এবার ঘাতক বাস কেড়ে নিয়েছে : বাংলা কলেজের মেধাবী ছাত্রের প্রাণ

ঢাকার মিরপুর বাংলা কলেজের এম.কম প্রথমবর্ষের মেধাবী ছাত্র শ্যামল হালদার। শ্যামলের উদ্ধৃতি দিয়ে তার মা অঞ্জলি রানী কথাগুলো বলার সাথে সাথে  জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। চাঁদ রাতের দিন ঘাতক বাস কেড়ে নিয়েছে মেধাবী ছাত্র শ্যামল হালদারকে।


অবুঝ শিশুর মতো বিলাপ করে শ্যামলের দিনমজুর পিতা বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ধানডোবা গ্রামের হরলাল হালদার বলেন, মোর বাবায় আইজ হক্কলটিরে (সবাইকে) দেখতে যাওয়ার কতা ছিলো। ভগবানের কি খেলা, আইজ হক্কলটি মোর বাপরে দেখতে আইছে। ও ভগবান মুই কি পাপ করছিলাম যে মোর বাপরে এইভাবে কাইড়া নেলা। বিলাপ করে বুক চাপড়িয়ে কথাগুলো বলার সময় ওই এলাকার পুরো আকাশ বাতাস ভাড়ি হয়ে ওঠে।

হতদরিদ্র দিনমজুর হরলাল হালদারের আশা ছিলো তার পুত্র শ্যামল হালদারকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার। সে লক্ষে দিনভর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলের পড়াশুনার জন্য আপ্রান চেষ্ঠা চালিয়ে গেছেন তিনি। গৌরনদী উপজেলার ধানডোবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেনীতে, ধানডোবা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেনীতে বৃত্তিসহ এস.এস.সি ও পাশ্ববর্তী কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচ.এস.সি এবং বি.কম পরীক্ষা শ্যামল কৃতিত্বের সাথে উর্ত্তীন হন। উচ্চ শিক্ষার আশায় দিনমজুর হরলাল হালদার ধারদেনা করে ছেলেকে গত ৬ মাস পূর্বে এম.কম ক্লাশে ভর্তি করেন ঢাকার মিরপুর বাংলা কলেজে। ঘাতক বাস হতদরিদ্র একটি পরিবারের সকল আশা আখাঙ্কাকে এক নিমিষেই শেষ করে দিয়েছে। অকালেই কেড়ে নিয়েছে মেধাবী ছাত্র শ্যামল হালদারকে (২৭)। মমার্ন্তিক এ ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদ রাতের দিন ভোর রাতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার সাউদেরখালপাড় মোল্লাবাড়ি নামক স্থানে।

ঈদ উপলক্ষে কলেজ বন্ধ থাকায় পরিবারের লোকজনের সাথে দেখা করার জন্য ওইদিন বিকেলে মেধাবী ছাত্র শ্যামল হালদার ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বরিশালের বাস না পাওয়ায় শ্যামল মাদারীপুরের বাসে উঠে। সেখান থেকে অটো রিকসা যোগে বাড়ির উদেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে গৌরনদীর সাউদেরখালপাড় নামকস্থানে রাত তিনটার দিকে পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা যাত্রীবাহী মেঘনা পরিবহন অটো রিকসাটিকে চাপা দিয়ে ঘটনাস্থলেই শ্যামল হালদার নিহত হয় ও চালক মোফাজ্জেল হোসেন গুরুতর আহত হয়।

গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় নিহতর  পিতা হরলাল হালদার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ তার পরিবারবর্গদের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহতর আত্মীয়-স্বজনরা কোন অভিযোগ না করায় এখনো কোন মামলা হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।