বরিশাল আদালতে বিচারক সংকট : বিচারাধীন ২৮ হাজার মামলা

৫ বিচারককে দুটি করে আদালতের দায়িত্বপালন করার কারণে মামলা নিস্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রীতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মামলার বাদী ও বিবাদী পক্ষের লোকজনকে। আর একারণে প্রতিনিয়ত মামলার জট বেড়েই চলছে। অপরদিকে এজলাস সংকট থাকায় জেলা জজ ও চীফ জুডিশিয়াল আদালতের ২৮টি এজলাসের কার্যক্রম মাত্র ১৮টি এজলাসের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। প্রকারন্তরে একই এজলাসে দুটি আদালতের কর্যক্রম পরিচালনায় বিচারকে প্রতিনিয়ত বিড়াম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

২০০৭ সালের ১ নভেম্বর ৭ হাজার মামলা নিয়ে বরিশালে পৃথক বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু করাহয়। এসময় সল্প সংখ্যক বিচারক নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও পরবর্তীতে বিচারকের কিছু খালি পদ পূরণ করা হয়। তবে দীর্ঘদিনেও চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের ৪টি পদ এবং জেলা জজ আদালতের ৬টি বিচারকের পদ পুরণ হয়নি। ওই ১০ টি আদালতে বিচারকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন ৫জন বিচারক। বর্তমানে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের ১১ টি আদালত পরিচালিত হচ্ছে মাত্র ৭ টি এজলাসের মাধ্যমে। এ আদালতের অধীনে ১৪ হাজর ৮৭৪ টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এখানে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের ৪ করে বিচারকের পদ খালি রয়েছে।

অপরদিকে জেলা জজ’র আদালতের ১৩ হাজার ৪ শত ১৫ টি মামলা ১৭ টি আদালতে পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও এর কার্যক্রম মাত্র ১১ টি এজলাসের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এখানকার ৭ বিচারকের পদ অনেকদিন ধরে খালি রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত এবং জেলা জজ আদালতের ১০ টি বিচারকের পদ শুন্য থাকায় অতিরিক্ত দায়িত্বপালনকারী  বিচারকদের সুচারুভাবে মামলা পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মামলা যুক্ত হওয়ায় আদালতগুলোতে ক্রমেই মামলা জট বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিচারক সংকটের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিচারপ্রার্থী মামলার বাদী, বিবাদী গরীব ও সাধারণ মানুষের। এদিকে অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে রয়েছে এজলাস সংকট। জনবল সংকট তো নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। চীফ জুডিশিায়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত এবং জেলা জজ’র ২৮ আদালতের কর্যক্রম ১৮ টি এজলাসে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে এজলাস সংকট থাকায় ৫টি এজলাসে ২টি করে আদালত পরিচালনা করতে হচ্ছে।

চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জন্য পৃথক ভবন নির্মানের জন্য স্থান নির্ধারন সহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হলেও গণপূর্ত বিভাগ তা বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে। যে কারনে ১১ টি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পরিচালিত হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন ভবনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। এরমধ্যে ৩টি পরিচালিত হচ্ছে জেলাপ্রশাসকের কার্যালয় ভবনের মধ্যে। সবমিলিয়ে অবকাঠামোগত এসব সমস্যার কারনে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন আদালত সংশ্লিষ্ট সকল মানুষ।

বরিশাল জেলা আইনজী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইসমাঈল হোসেন নেগাবান ও সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনছুর আহমেদ জানান- বিচারক সংকট এবং অবকাঠামোগত এসব সমস্যার কারনে বরিশালের বিচারপ্রার্থী মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। একই কারনে বছরের পর ঝুলে আছে হাজার হাজার মামলা। অবিলম্বে তারা এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।


এসব সংকট সম্পর্কে কয়েকজন বিচারক জানান- মাননীয় প্রধান বিচারপতি বরিশাল আদালত পরিদর্শনকালে  বিচারকদেরর খালিপদ পুরণ ও অবকাঠামোগত সমস্যার কথা তার কাছে তুলে ধরেছেন বরিশাল আইনজীবী সমিতি।