ত্যাগ সেবা আর কর্মই যার ধর্ম ॥ সে হচ্ছেন আগৈলঝাড়ার কালাবউ

সংসারে অষ্টম শ্রেণী পাস করে আর পড়া লেখা হয়নি, বিয়ের পিড়িতে পা দিতে হয়েছে । আশির দশকে বরিশালের আগৈলঝাড়া থানার বাগধা ইউনিয়নের আস্কর গ্রামে আদ্ধেশ্বর অধিকারীর পুত্র নারায়ন অধিকারীর দ্বিতীয় বিয়ের স্ত্রী হয় রেনুকা । গায়ের রং কালো হওয়ায় বাড়ী ও পরশীরা কালা বউ নামেই ডাকে রেনুকাকে ।

বিয়ের পর দুই কন্যা সন্তানের জননী হলেও সংসারে স্বামী শতীনের মানসিক ও শারিরীক নির্যাতন সহ্য করতে হয় এই নারী কে মুখবুজে। এক পর্যায়ে দুই কন্যা সন্তান সহ স্বামীর ঘর ছাড়তে হয় কালাবউয়ের।  পিতা দরিদ্র ও দূরত্বে থাকায় আস্কর গ্রামেই ঝি এবং অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করে দুই মেয়ে নিয়ে কোন  রকম অর্ধাহারে অনাহারে দিন কেটে যেত কালা  বউয়ের ।

কালা বউয়ের ত্যাগ ও কর্ম দেখে গ্রামের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুধীর রঞ্জন অধিকারী, রাজ্জাক হাওলাদার, অমল অধিকারী সহ সচেতন মহল ১৯৯৬ সালে ইউপি নির্বাচনে বাগধা ইউনিয়নে সংরক্ষিত মহিলা আসনে প্রার্থী ঘোষনা করে কালাবউকে। একাধীক প্রতিদন্দী ডিঙ্গিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় কালাবউ। নির্বাচিত হয়ে এলাকার শিক্ষা সংস্কৃতি যোগাযোগ সহ উন্নয়ন কাজের ভুমিকায় সন্তুষ্ট এলাকাবাসী। সাবেক সফল চীফ হুইপ অবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে বাবা বলে ডাকেন কালাবউ এবং সন্তান স্নেহে তার নিকট থেকে সকল ধরণের সহযোগিতা পেয়ে আসছেন সার্বক্ষনিক। ২০০১ সালে জামাত জোট ক্ষমতা গ্রহণের পরই নেমে আসে কালাবউয়ের উপর আওয়ামীলীগ দল করার অপরাধে জোটের ক্যাডাররা হামলা নির্যাতন । পাষবিক নির্যাতনে ব্যর্থ হয়ে এসিড নিক্ষেপ করে শরীরের বিভিন্ন স্থান ঝলসে দেয় সন্ত্রাসীরা, যার ক্ষত আজও তার শরীরে স্বাক্ষ্য বহন করে। কালাবউ নির্যাতনের এ বর্ণনা আওয়ামীলীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করে খুলে বলেন। দ্বিতীয় দফায় ২০০১ সালে ইউপি নির্বাচনে পুনঃরায় বিপুল ভোটে কালাবউ নির্বাচিত হন। তবে জোট সরকার ক্ষমতায় থাকায়  প্রথমবারের মত উন্নয়ন কাজ করতে পারেনি তার উপর বৈষম্যতার কারণে ।

দীর্ঘ্য ১৫ বছর ইউপি সদস্য থেকে দরিদ্র অসহায় মানুষের সেবা করে গেলেও নিজের দূর্বল অর্থনীতি পরিবর্তন করতে পারেনি কালাবউ। স্বামীর বাড়ীতে ছোট একটি টিনের ঘর তৈরী করে  দিন যাপন করেন। বড় মেয়ে পুতুল ছোট মেয়ে সেতুকে মধ্য বিত্ত পরিবারে বিয়ে দিয়ে এখন শুধু সেবা মূলক কাজই যেন তার স্বস্তি।

দেবী মনসার এবং কালী মাতাকে সাধনা করে সর্প দংশিত রোগীদের দীর্ঘ্য দিন থেকে সুস্থ্য করছেন কালাবউ । নিজ এলাকা ও দূর থেকে প্রায়ই সর্প দংশিত রোগীদের আরগ্য দিতে কালাবউ ছুটে চলেন। এ পর্যন্ত ৩০৯৮ জন সর্প দংশিত রোগীকে চিকিৎসা করে এর মধ্যে মাত্র ২ জনার মৃত্যু ঘটে বাকী সকলেই আরোগ্য পেয়েছেন। কালাবউয়ের উচ্চাভিলাসী  চাহিদা নেই তিনি বলেন, আমাকে যেন আমার এলাকার দরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সঠিক বরাদ্দ দেন। ২০০১ সালের নির্যাতনের কাহিনী জানিয়ে বর্তমান সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশনে আবেদন করে কোন সু-ফল পায়নি কালাবউ। তার ইচ্ছে এলাকার সকল ধর্মবর্ণের মানুষের সাথে মিলে মিশে আমরণ সেবা মূলক কাজ করে যাওয়া ।