বিয়ের পিড়িতে বসা হলোনা শিলার – কনে পক্ষের সাথে বখাটেদের সংঘর্ষে ১ জন নিহত ॥ ১৫ জন আহত ॥ বিয়ে অনুষ্ঠান ভন্ডুল

বখাটেদের বখাটেপনায় সকল আয়োজন ভন্ডুল হয়ে যায়। এক পর্যায়ে বিয়ের অনুষ্ঠান পন্ড করাকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় হামলা-পাল্টা হামলা ও সংঘর্ষে একজন নিহত ও মহিলাসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। এ সময় একটি বাড়ি ভাংচুরসহ লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে ও গতকাল শুক্রবার দুপুরে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রতপুর ইউনিয়নের বেলুহার গ্রামে।

বেলুহার গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আবু ছাদেক সরদার বলেন, আমার কন্যা কাসেমাবাদ কামিল মাদ্রাসার ফাজিল প্রথম বর্ষের ছাত্রী উম্মে কুলসুম শিলাকে (১৯) মাদ্রাসায় যাওয়া আসার পথে রতপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য জাকির সরদারের পুত্র আবু বক্কর (২২) বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে নানাভাবে উত্যক্ত করে আসছিলো। তার অব্যাহত উত্যক্তর কারনে শিলাকে মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ করে দেই। সম্প্রতি গাজীপুরের আফসার উদ্দিন শেখের পুত্র মামুন শেখের সাথে শিলার বিয়ে ঠিক হয়। সেমতে গতকাল শুক্রবার ৫০ জন বরযাত্রী আসার কথাছিলো । বাড়িতে বিয়ের সকল আয়োজন শেষ করা হয়। এ খবর পেয়ে বখাটে আবু বক্কর তার ৭/৮ জন সহযোগী নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধায় আমাদের বাড়িতে গিয়ে বিয়ে বন্ধের জন্য হুমকি দিয়ে আসে।

পরববর্তীতে ওইদিন রাত সাড়ে দশটার দিকে বখাটেরা ছাদেক সরদারের বাড়ির প্রবেশ পথে বেড়া দিয়ে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। বখাটেরা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেই ক্ষান্ত হয়নি। ওই প্রবেশ পথে সাউন্ড সিষ্টেম বাজিয়ে পিকনিকের আয়োজন করে। এতে বাঁধা দিলে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা এক পর্যায়ে বখাটেরা আমাকে মারধর করে। আমার ডাকচিৎকারে বাড়ির লোকজন এগিয়ে আসলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ নিয়ে উভয় গ্রপের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে ছাদেক সরদার (৫৫), আবু সালেহ সরদার (৬০), মাহফুজ সরদার (১৯), রুমা বেগম (২৮), লিমা আক্তার (২০), এনোয়ারা বেগম (৩৫), মুকুল বেগম (৪৫), নুরুজ্জামাল (৩০), রাসেদ (২৫), আরাফাত হোসেন (১৪), প্রতিপক্ষ আবু বক্কর (২০), হাফিজুর রহমান (১৮), আলী হোসেন (২২) ও  জাকির হোসেন (৪০) আহত হয়। আহতদের গভীর রাতে আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে আবু বক্করের পিতা জাকির হোসেনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল শুক্রবার দুপুরে জাকির হোসেন মারা যায়। মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছলে জাকির হোসেনের লোকজনে কনের পক্ষের আত্মীয় আবু তাহেরের ঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করে।

বর মামুন শেখ মোবাইল ফোনে এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা ৫৫জন বরযাত্রী নিয়ে রিজার্ভ বাসে গাজীপুর থেকে আগৈলঝাড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। পথিমধ্যে মাওয়া ফেরিঘাট পৌঁছলে মোবাইল ফোনে এ দুরসংবাদ পেয়ে আমরা কনে বাড়িতে না এসে গাজীপুরে ফিরে যাই।

অভিযোগ অস্বীকার করে আবু বক্কর বলেন, আমাদের ওপর প্রথমে শিলার আত্মীয়-স্বজনরা হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনার জেরধরে এ অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেছে।  ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আগৈলঝাড়া থানার এস.আই আক্তার হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে খবর পেয়ে একদল পুলিশ নিয়ে আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে উভয় পক্ষের আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এ ব্যাপারে এখনো কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আগৈলঝাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি অশোক কুমার নন্দির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জাকির হোসেন সরদার হত্যার ঘটনায় নিহতর সহদর খলিল সরদার বাদি হয়ে ১২ জনকে আসামি করে গতকাল শুক্রবার বিকেলে থানায় মামলা দায়ের করেছে।