মর্ডান যুগের বাদ্যযন্ত্রের ভীড়ে : হারিয়ে যাচ্ছে ঢাকের বাদ্য

ভীড়ে আজ হারিয়ে যাচ্ছে এককালের গ্রামবাংলার চিরপরিচিত ঢাক-ঢোল ও বাঁশির শব্দ। একসময় ঢাক-ঢোল আর বাঁশি ছাড়া কোন অনুষ্ঠানই জমতো না। হিন্দু সম্প্রদায়ের বারো মাসের প্রায় প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও বিয়ে বাড়িতে ঢাক-ঢোল আর বাঁশির শব্দ ও ঢুলীদের কোমর ঢোলানো নাচ ছিলো অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষন। কিন্তু কালের বির্বতনে মর্ডান যুগের ড্রাম ও কী-বোর্ডের ভীড়ে ঢাক-ঢোল আর বাঁশির শব্দ ও ঢুলীদের কোমর ঢোলানো নাচ আর এখন দেখা যায় না। তবে হিন্দু ধর্মের হাতেগোনা কয়েকটি অনুষ্ঠান ও বিয়ে বাড়িতে এখনো নামেমাত্র ঢাক-ঢোল আর বাঁশির পুরনো রেওয়াজ প্রর্দশনী স্বরূপ রাখা হয়। এ পেশায় নিয়োজিতদের কদর কমে যাওয়ায় অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে বিভিন্ন কাজে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন।

সম্প্রতি বরিশালের গৌরনদীতে হিন্দু ধর্মাবোলম্বীদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কথা হয় পূর্ব পুরুষের পেশা হিসেবে এখনো নিজেকে ধরে রাখা ঢুলী অরুন চন্দ্র ঋষির (৩২) সাথে। কালকিনি উপজেলার কানাইপুর গ্রামে তার বাড়ি। তার বাবা কান্দেব চন্দ্র ঋষির কাছে তিনি ১২ বছর বয়সে ঢোল বাজানো শিখেছেন। বংশ পরস্পরায় তার বাবা-দাদা ও তাদের পূর্ব পুরুষেরা এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি জানান, বাব-দাদার এ পেশাকে ধরে রাখতে তিনি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, কালকিনিসহ বিভিন্নস্থানের বিয়েবাড়ি, হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান (পূজা মন্ডবে), সিনেমার প্রচারনা ও নির্বাচনী প্রচারনায় তিনি ঢুলী হিসেবে কাজ করে থাকেন। তিনি আরো জানান, নরদের এ পেশায় থাকার কথা থাকলেও তারা ঋষি সম্প্রদায়ের হয়েও পূর্ব পুরুশের পেশাকে ধরে রাখতে এখনও নিরলশ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পূর্বে তাদের গ্রামের প্রায় ২০টি পরিবার এ পেশায় নিয়োজিত ছিলো। বর্তমানে মর্ডান যুগের বাদ্য যন্ত্র (ড্রাম, কী-বোর্ডের) ভীড়ে ঢুলী ও বাঁশিওয়ালাদের চাহিদা কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে ১৫টি পরিবার পেশা পরিবর্তন করেছে। অরুনের ঢোলের তালে যেকোন অনুষ্ঠানে আগত দশনার্থীদের নাচিয়ে তোলে। অরুনের মতে, আগে বারোমাসই তাদের অনুষ্ঠান লেগেই ছিলো। আয়ও হতো বেশ। বর্তমানে মর্ডান যুগের বাদ্যযন্ত্রের কারনে এখন প্রতিমাসে ২/৩ হাজার টাকা আয় করা তার জন্য দুঃসহ হয়ে উঠেছে।