভালো থাক।

সেই সকাল থেকে পাশের শিমুল গাছে হলুদ পাখিটা ডেকে চলেছে অবিরাম। কেন ডাকছে, কী হয়েছে তার কিছুই বুঝতে পারেনা রইজ উদ্দিন। পাখিটাকে প্রায় দেখা যায় শিমুল গাছের এডাল থেকে ওডালে উড়ে বেড়াতে। কখনও কোনদিন এভাবে তাকে ডাকতে দেখেনি সে। তবেকি কুন্নীর কিছু হয়েছে! অজানা শংকায় মন ভারাক্রাত হয়ে ওঠে রইজ উদ্দিনের।

অভাবের সংসার না হলে কি আর মেয়েটাকে সুদূর ঢাকায় গার্মেন্সে কাজ করতে হতো? আজ এই বৃদ্ধ বয়সে রইজ উদ্দিনকে মেয়ের জন্যে সারাক্ষণ উদ্রেগ আর উৎকণ্ঠায় কাটাতে হতো না। দেখতে দেখতে তিন বছর গত হয়েছে কুন্নী ঢাকায় গেছে। এই তিন বছরে একবার বাড়িতে এসে সপ্তাহ খানেক থেকে গিয়েছিল। যাবার সময় রইজ উদ্দিনের হাতে পনের হাজার টাকা দিয়ে বলেছিল, এই টাহা দিয়ে এট্টা দুধেলা গাই কিনবা। আর তুমি কুনো চিতা এরবানা। আমি ঢাহায় খুব ভালো আছি।

তোর আর ঢাহায় যাতি হবে না। এবার এট্টা ছুয়াল দেহে তোরে বিয়ে দেবো। মায়ে মানসির পরের ঘরে সময় মতো না গিলি চলবে ক্যামনে?

তুমারেতো কলাম, আমার যন্যি কুনো চিতা এরবা না। আমার সময় হলি জানাবানে।

আর না কস না মা। আর কয়দিন বাঁচবো ক। তোর মাতো এমনিতে কহন মরে তা কতি পারিনে। আমারও নিজির পতি বিশ্বাস নেই। তোর যদি এট্টা গতি এরে কবরে যাদি পারি তালি কবরে শুয়ে আমার আর চিতা এরতি হবেনানে।

তুমি আমার জন্যি খালি চিতা এরো। আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি ছুয়াল দেহো। সবকিছু ঠিক এরে আমারে মুবাইলি জানায়ানে।

মেয়ের এমন সম্মতিতে মুখে সেদিন হাসির রেখা ফুটে উঠেছিল রইজ উদ্দিনের।

ছেলেগুলোর গায়ের রং ফর্সা না হলেও মেয়েটার গায়ের রং ফর্সা হয়েছে এজন্যে সৃষ্টিকর্তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দেয় রইজ উদ্দিন। ছেলেগুলোর মতো যদি কালো হতো তাহলে কে তাকে বিয়ে করতো? তার ভরসা একটাই যে, কুন্নীর বিয়ে ঠিকই ভাল জায়গায় হবে। তার মেয়ের কপাল নিশ্চয় খারাপ না।

বিভিন্ন ঘটককে রইজ উদ্দিন বলে রেখেছে তার মেয়ের জন্যে যোগ্য ছেলের সন্ধান দিতে। আজ সকালে হোসেন ঘটক এসে জানায়, কোদলার আদু গাজী কুন্নীর ছবি দেখে তার ছেলের জন্যে পছন্দ করেছে। তার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে এখানে কথাবার্তা বলে ফাইনাল করা যায়।

রইজ উদ্দিন আদু গাজীকে ভালভাবে চেনে। তার ছেলেকে জামাই হিসেবে যদি পায় তাহলে সে নিশ্চিতে কবরে যেতে পারবে। আদু গাজীর ছেলের সাথে তার মেয়ের বিয়ে দিতে কোন আপত্তি নেই ঘটককে বললে খুশি মনে ঘটক চলে যায়। ঘটক চলে যাবার পরে রইজ উদ্দিন চিতা করে আজ বিকেলে বনগ্রাম হাটের মেহেরুন নেটওয়ার্ক থেকে মেয়ের কাছে মোবাইলে কথা বলতে হবে। তাকে বাড়িতে আসার জন্যে বলবে।

মেহেরুন নেটওয়ার্ক থেকে মাঝে মধ্যে মেয়ের কাছে ফোন করে রইজ উদ্দিন। কখনও কুন্নী সরাসরি ধরে, কখনও তার বান্ধবী জোবেদা। মোবাইলটা জোবেদার। কুন্নী আর জোবেদা এক গার্মেন্সে চাকরী করে। দু’জনের মধ্যে বেশ ভাব। থাকে এক মেসে। যেদিন কুন্নী বাড়িতে এসেছিল সেদিন জোবেদাকে তার সাথে নিয়ে এসেছিল। বেশ সহজ সরল মেয়েটা। ঠিক তার কুন্নীর মতো। সেদিন দু’জনকে নিজের মেয়ে বলে মনে হয়েছিল রইজ উদ্দিনের।

রইজ চাহা, আহো। মাইয়ার কাছে কল করবা নিশ্চুয়? বললো মেহেরুন নেটওয়ার্কের মালিক এ এইচ এম আর মন্টু।

হ রে বাপ। কতদ্দিন মাইয়াডার কুনো খোঁজ পাইনে। আর মনে হয় বেশি দিন তুমারে জ্বালাতি হবে নানে।

কেন চাহা, একতা কচ্চো ক্যান? বলল এ এইচ এম আর মন্টু।

মাইয়াডার বিয়ে ঠিক এরে ফেলিছি। ও বাড়িতি আসলি দিন তারিখ ঠিক এরবো।

জামাই কোনহানের? যা এরবা চাহা, অতত ভাল এরে দেহে শুনে মায়ে দিও। অত তাড়াহুড়ার কুনো দরকার নেই। কুন্নীতো আর দেখতি খারাপ না। তাছাড়া সে ঢাহায় চাহরী এরে। অহন চাহরীর কী মূল্য তা যে খোঁজতেছে সে জানে।

তুমার ও নিয়ে ভাবতি হবেনানে। কুন্নীর ওপর তুমাগের কুনো অধিকার নেই তাতো না। ফাইনাল যা এরি তুমাগের না জানায়ে কি এরতি পারবানে? পারবোনানে। হাজার হলি তুমার বাপের সাথে আমার এট্টা ভাল সম্পরকো ছিলো। তুমিতো তার-ই ছুয়াল।

তুমার কতা সব ঠিক আছে। কিন্তু আমি তা কচ্চিনে চাহা। কচ্চিযে কুন্নী চাহরী এরতেছে, এরুকনা। আর কয়দিন পরে দিলি পারতে?

নারে বাপ। আমার বয়স হয়ছে। কহন বাঁচি মরি কিছু কওয়া যায়না। আর তুমার ভাইগের অবস্খাতো জানো, আমি বাঁচে থাহা অবস্খায় যহন খবর নেনা, আর মরে গিলি আমার মায়েডার খোঁজ নেবে তাই কি বিশ্বাস এরতি হবে?

মুখের ওপর বার দুয়েক আঙ্গুল স্পর্শ করে জ্ঞানী মানুষের মতো মন্টু বলল, আমার ঠিক বুজি আহেনা চাহা। তুমার চার চারডে ছুয়াল। সুহি থাকতি হলি তুমি থাকপা। আর সেই তুমি এহন ছুয়ালগেরতে আলাদা থাহে বুড়ো বয়সে খাটতি খাটতি মরতিছো! আমরাতো ছয় ভাই; আমি বাদে সবাই বিয়ে এরেচে। অথচ দেহো আমাগের কারো সাথে কুনো দ্বন্দ্ব-বিবাদ নেই। বাপজানরে আমরা তো কুনো কাজ এরতি দিইনে। কাজ যা এরতি হয় আমরা ছয় ভাই এরি।

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রইজ উদ্দিন। আর বাপ, কপালে যা লিহা আছে তাইতো হবে। আমার কপালে আলস্না সুক লিহিনি। যদি সুক-ই লেখপে তালি ছুয়ালগুলোরে আলাদা এরে দিয়ে এই বুড়ো বয়সে তুমার কাকির ক্যান মরতি মরতি রান্দে খাতি হবে? ক্যান ছুয়ালগের বউগের হাতের রান্দা খাতি পারবো না? ক্যান মায়েডারে…। রইজ উদ্দিনের কথা শেষ না হতেই এ এইচ এম আর মন্টু বলে ওঠে, আর দুককু এরে কি হবে কও?

দুকখু আর কি। তুমি এটটু ধরাওদিনি। মায়েডা কিরাম আছে তা কিডা যানে। কদ্দিন হয়ে গ্যালো মায়েডার কোন খোঁজ নিতি পারিনি।

এ এইচ এম আর মন্টু মোবাইলের বোতাম টিপতে টিপতে বললো, এদিকি আহো চাহা। রিং হচ্চে। ন্যাও ধরো, কতা কও।

রইজ উদ্দিন চোখের পলকে মন্টুর হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে কানের কাছে ধরে বলে, আমি কুন্নীর বাপ কচ্চি, ঘুনীর বাজারেরতে। হ্যালো। আমি কুন্নীর বাপ। শুনতি পাচ্চো?

ওপাশ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে রইজ উদ্দিন মন্টুর হাতে মোবাইলটা দিয়ে বলল, দেহোদিনি ভাইপো কি অলো। কুনো সাড়াশব্দতো পালাম না।

সাড়াশব্দ পাবা কী এরে? নম্বরেতো ঢোকতেছে না। মনে হয় ওই মোবাইলডা বোন্দ।

বোন্দ থাকপে ক্যান? তুমি আর এট্টু চিষ্টা এরে দেহো দিনি। কও যে ঘুনীর বাজারেরতে কুন্নীর বাপ কতা কবে। আমার কতা শুনলি মুবাইল খাটাবেনে।

হেসে ওঠে মন্টু। তুমি যে কী কও চাহা পাগলের মতো। কারে কবো?

কেনো জোবেদারে কও আমার কতা।

জোবেদার মুবাইলতো বোন্দ।

ওইতো, আমার কতা কও। আমার কতা শুনলি খাটাবেনে।

তুমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে চাহা। মুবাইল বোন্দ থাকলি কোন কতাতো কওয়া যায়না।

মাথা চুলকাতে চুলকাতে রইজ উদ্দিন বলল, কি জানি বাপ; আমি কি আর এতসব বুঝি। আমি তালি বোসতিছি, এট্টু পরে আবার চিষ্টা এরে দেখলি হবেনে।

আচ্চা বসো তালি। আমি অন্য কাজ সারতি লাগি। বলল মেহেরুন নেটওয়ার্ক এর মালিক মন্টু।

তুমি কাজ সারো বাপ। আমি কুদোর দুকানের দিকি যাচ্চি। এট্টা চা খায়ে আসি।

রইজ উদ্দিন কুদোর দোকানে যেয়ে চা খায় চুক চুক শব্দে। সে শব্দ অনেকের কাছে স্বাভাবিক মনে হলেও কারো কারো কাছে বিরক্তিকর মনে হয়। খাবারের সময় শব্দ হয় সাধারণত পশুদের। মানুষদের যদি শব্দ হবে তাহলে পশু আর মানুষদের তফাত থাকে কোথায়? তাছাড়া আঠারো হাজার জীবের মধ্যে নাকি মানুষকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে সৃষ্টি করেছে সৃষ্টিকর্তা! যদি তাই হয় তাহলে মানুষদের আহারের সময় পশুদের মতো শব্দ হবে কেন? এমন জিজ্ঞাসা অনেকের মতো দোকানের কোনার চেয়ারে বসা তেইশ বছরের তরতাজা যুবক হাবিবুলস্নার। তার ধারণা মানুষের মধ্যে সৃষ্টির সেরা হবার কোন লক্ষণই নেই। বরং পশুদেরই সৃষ্টির সেরা করা উচিৎ ছিল। কারণ দুনিয়ায় এমন কোন অন্যায়-অধর্মের কাজ নেই যা মানুষ করেনা। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে সকল পশুই মানুষের চেয়ে উত্তম। তার ধারণা অন্য কোন জীব সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। নিশ্চই ধর্ম মানুষকে তার কাছে টানার জন্যে এমন একটা ভিত্তিহীন কথা প্রতিষ্ঠা করেছে সমাজে।

রইজ উদ্দিনের অক্ষর জ্ঞান ছিলনা মোটেও। বছর দুই আগে সরকারের স্বাক্ষরতা আন্দোলনে নিজেকে জড়িয়ে নিয়ে নিজের নাম স্বাক্ষর করাসহ সংবাদপত্র, চিঠি পড়া শিখেছিল। সেই থেকে পেপার পড়ার নেশায় প্রতিদিন যখনই সময় পায় তখনই ছুটে আসে ঘুনীর বাজারে পেপার পড়তে। যত্রতত্র দাগ পড়া চশমাটা চোখে দিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ে তারপর বাড়ি যায় সে। পেপার পড়ায় অনেকের ক্লাত বোধ হলেও রইজ উদ্দিনের কোন ক্লাতি নেই।

চা পানরত অবস্খায় টেবিলের উপর থাকা সংবাদপত্র হাতে তুলে নেয় সে। বিভিন্ন সংবাদ পড়তে পড়তে চোখ আটকে যায়, ‘‘আশুলিয়া ব্রিজের নিচে ক্ষত বিক্ষত গার্মেন্টস কর্মীর লাশ উদ্ধার” শিরোনামের সংবাদের দিকে।

সংবাদটি পড়া শেষ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রইজ উদ্দিন। মুখে তার অদৃশ্য কষ্টের ছাপ ফুটে ওঠে মুহূর্তে। সে কষ্ট কিসের এবং কেন তা পাশের টেবিলে বসা লোকগুলো বোঝার চেষ্টা করেনা। কাগজটা টেবিলের উপর ভাজ করে রেখে দোকানীর চায়ের দাম মিটিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হয় রইজ উদ্দিন। পেছন থেকে মেহেরুন নেটওয়ার্ক এর মালিক এ এইচ এম আর মন্টু ডাক দিলেও সেদিকে ভ্রক্ষেপ করেনা সে।