কাদাপানি ঠেলেই দশ গ্রামের জনসাধারনের চলাচল

শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। স্বাধীনতার ৩৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানে আজো লাগেনি কোন উন্নয়নের ছোঁয়া। ওই গ্রামগুলোতে অধিকাংশই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস। গ্রামবাসী অভিযোগ করেন, হিন্দু সম্প্রাদায়ের লোকজনের বসবাস থাকায় সরকারের আর্থিক অনুদানের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। উপজেলা সদরসহ স্কুল-কলেজে আসার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বাটরা থেকে রাজিহারের কর্দমক্ত রাস্তাটি। বর্ষা মৌসুমে এ রাস্তার ওপর থাকে হাঁটু পানি। অনুন্নত ও যোগাযোগ ব্যবস্তার কারনে উপজেলা সদর থেকে যেন বিছিন্ন হয়ে পড়েছে ওইসব এলাকা। বর্ষা মৌসুমে বন্দি জীবন কাটাতে হয় ওইসব গ্রামবাসীদের। যোগাযোগ বিছিন্ন এলাকাটি হচ্ছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের প্রত্যন্ত রামানন্দেরআঁক, বাটরা, রামশীল, বাহাদুরপুর, আমবাড়ি, রাজিহার, বাশাইল, আহুতিবাটরা, কোদালধোয়া ও পশ্চিম রাজিহার গ্রাম।

কাদাপানি ঠেলেই দশ গ্রামের জনসাধারনের চলাচল

রামানন্দেরআঁক গ্রামের বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য ফটিক চন্দ্র বাড়ৈ জানান, উপজেলার রাজিহার আলোশিখা এনজিও থেকে রামানন্দেরআঁক গ্রামের মধ্য দিয়ে বাটরা গ্রাম পর্যন্ত চলে গেছে ৩ কিলোমিটারের কাঁচা রাস্তা। এ রাস্তাটি দীর্ঘদিনেও মেরামত না হওয়ায় জমির সাথে মিশে গেছে। বর্ষা মৌসুমে জনগুরুতপূর্ণ এ রাস্তার ওপর হাঁটু পরিমান পানি ও কাদা জমে থাকায় রাস্তাটি দিয়ে জনচলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়ে। কাদাপানি ঠেলেই প্রতিনিয়ত উপজেলা সদরে যাতায়াতের জন্য জনগুরুতপূর্ণ ওই রাস্তাটি দিয়ে ওইসব গ্রামের হাজার-হাজার জনসাধারন হেঁটে খুব কষ্টে যাতায়াত করছেন।

রামানন্দেরআঁক গ্রামের সমাজসেবক মনতোষ হালদার জানান, রাজিহার আলোশিখা থেকে বাটরা পর্যন্ত ৩ কিলোমিটারের এ রাস্তাটি বিগত এরশাদ সরকারের আমলে কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে মাটি কাটার কাজ করা হয়। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে (১৯৯৭ সালে) রাস্তাটির উন্নয়নের জন্য এলজিইডিতে হস্তান্তর করা হয়। সে সময় রাস্তাটি উন্নয়নের জন্য কাজ শুরু করা হলেও বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তিনি আরো জানান, জনচলাচলে রাস্তাটি সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়ায় অতিসম্প্রতি স্থানীয় রামানন্দের আঁক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন তহবিল থেকে ও স্থানীয় কতিপয় যুবকদের আর্থিক সহযোগীতায় রাস্তার কিছু কিছু স্থানে মাটি কাটার কাজ করা হয়। রাস্তাটি নির্মানের জন্য একাধিকবার স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোন সুফল হয়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

রামানন্দের আঁক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় হালদার, সঞ্জয় মন্ডল, সবুজ গাইন, উজ্জল হালদার, টুম্পা হালদার, লিজাসহ একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, বর্ষা মৌসুমে কাদাপানি ঠেলেই প্রতিনিয়ত তারা স্কুলে আসা যাওয়া করলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা বর্ষা মৌসুমে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে অকালে ঝরে পড়ছে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী। যাতায়াতের সমস্যার কারনে গ্রামের অধিকাংশ বিদ্যাপিঠগুলোতে শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না।

বাটরা গ্রামের রনজিত মিস্ত্রি জানান, তাদের গ্রামসহ উল্লেখিত গ্রামের কেউ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে উপজেলা হাসপাতালে আনতে গ্রামবাসীকে চরম ভোগান্তিতে পরতে হয়। তিনি আরো জানান, গ্রামগুলোতে প্রতিবছর ফসলের বাম্পার ফলন হওয়া সত্বেও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্তার কারনে তারা তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে চরম আর্থিক দৈন্যদশায় পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় তাদের। বিগত বেশ কয়েকটি সরকারের আমলে এখানকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা মাথায় রেখে রাস্তা নির্মাণের আশ্বাস দেয়া হলেও আজো তা বাস্তবায়িত হয়নি। বিশেষ করে সংসদ নির্বাচন, উপজেলা ও ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীরা রাস্তা নির্মানের জোরালো আশ্বাস দিলেও আজো তা বাস্তবে রূপ নেয়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এ ব্যাপারে রাজিহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি একাধিকবার উপজেলা সমন্ময় সভায় রাস্তাটি নির্মানের জন্য দাবি করে আসছিলাম। আগৈলঝাড়া উপজেলা প্রকৌশলী নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উক্ত ৩ কিলোমিটার রাস্তা নির্মানের জন্য এলজিইডি মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর পর এক কিলোমিটারের বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা খুবশীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে।