পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার (জাহিদের) বৃদ্ধা মা জহুরা বেগম পুত্রের কথা ভেবে প্রায়ই সংজ্ঞাহীন হয়ে পরে। আর এখনো প্রায় গভীর রাতে চপল..চপল বলে চিৎকার দিয়ে কেঁদে ওঠেন। আজো তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না তার আদুরের ছোট ছেলে চপল আর কোনদিন ফিরে আসবে না।
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার চাঁত্রিশিরা গ্রামের মৃত কাসেম মিয়ার ৪ পুত্রের মধ্যে কর্ণেল বি.এম জাহিদ হোসেন চপল ছিলেন সবার ছোট। তাই তিনি (জাহিদ) ছিলেন পরিবারের সবার আদুরের। ১৯৮২ সালে কমিশনার পদে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। পিলখানা ট্রাজেডির মাত্র দু’মাস পূর্বে যশোর সেনানিবাস থেকে কর্নেল জাহিদ ময়মনসিংহ বিডিআর সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যোগদান করেন।
তার স্ত্রী নিশরাত হক ছন্দাসহ দু’পুত্র নিলয় ও নিরঝর থাকেন ঢাকার উত্তরার একটি ভাড়াটিয়া বাসায়। ঢাকার রাজউক হাইস্কুল এন্ড কলেজে নিলয় অষ্টম শ্রেনীতে ও লাইফ প্রি-প্যারেটরি স্কুলে নিরঝর দ্বিতীয় শ্রেণীতে অধ্যায়নরত।
শহীদ কর্ণেল জাহিদের ছোট বোন আফরোজা সুলতানা রানী বলেন, বিডিআরের বিদ্রোহী জওয়ানদের গুলিতে নিহত হওয়ার একদিন পর ঢাকার নবাবগঞ্জের ভেড়িবাঁধ এলাকা থেকে আমি প্রথম ভাইয়ার (জাহিদের) লাশ সনাক্ত করি। মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর পরিবারসহ দেশ-বিদেশের সবাই জানলেও দু’দিনেও আমাদের রোগাক্রান্ত মাকে জানানো হয়নি, বলেই কেঁদে ফেলেন আফরোজা।
শহীদ কর্ণেল বি.এম জাহিদ হোসেনের স্ত্রী নিশরাত হক ছন্দার সাথে গতকাল বুধবার কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পরেন তিনি। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, দেশকে আমি খুব ভালবাসি। আর ভালবাসি বলেই মনের টানে যারা দেশের জন্য একনিষ্ঠ ভাবে কাজ করবে সেই সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা বি.এম জাহিদ হোসেনকে আমি বিয়ে করেছিলাম। এইকি ভালবাসার প্রতিদান…বলেই আবারো কান্নায় ভেঙ্গে পরেন নুশরাত হক ছন্দা। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, আমার স্বামী ঘাতকদের হাতে নিহত হওয়ার পর অনেকেই অনেক কিছুর আশ্বাস দিয়েছিলেন কিন্তু গত এক বছরের মধ্যে কেহই আমাদের খোঁজ রাখেননি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শুধু পেনশনের টাকা পেয়েছি। দু’সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে এখন আমি রিতীমতো চিন্তিত।