বিএনপির রাজনীতিতে টানাপোড়ন

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সেলিমা রহমান গত ৪ অক্টোবর ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহানকে আহ্বায়ক করে ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট গৌরনদী উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য মনিরুজ্জামান মনিরকে আহ্বায়ক করে গৌরনদী পৌর আহ্বায়ক কমিটি, আব্দুল লতিফ মোল্লাকে আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আগৈলঝাড়া উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষনা করা হয়। এ তিনটি আহ্বায়ক কমিটিতে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-প্রচার সম্পাদক ও জেলা সদর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকন কুদ্দুসুর রহমানের ২/৩ জন করে সমর্থক স্থান পেয়েছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্য ও গবেষনা সম্পাদকও সাবেক এমপি এম জহিরউদ্দিন স্বপনের কোন সমর্থককে ওই তিনটি আহ্বায়ক কমিটিতে রাখা হয়নি। তাই স্বপন সমর্থকরা সাংবাদিক সম্মেলন করে জেলা আহ্বায়ক কর্তৃক ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত নিয়ে পাল্টা কমিটি ঘোষনা করেছিল। অপর দিকে কুদ্দুস সমর্থকরা গৌরনদী উপজেলা আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান ও পৌর আহ্বায়ক মোঃ মনিরুজ্জামানকে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করে আন্দোলন করেছিল।

সেলিমা রহমানের স্বাক্ষরিত প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের বিএনপির পরাজিত প্রার্থী ও বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহানকে আহবায়ক ও আলহাজ্ব আবুল হোসেন মিয়া, শরীফ হাফিজুর রহমান টিপু, আ.ফ.ম রশিদ দুলাল, বদিউজ্জামান মিন্টু, মাষ্টার গোলাম হোসেন, আনোয়ার সাদাত তোতা, আকন ছিদ্দিকুর রহমান, মঞ্জুর হাসান মিলন, সেকান্দার আলী মৃধা, গাজী আবু বক্করকে যুগ্ন আহবায়ক করে ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট গৌরনদী উপজেলা এবং আশির দশকের কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা ও বরিশাল জেলা উত্তর বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক এস.এম মনির-উজ জামান মনিরকে আহবায়ক ও শাহ আলম ফকির, আলহাজ্ব শাহজাহান শরীফ, এইচ.এম আলমগীর হোসেন, সামচুল হক মাতুব্বরকে যুগ্ন আহবায়ক করে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট পৌর বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করা হয়। এরপর থেকেই তৃনমূল নেতাকর্মীদের মাঝে চরমে দেখা দেয় ক্ষোভ আর অশন্তোষ ।

তৃর্ণমূল নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে জেলা আহবায়ক কর্তৃক বরিশালের গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়ায় দলের তৃনমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখাদেয়। জেলা আহবায়কের এ সিদ্ধান্তের ফলে তিন ভাগ হয়ে গেল গৌরনদী বিএনপি বলে জানিয়েছেন দলের তৃনমূল নেতাকর্মীরা। অনুমোদিত কমিটির অধিকাংশ নেতাকর্মী ঢাকায় ব্যবসা বানিজ্য করায় এ এলাকায় বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকান্ড দুর্বল হওয়ার আশংকা করছে তারা। ঘোষিত কমিটিকে ড্রইংরুম কমিটি ও পকেট কমিটি আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন তৃনমূল নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলকে ঐক্যবদ্ধ করার ঘোষনা দিলেও বরিশাল সদর উত্তর জেলা আহ্বায়ক এখানকার বিএনপিকে তিন ভাগে বিভক্ত করলেন। যার একটি ভাগ হল ইঞ্জিনিয়ার সোবাহানের নেতৃত্বাধীন ঘোষিত কমিটি, সাবেক এমপি এম, জহিরউদ্দিন স্বপনের নেতৃত্বাধীন দলের একটি বিরাট অংশ ও কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমানের নেতৃত্বাধীন দলের অপর একটি অংশ। ঘোষিত কমিটিতে ইঞ্জিনিয়ার সোবাহান সমর্থকদের পাশাপাশি আকন কুদ্দুসের ২-৩ জন সমর্থক স্থান পেলেও স্বপন সমর্থকদের কাউকেই ওই কমিটিতে স্থান দেয়া হয়নি। তৃনমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঘোষিত কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ ও ওই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা ও বরিশাল সদর উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, সোবাহান ইঞ্জিনিয়ার আগৈলঝাড়ার বাশাইল গ্রামের বাসিন্দা, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ ইউনিয়নে তিনি সবচাইতে কম ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন এবং বর্তমানে সেখানে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা খুবই দুর্বল। গৌরনদী উপজেলা ও পৌরসভার মত গুরুত্বপূর্ন এলাকায় সোবাহান নেতৃত্ব দেয়ার মত যোগ্যতা রাখেন না। তিনি গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার ভোটারও নন। জেলা আহ্বায়ক কর্তৃক অনুমোদিত কমিটিটি গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার বিএনপিকে ধংস করার ষড়যন্ত্রের বহিঃ প্রকাশ। তিনি তৃনমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি ঘোষনার দাবি জানান এবং তার সাথে একই সুর তোলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য রফিকুল ইসলাম কাজল বলেন বেগম খালেদা জিয়া দলকে ঐক্যবদ্ধ ও সু সংগঠিত করার লক্ষে তৃনমূল নেতাকর্মীদের মতামতের আলোকে দলের সকল স্তরের কমিটি গঠনের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। গৌরনদী উপজেলার তৃনমূল নেতাকর্মীরা উপজেলা আহবায়ক কমিটি গঠনকল্পে তাদের প্রস্তাবনা বরিশাল সদর উত্তর জেলা আহবায়ক সেলিমা রহমানের কাছে জমা দিয়েছেন।

তিনি উক্ত প্রস্তাবনা গ্রহন করেন এবং তৃনমূল নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেন তাদের মতামতের আলোকে উপজেলা ও পৌর আহবায়ক কমিটি গঠন করা হবে। কিন্তু তৃর্ণমূলের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত উপেক্ষা করে ড্রইংরুম কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। তিনি তৃর্ণমূলের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি গঠনের দাবি জানান। একই দাবি করেন গৌরনদীর পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক শরীফ জহির সাজ্জাদ হান্নান, খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ ফজলুর রহমান, বার্থী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শরীফ শাহাবুব হাসান, নলচিড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ জামাল ফকির, সরিকল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর মৃধা, থানা যুবদলের সাধারন সম্পাদক সাঈয়েদুল আলম সেন্টু, সহ-সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান খোকন, সরদার ওয়াহিদ আল-মামুন লাভলু, পৌর যুবদলের সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর মোঃ জাকির হোসেন শরীফ, থানা ছাত্রদলের সভাপতি জাকির হোসেন রাজা, সাবেক সভাপতি মোঃ জাফর ইকবাল। তারা ঘোষিত কমিটি বাতিল করে তৃর্ণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্বিতে নতুন করে কমিটি গঠনের দাবি করেন। দলের তৃর্ণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল সদর উত্তর জেলা কমিটির আহবায়ক বেগম সেলিমা রহমান জানান, তৃর্ণমূল নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে দাখিল কৃত কমিটিটি বিতর্কিত ছিল তাই গৌরনদী বিএনপির শতাধিক নেতার মতামত নিয়ে ঘোষিত কমিটিকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।এরপর থেকেই গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলায় ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে উভয় এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ত্রিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছে। ঘোষিত কমিটি বাতিলের দাবিতে বিএনপির দুটি গ্রুপ মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। এদিকে বিদ্রোহী এক গ্রুপ পাল্টা কমিটি ঘোষনা করেছে। উপজেলার নির্যাতিত ও পোড় খাওয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ সকল তৃর্নমূল নেতাকর্মীর।

ঘোষিত কমিটির বিপক্ষের নেতাকর্মীরা বিএনপি অফিস দখল করে রাজপথে আন্দোলন করা অব্যাহত রেখেছে। কমিটিতে ২/৩ জনকে বিতর্কিত লোক থাকায় আহ্বায়ক কমিটি বাতিল করে পুনঃরায় কমিটি গঠনের দাবি জানান বিএনপির বহু নেতাকর্মীরা। দুই উপজেলার বিএনপির নেতাকর্মীরা ত্রিমুখী অবস্থানে রয়েছেন। তিন গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গৌরনদী উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে ঘোষিত কমিটির উদ্যোগে ইতিমধ্যে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করার কাজ শুরু হয়েছে। ইউনিয়ন কমিটিতে ইঞ্জিনিয়ারা সোবাহান সমর্থকদের নিয়ে গঠন করা অব্যাহত থাকলেও স্বপন ও কুদ্দুস সমর্থকদের না রাখার অভিযোগ করেন ঘোষিত কমিটির বিপক্ষের নেতারা। বিএনপির পোড় খাওয়া ও নির্যাতিত নেতকর্মীদের বাদ দিয়ে ইউনিয়ন কমিটি গঠনের কাজ বাদ দিয়ে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা জেলা আহ্বায়ক সেলিমা রহমানের কাছে জমা দেয়া তৃর্ণমূল সমর্থিত কমিটিকে তাদের পাল্টা কমিটি বলে ঘোষনা দিয়ে আলাদা অবস্থান নিয়েছেন। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ও পৌরসভার ৯ টি ওয়ার্ড কমিটির অধিকাংশ ডেলিগেটরা কয়েক দফা গৌরনদী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষনা দেন। সংবাদ সম্মেলনে দেয়া লিখিত বক্তব্যে পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক শরীফ জহির সাজ্জাত হান্নান বলেন, তৃর্ণমূল নেতাকর্মীদের মতামতকে উপেক্ষা করে যাকে গৌরনদী উপজেলার আহবায়ক করা হয়েছে তিনি গৌরনদী উপজেলার বাসিন্দা নন। গত সংসদ নির্বাচনে তার নিজের ইউনিয়নের বাসাইল গ্রামের ভোট কেন্দ্রে তিনি পেয়েছেন ৩০ ভাগ ভোট। আর প্রতিপক্ষ আওয়ামীলীগ পেয়েছে ৭০ভাগ ভোট। তিনি আগৈলঝাড়া-গৌরনদী এলাকার ভোটারও নন। পৌর আহবায়ক একজন জনবিচ্ছিন্ন লোক কেবল মাত্র কেন্দ্রের লবিংই তার একমাত্র সম্বল। তারা বিএনপির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওমীলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এই হটকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি করে তিনি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত তৃর্ণমূল নেতাকমীদের পক্ষে ঘোষিত কমিটি পত্যাখান করেন। তিনি আরও বলেন, দলের তৃর্ণমূল নেতা কর্মীদের মতামতকে উপেক্ষা করে গৌরনদী উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএনপির গঠন তন্ত্রকে অমান্য করে ওই কমিটি ৩টি গঠন করা হয়েছে । তিনি বলেন, বরিশাল জেলা আহবায়ক সেলিমা রহমান গৌরনদী উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি সম্পাদককে লিখিত পত্র পাঠিয়ে গৌরনদী উপজেলা ও পৌর আহবায়ক কমিটি গঠনের জন্য মতামত চেয়ে পাঠান।

তার পত্রের জবাবে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ২১ জন ডেলিগেটের মধ্যে ১৭ জন ডেলিগেট ও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ২৭ জন ডেলিগেটের মধ্যে ২১ জন ডেলিগেট সমর্থন দিয়ে গত ২০আগষ্ট উপজেলা ও পৌরসভার দুটি আহবায়ক কমিটি প্রস্তাব করে জেলা আহবায়কের ঢাকার বনানীর বাসায় গিয়ে হাতে হাতে জমা দেন। তখন জেলা আহ্বায়ক সেলিমা রহমান তার বাসায় হাজির হওয়া তৃর্ণমূল নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করেন তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই আহবায়ক কমিটি ঘোসনা করা হবে। তিনি দাবি করেন, তৃর্ণমূল নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে ড্রইংরুম কমিটি ঘোষনার মাধ্যমে দলের সাংগঠনিক সক্তিকে দুর্বল করা হল। ফলে যৌক্তিক কারনেই তারা গৌরনদী উপজেলা ও পৌর বিএনপির ঘোষিত কমিটিকে প্রত্যাক্ষান করছে। জেলা আহ্বায়কের কাছে তৃর্ণমূল নেতাকর্মীদের জমা দেয়া কমিটি তাদের দাবি করে তারা ওই কমিটির নেতৃত্বে আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দেন। তার সাথে একাত্ততা ঘোসনা করেন বিএনপি নেতা এস এ খালেক, ফজলুল রহমান, শরীফ শাহবুব হাসান, জামাল ফকির, শিকদার আবুল কালাম, পৌর কাউন্সিলর জাকির শরীফ, ফরিদ মিয়া, গোলাম মোর্শেদ পান্না, যুবদল নেতা আবুল কালাম আজাদ, মাসুদ হাসান, ছাত্রদল নেতা সরদার আব্দুল গফুর, জাফর খাঁনসহ দলের অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী। ইতিমধ্যে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে কয়েক দফা শো-ডাউন করছে গৌরনদী উপজেলা যুবদলের সভাপতি,ঘোষিত গৌরনদী উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক বদিউজ্জামান মিন্টু নিজেকে দলের ত্যাগী নেতা দাবি করে বলেন, সদ্য ঘোষিত উপজেলা কমিটির আহবায়ক জনবিচ্ছিন্ন নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান ও পৌর বিএনপির আহবায়ক জনবিচ্ছিন্ন নেতা এসএম মনিরকে বাদ দিয়ে এবং ঘোষিত আহবায়ক কমিটি বাতিল করে তৃর্ণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে গৌরনদীতে অবস্থানরত নেতাদের নিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠন করার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের প্রতি আহ্বান জানান।

গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলায় ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে উভয় এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ত্রিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছে। এদিকে বিদ্রোহী এক গ্রুপ পাল্টা কমিটি ঘোষনা করেছেন। পাল্টা পাল্টি কমিটি নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা চলছে। জানাগেছে, গত ১০ অক্টোবর আব্দুল লতিফ মোল্লাকে আহ্বায়ক করে ৩৪ সদস্য বিশিষ্ট আগৈলঝাড়া উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষনা করা হয়।

স্থানীয় বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীরা জনান, এ তিনটি আহ্বায়ক কমিটিতে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-প্রচার সম্পাদক ও জেলা সদর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকন কুদ্দুসুর রহমানের ২/৩ জন করে সমর্থক স্থান পেয়েছে। সাবেক এমপি এম জহিরউদ্দিন স্বপনের কোন সমর্থককে ওই তিনটি আহ্বায়ক কমিটিতে রাখা হয়নি। তাই স্বপন সমর্থকরা সাংবাদিক সম্মেলন করে জেলা আহ্বায়ক কর্তৃক ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করে তৃর্ণমূল নেতাকর্মীদের মতামত নিয়ে পাল্টা কমিটি ঘোষনা করেন। অপর দিকে কুদ্দুস সমর্থকরা গৌরনদী উপজেলা আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান ও পৌর আহ্বায়ক মোঃ মনিরুজ্জামানকে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করে ওই কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। কমিটিতে ২/৩ জন বিতর্কিত লোক থাকায় আহ্বায়ক কমিটি বাতিল করে পুনঃরায় কমিটি গঠনের দাবি জানান বিএনপির বহু নেতাকর্মীরা। ঘোষিত কমিটির নেতাকর্মীরা গৌরনদীতে বিএনপি নেতা আব্দুর রব ও আগৈলঝাড়ার গৈলায় বিএনপি নেতা আব্দুর লতিফ মোল্লার বাসায় বসে একাধিক ঘরোয়া সভা করেছেন। দুই উপজেলার বিএনপির নেতাকর্মীরা ত্রিমুখী অবস্থানে রয়েছেন। তিন গ্রুপের মধ্যেই উত্তেজনা বিরাজ করছে। গৌরনদী উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে ঘোষিত কমিটির উদ্যোগে ইতিমধ্যে ইউনিয়ন কমিটি ঘোষনা করা হয়। ইউনিয়ন কমিটিতে ইঞ্জিনিয়ার সোবাহান সমর্থকদের নিয়ে গঠন করা অব্যাহত থাকলেও স্বপন ও কুদ্দুস সমর্থকদের না রাখার অভিযোগ করেন ঘোষিত কমিটির বিপক্ষের নেতারা। বিএনপির পোড় খাওয়া ও নির্যাতিত নেতকর্মীদের বাদ দিয়ে ইউনিয়ন কমিটি গঠনের কাজ বাদ দিয়ে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গৌরনদীতে বিএনপির গ্রুপিং, তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের ক্ষোভ, অসন্তোষের অভিযোগের কারনে কেন্দ্রীয় বিএনপির মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন সম্প্রতি গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির পরাজিত প্রার্থী ও গৌরনদী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহানকে ভৎসনা করার কথা শুনে বুধবার ও বৃহস্পতিবার গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার কয়েকটি স্থানে সোবাহানের বিপক্ষের সমর্থকরা মিষ্টি বিতরন করেছেন।

বরিশালের গৌরনদী উপজেলা বিএনপি কমিটি গঠন নিয়ে বার বার বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন বরিশাল সদর উত্তর জেলা বিএনপির নেতারা। সমালোচনা ও বিতর্ক যেন কোন মতেই তাদের পিছু ছাড়ছেনা। কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে উপজেলা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ে। তারপরেও সামাল দিতে পারছেননা নেতারা। যদিও শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য বৃহৎ একটি দলে এ ধরনের সমস্যা থাকবেই। সময়মত সব ঠিক হয়ে যাবে। গৌরনদী উপজেলা ঘোষিত বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে। পাল্টা কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে। এখানকার বিএনপি দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পরেছে। বর্তমানে তা কেন্দ্র প্রর্যন্ত গড়িয়েছে। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মোঃ মনিরুজ্জামান মনিরের পর এবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু বকর গাজী। ব্যাংক লুটের ঘটনার সাথে জড়িত থাকার পরেও কিভাবে তিনি যুগ্ম আহ্বায়ক হলেন সেটা নিয়ে জেলায় শীর্ষ নেতারাও রীতিমত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর সোনালী ব্যাংক ঢাকার ধানমন্ডি শাখায় লুটের ঘটনায় জড়িত ছিলেন আবু বকর। এমনকি গোয়েন্দা পুলিশের এসি নাসির তাকে গ্রেফতার করে। ওই মামলার তিনি ৯ মাস কারা ভোগ করেছেন। এত কিছুর পরেও তিনি কিভাবে আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বেগম সেলিমা রহমান জানান, বিষয়টি আমি আগে জানতামনা । এ রকম কিছু হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। কারন কেন্দ্র থেকেই এ ধরনের নির্দেশনা রয়েছে। শীর্ষ নেতারা যদি কাউকে বিতর্কিত মনে করেন তা হলে বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন জেলার অনেক যুগ্ম আহ্বায়ক তৃণমুল নেতারাও। যুগ্ম আহ্বায়ক আকন কুদ্দুসুর রহমান জানান, জেল খাটা লোকদের কমিটিতে অন্তভূক্ত করায় ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মহাসচিব বরাবরে আবেদন করেছি। উত্তর জেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক বদিউজ্জামান মিন্টু বলেন, বিএনপির দুর্দিনে যারা দলকে সুসংগঠিত করেছে তারা আজ সদস্যও হতে পারছেন না। অথচ বসন্তের কোকিলরা আজ দলের নেতাদের কাছে প্রিয পাত্র হয়ে গেছে এমনকি সাজাপ্রাপ্ত আসামীরাও ত্যাগী ও বঞ্চিত নেতারা এটা কোনভাবেই মেনে নেবেনা। দলীয় একটি সূত্র জানায় দলের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে স্বৈরতান্ত্রিক পন্থায় ঘোষিত আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলের ২১জন ডেলিগেটের মধ্যে মাত্র ১জনের সমর্থন রয়েছে ঘোষিত কমিটির পক্ষে বাকি ২০জন ডেলিগেট ওই কমিটি মানছে না। দলের তৃর্ণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল সদর উত্তর জেলা কমিটির আহবায়ক বেগম সেলিমা রহমান জানান, তৃর্ণমূল নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে দাখিল কৃত কমিটিটি বিতর্কিত ছিল তাই বরিশাল সদর উত্তর জেলা কমিটির ও গৌরনদীর শতাধিক বিএনপির নেতাকর্মীর মতামত নিয়ে ঘোষিত কমিটিকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দলের বৃহত্তর স্বার্থে সবার এ আহবায়ক কমিটি মেনে নেয়া উচিত।

ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান জানান আমাদের দলের স্বার্থে দলের সিধ্যান্তই মেনে নিতে হবে। এখানে যারা আন্দোলন করছে তারা বিএনপির মূল ধারার কোন নেতাকর্মী নয়। তারা সংস্কার পন্থি, দলে কোন সংস্কার পন্থির জায়গা নেই এটা দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ। বিএনপির সাবেক কয়েকজন নেতা জানান মহাসচিব দেলোয়ার হোসেন কমিটি স্থগিত আদেশ দিয়ে যুগ্ম মহাসচিব সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক এম,এ মান্নানকে কমিটি পূর্ন বিবেচনা করে যাচাই বাছাই করে গৌরনদী উপজেলা কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ওই আদেশ তোয়াক্যা না করে যুগ্ন আহবায়ক এস,এম, মনির-উজ জামান মনির ২৬ অক্টোবার পৌর কমিটি ঘোষনা করেন। গৌরনদী উপজেলা বিএনপির কমিটি ঘোষনা হলেও তাতে কার্য নির্বাহীর মধ্যে নেই বিএনপির পুরোন পোর খাওয়া অনেক রাঘোব বোয়াল। গৌরনদীর বিশিষ্ঠ একটি মহল মনে করছে বিএনপির বর্তমান কমিটি ক্ষমতাসিন দলের কাছে নেহাত একটি খেলার পুতুলের মতই। বিএনপির সাথে রাজনৈতিক বোঝাপড়া করা নেহাত পাগলোমি। এব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষমতাসিন দলের এক নেতা জানায়, বিএনপির নেতাদের একটি বড় অংশ থাকে ঢাকায়, তারা রাজনিতির মাঠে কোন প্লেয়ারই না। আর এরকম একটি কমিটির উপজেলা সভাপতি গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় সংবর্ধনার নামে তৃর্নমূল নেতাকর্মীদেও হাতে লাঞ্চিত হয়ে ফিরে প্রমান করেছেন তাকে কিভাবে গৌরনদী আগৈলঝাড়ার বিএনপি নেতাকর্মীরা কতটুক গ্রহন করতে পেরেছে। এর মধ্যে অনিচ্ছাকৃত হলেও তারেই মধ্যে গত ২ফেব্রুয়ারী গৌরনদী উপজেলা বিএনপির ১০১ সদস্য বিশিষ্ট পুর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হয়েছে তাও অনেক গোপনীয়তা করে। এই গোপনীয়তার ব্যপারে ভালো কোন সদুত্তর জানেনা গৌরনদী উপজেলা বিএনপির তৃর্নমুল নেতাকর্মীরা। তাই তৃর্নমুল পর্যায়ে অপরিচিত রয়েগেছে উপজেলা বিএনপির নতুন ঘোষিত কমিটির অনেক মুখ।