এদের হাতেও বন্দী জননী জন্মভূমি

স্বদেশি। কিন্তু কথায় বলে কয়লা ধুলেও ময়লা যায়না। ভাগ্যের সন্ধানে ওরা পাড়ি জমিয়েছিল সুদূর মার্কিন মুলুকে। দেশটার যাবতীয় সুবিধা ভোগ করে গড়ে নিয়েছিল নিজেদের ভাগ্য। আর এখানেই শুরু বিপত্তির। কেউ পেট্রোল পাম্প, কেউ গ্রোসারী, কেউবা আবার রেস্টুরেন্টের মালিক হয়ে মুখ দেখেছিল জীবন যুদ্ধের সফলতার। আমেরিকান ড্রীম, এমন একটা স্বপ্ন নিয়েই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে এ দেশে পাড়ি জমায় অভিবাসীদের কাফেলা। কেউ সফল হয় কেউবা আবার থমকে পরে জীবন যুদ্ধের পিচ্ছিল বাঁকে। পেশা ভিন্ন হলেও এক জায়গায় ওদের অবস্থান ছিল এক, আইন অমান্য আর অবৈধ পন্থায় অর্থোপার্জন। হয়ত ভুলে গিয়েছিল এটা বাংলাদেশ নয় যেখানে গায়ের জোর, গলার জোর, মামার জোর, দলীয় জোর আর নেত্রীর দোহাই দিয়ে পদ্ম পাতায় সিংহাসন বানানো যায়। একাধারে বিশ বছর ধরে চালিয়ে আসছিল এই অপকর্ম। এতদিনের প্রতিষ্ঠিত রাজত্ব এক লহমায় ধ্বসে যাবে হয়ত স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি। কিন্তু এমনটাই ঘটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন কাউন্টিতে বাসরত ২৩ জনের বেলায়।

এদের সবাই বাংলাদেশি। সুগঠিত এই চক্রের পালের গোদা মোহম্মদ দিনাজ খান এবং তার স্ত্রী জাহানারা খান। ওরা এমন সব অভিযোগে অভিযুক্ত যা এ দেশের আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ২০ বছর ধরে কর ফাঁকি দিয়ে আসছিল, যা নিবিড়ভাবে নজর রাখছিল দেশটার আভ্যন্তরিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এফবিআই। বছরের পর বছর ধরে ওরা বিক্রয় ট্যাক্স দিচ্ছিল না। অঙ্গরাজ্যে যে সকল আইটেম কর মুক্ত ওগুলোর বিক্রয় দেখিয়ে কর যুক্ত আইটেমকে অবিক্রীত তালিকায় ঠেলে দিত। রিটার্নের বেলায় লোকসান দেখিয়ে হাতিয়ে নিত লাখ লাখ ডলার। কর ফাঁকির এই নেটওয়ার্ক পরিচালিত হত তাদেরই তৈরী ভূয়া ১১৮ কোম্পানীর মাধ্যমে। তার মধ্যে ছিল কর উপদেষ্টা, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্সিং সহ বহুবিধ প্রতিষ্ঠান। এফবিআইয়ের রিপোর্ট মতে এসব কোম্পানীর কোনটারই না ছিল অফিস, ফোন আর ফ্যাক্সের মত বেসিক জিনিষ। বাংলায় একটা কথা আছে, সব ভাল যার শেষ ভাল। এই শেষটাই ভাল হয়নি সম্পদশালী বাংলাদেশিদের। যদিও দুজন ১০ হাজার ডলার বন্ড দিয়ে এখন বাইরে কিন্তু বাকিদের সবাই জেলে। উপভোগ করছে অর্জিত সম্পদ।

ফ্লোরিডায় যা হয়েছে তা মেগা শহর নিউ ইয়র্কের তুলনায় নস্যি মাত্র। দেশীয় রাজনীতির বড় বড় দলগুলোর আলিশান নেতাদের উলঙ্গ করলে যা প্রদর্শিত হবে তা হল ধাপ্পা, মিথ্যা আর ঠকবাজির মহাভারত। ইমিগ্রেশন আর ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ফ্রড বাজিতে বাংলাদেশিদের স্থান একসময় রাশানদের খুব কাছাকাছি ছিল। ৯/১১ অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। এসব কাজে অভিজ্ঞ হেডমাস্টার অনেক স্বদেশি এখন জেলের ঘানি টানছেন সগৌরবে।

মোহম্মদ আর আবদুল নামের ঠেলায় মুসলমানরা এ দেশে এমনিতেই উচ্ছিষ্ট, তার উপর দিনাজ খানদের এই কুকীর্তি জাতি হিসাবে আমাদের নৈতিক অবক্ষয়ের প্রমান্য দলিল হয়ে থাকবে। ইতিমধ্যে এ দলিল সগৌরবে শোভা পাচ্ছে এ দেশের পত্র পত্রিকায়।

সূত্রঃ


watchdog লেখক ওয়াচডগ