জোয়ারে ভেসে গেছে ৫০ কোটি টাকার মাছ

গেলে মাছগুলো। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া মাছগুলো রক্ষার কোন উপায় ছিল না। লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ পানিতে মিশে গিয়ে আমাকে সর্ব শান্ত করে দিয়ে গেছে। এ ভাবেই নিজের মৎস্য ঘেরের ক্ষতির কথা জানালেন  বরিশালের উজিরপুর উপজেলার উজিরপুর গ্রামের মৎস্য চাষী  আঃ হাকিম সিকদার (৫২)। এ কথা শুধু হাকিম সিকদারেরই নয় , একইভাবে জানালেন মৎস্য চাষী ভরসাকাঠী গ্রামের মোঃ নাসির উদ্দিন মোল্লা, কাজী শাহ গ্রামের মোঃ সোহেল (৪০) কালিহাতা গ্রামের মোঃ মোকলেচুর রহমানসহ অনেকেই।  গত৫ অক্টোবর সন্ধ্যা নদীর জোয়ারের পানিতে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার পুকুর , জলাশয় ও মৎস্য ঘেরের মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে যায়। এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মৎস্য চাষীরা জানান।

সরজমিনে গিয়ে গত মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) উজিরপুর উপজেলা মৎস্য অফিস , ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য চাষী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে,   গত ৫ অক্টোবর জোয়ারের সময় নন্ধ্যা নদীসহ নদ নদীর পানিতে  প্রবল বেগে প্লাবিত হয় উজিরপুরের বিভিন্ন গ্রামের মাছের ঘের, পুকুর ও জলাশয়। একের পর এক ভেসে যায় বিভিন্ন পুকুর ,জলাশয় ও ঘেরের মাছ। উজিরপুর উপজেলা মৎস্য অফিসের একটি  সূত্রে জানায়, বঙ্গবসাগরে সৃস্ট নিন্ম চাপ ও আমাবস্যার প্রভাবে জোয়ারের সময় সন্ধ্যা  নদীর পানি অস্বভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৮/১০ ফুট বেড়ে যায়। যে কারনে উজিরপুর উপজেলার বিভিন্ন নদ নদীর পানি বৃদ্বি পায়। এ ছাড়া  গত ৬ অক্টোবর থেকে টানা  ৪ দিন বৃষ্ঠি ও অস্বভাবিক জোয়ারের পানিতে উজিরপুর উপজেলার ১ হাজার ৯ শত ১৫ টি মৎস্য খামার মাছ ও ৮ হাজার  ৩ শত ৮৫ টি পুকুর  জলাশয়ের মাছ ও ৩ শতাধিক চিংড়ী ঘেরের ২ শত ৪০ একর চিংড়ী ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ঘের মালিক ও মৎস্য ব্যাবসায়ীরা ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা দাবি করেন। উপজেলা মৎস্য অফিসের প্রাথমিক ক্ষতি নিরূপনে এ ক্ষতি প্রায় ২৫ কোটি টাকা। স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান,প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনে মৎস্য বিভাগের প্রায় ২৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে তবে ইউনিয়ন ভিত্তিক ক্ষয় ক্ষতির হিসাব পেলে  ক্ষতি বাড়তে পারে । উজিরপুর গ্রামের  আঃ হাকিম সিকদার জানান,  তার দুটি চিংড়ী ঘেরের প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার মাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে যায়। । উপজেলা সদরের মৎস্য ঘেরের মালিক মোঃ মামুন সিকদার , মোঃ শামছুল হক, আঃ আজিজ জানান, উজিরপুর উপজেলার  অধিকাংশ মানুষ মাছ চাষের উপর নির্ভরশীল । মৎস্য চাষই তাদের প্রধান পেশা। ৫ অক্টোবর বঙ্গব সাগরে  সৃষ্ট নিন্ম চাপে নদ নদীর পানি বৃদ্বি পাওয়ায় এবং ৪ দিনের টানা প্রবল বর্ষনে এ উপজেলায় ৩ শত  চিংড়ী ঘের, ৩ হাজার পুকুর জলাশয়ের মাছ   জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে । শুধু চিংড়ী ঘেরের ক্ষতি প্রায় পাচ কোটি টাকা। স্থানীয়রা জানান, ভবানীপুর গ্রামের মৎস্য চাষী আঃ জলিল মল্লিক (৪২) বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋৃন নিয়ে তিনটি মৎস্য ঘের করেন। জোয়ারের পানিতে তার ঘেরের প্রায় ১৫ লক্ষাধিক টাকার মাছ ভেসে যেতে দেখে জাল দিয়ে মাছ রক্ষার চেস্টা করে ব্যার্থ হয়ে দুশ্চিন্তায় মৎস্য ঘেরে বসেই   হ্নদ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

মৎস্য চাষীরা জানান, এই ক্ষতি কিভাবে কাটিয়ে উঠবেন এই ভেবে ক্ষতিগ্রস্তরা  সবাাই চিন্তিত। মৎস্য চাষী মোঃ খালেদ খান , মোঃ হানিফ , মোঃ  নজরুল ইসলামসহ অসংখ্য পুকুরের মালিকরা জানান, জোয়ার ও প্রবল বর্ষনে পুকুরগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চারি দিকে জাল দিয়ে পুকুরের  মাছ রক্ষার চেস্টা করা হয়েছিল কিন্তুু  তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। মৎস্য চাষীরা বিনা সুদে ঋৃন পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। মৎস্য চাষীদের পূর্নবাসন সম্পর্কে জানতে চাইলে উজিরপুর উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ আবুর কালাম আজাদ বলেন , মৎস্য চাসীদের পাসাপাসি উপজেলা মৎস্য বিভাগও ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। মৎস্যজীবিদের মধ্যে  যে ঋৃন প্রদান করা হয়েছে তা আদায় ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্নবাসনের সুপারিশসহ ক্ষয় ক্ষতির বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।