এমপির হাতে পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী লাঞ্চিত

প্রকৌশলী শারিরিক লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা নিয়ে তুলকলাম কান্ড ঘটেছে। এ সময় নিজ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন সংসদ সদস্য সৈয়দ মনিরুল ইসলাম মনি। এমনকি ঘটনাস্থলে উপস্থিত যুবলীগের বিক্ষুব্দ নেতা-কর্মীরা এমপি মনির ওপর হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা চালিয়েছেন। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টায় বরিশালের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে এ তুলকালাম কান্ড ঘটেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ কোটি ৭১ লাখ টাকার ঠিকাদারী কাজ অবৈধভাবে ভাগিয়ে নিতে না পেরে বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ মনিরুল ইসলাম মনি ও তার দুই পুত্র নয়ন এবং সুমন নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর রশিদকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মারধর করেছে। সূত্রমতে, গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টায় নগরীর বাঁধ রোড এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হারুন-অর রশিদের কক্ষে সংসদ সদস্য মনি তার দু’পুত্রসহ তাদের সহযোগীরা প্রবেশ করেন। এ সময় তারা নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে গত ৮ ডিসেম্বর বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুরা নদীর ভাঙ্গন রোধে বাঁধ সংস্কারের দু’গ্র“পের  ১ কোটি ৭১ লাখ টাকার ঠিকাদারী কাজের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চায় এবং তার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে কার্যাদেশ দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ গ্রহনকৃত দরপত্র যাচাই বাছাই শেষে কার্যাদেশ দেয়া হবে বলে জানায়। এতে সংসদ সদস্য মনি ক্ষিপ্ত হয়ে তার (হারুন-অর রশিদের) ওপর চড়াও হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে শারিরিকিভাবে লাঞ্চিত করে। একপর্যায়ে হারুন-অর রশিদকে তার কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। তাৎক্ষনিক খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ আব্দুর রব মিয়া, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার ভানু লাল দাস ও এজাজ আহম্মেদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে গিয়ে এক সমঝোতা বৈঠক শেষে অবরুদ্ধ হারুন-অর-রশিদকে উদ্ধার করেন। সংসদ সদস্য মনি দলবলসহ কক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় বিক্ষুদ্ধ ঠিকাদার ও যুবলীগ কর্মীদের তোপের মুখে পরেন। একপর্যায়ে তারা এমপি মনিকে গালিগালাজ করে তার প্রাইভেট কার ভাংচুরের চেষ্টা চালায়। এ সময় পুলিশ ব্যারিকেট দিয়ে এমপি মনি ও তার লোকজনকে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ এমপি মনি কর্তৃক শারিরিক লাঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, তেমন কিছু হয়নি। ভুল বোঝাবোঝির সমাধান হয়ে গেছে। উপ-পুলিশ কমিশনার ভানু লাল দাস বলেন, শহীদ নামের এক ব্যক্তি নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে প্রবেশ করে এমপি মনি’র এক সহযোগীকে ধাক্কা দিলে উভয়ের মধ্যে ভুলবোঝাবুঝি হয়। পরে তারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেছেন। এ ঘটনায় কোন পক্ষ অভিযোগ দায়ের করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ মনিরুল ইসলাম মনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন-অর রশিদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চলমান বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকে যোগদান করতে গেলে বহিস্কৃত যুবলীগ ক্যাডাররা আমার ওপর হামলা চালানোসহ গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা করে। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।