সুশাসনের পালে বাতাস – ওয়াচডগ

সচেতনতা বৃদ্ধি এমআরটি’র গবেষণা কার্যক্রমের অন্যতম লক্ষ্য। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালের ১২ মাসে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধের পরিসংখ্যান নিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে দেশের প্রধান জাতীয় দৈনিকগুলোর সংবাদকে ভিত্তি ধরা হয়েছে।

একনজরে ১২ মাস

* মোট খুন ৩,২৯১ প্রতিদিন গড়ে ৯ জনেরও বেশি
* গুপ্ত হত্যা ২৯৪ (গত তিন মাসে)
* ধর্ষণের ঘটনা ৫১১টি
* রাজনৈতিক সংঘর্ষে নিহত ২৩৪, আহত ১৫,৮৮৬
* আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মৃত্যু ১৭০
* সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৪৮১, আহত ১৫৫৬৯
* সীমান্তে নিহত ১১৬ জন
* সাংবাদিক নিহত ৪, নির্যাতনের শিকার ২০৬ জন
* চুরি-ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ২২৬২টি, নিহত ২৮০ জন
* আত্মহত্যা ৩৫৯ জন (আট মাসে)

খুন:
২০১০ সালে মোট খুন হয়েছে ৩২৯১টি। প্রতিদিন গড়ে খুন হয়েছে ৯ জনেরও বেশি। এর মধ্যে গত মার্চ মাসে রাজধানীতে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় মেয়ের প্রেমিকের হাতে স্বামী-স্ত্রী নিহত হওয়ার ঘটনা এবং এপ্রিল মাসে রাজধানীতে পুলিশ কর্মকর্তা গৌতম কুমার রায় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়ার খবরটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। এপ্রিল মাসে রাজধানীতে পুলিশ কর্মকর্তা গৌতম কুমার রায় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই ১৪ দিনের মাথায় মে মাসের ৪ তারিখে এসআই মিজানকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করার ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতির বহি:প্রকাশ। এছাড়া মে মাসইে কুমিল্লায় আব্দুর রশীদ (৭০) নামের এক বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাকে মাত্র ১৬০ টাকার জন্য হত্যা করা হয়।
তাছাড়া ২৪ জুন ঢাকার মোহাম্মদপুরে পরকীয়ায় মায়ের অনৈতিক কাজ দেখে ফেলায় মা আয়েশা ও তার প্রেমিক আরিফ একসঙ্গে নৃশংসভাবে হত্যা করে স্কুল ছাত্র ৬ বছরের শিশু সামিউলকে।
৭ জুন পুরান ঢাকায় হোটেল কর্মচারী রুবেলকে তার বন্ধুরা ঠাণ্ডা মাথায় গলা কেটে হত্যা করে কাটা মাথা নিয়ে মিম হোটেলের মালিকের নিকট থেকে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করে।
৪ আগস্ট রাজধানীর আদাবরে মায়ের প্রেমিক রেজাউল করিমের হাতে নির্মমভাবে খুন হয় শিশু জেনিফার ইসলাম তানহা। পাষণ্ড রেজাউল করিম তানহাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর ভবনের কার্নিশের নিচে লুকিয়ে রাখে।
৬ আগস্ট ঝালকাঠির রাজাপুর গ্রামের জনৈক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে ছেলের গৃহশিক্ষকের পরকীয়ার জের ধরে শিশু জুম্মান হোসেন মুইন (৯) খুন হয়।
৪ আগস্ট কিশোরগঞ্জের তাড়াইলের পূর্ব জাওয়ার গ্রামে নেশার টাকা না পেয়ে মাদকাসক্ত হারেছ (৩১) তার বৃদ্ধ পিতা বুলবুল মিয়াকে (৮০) দা দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে হত্যা করে।
৩ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে তাসলিমা (২৮) নামে এক গৃহবধুকে কন্যা সন্তান ধারণ করার জন্য হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে, তাসলিমা আট মাসের অন্তঃসত্বা ছিলেন। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে কন্যা সন্তান হওয়ার কথা জানতে পেরে তাসলিমার স্বামী মো: সোহেল ও তার পরিবারের সদস্যরা তাসলিমাকে নির্যাতন করে হত্যা করে।
২ নভেম্বর গাজীপুরে এক পাষণ্ড পিতা ১১ মাসের শিশুপুত্র রিয়াজকে হাত-পা, মাথা ছিড়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে গ্রেফতারকৃত পিতা তৌহিদুল জানান, রিয়াজ জন্মের পর থেকেই অসুস্থ থাকত। সব সময় কান্না করত। টাকার অভাবে তিনি রিয়াজের চিকিৎসা করাতে পারতেন না। রোববার চিকিৎসা করানোর কথা বলে ছেলেকে বাড়ির পাশের একটি গজারি বনের ভেতরে নিয়ে প্রথমে নাক-মুখ চেপে ধরে হত্যা করেন। এরপর তার দেহ থেকে হাত-পা ও মাথা টেনে ছিঁড়ে আলাদা করা হয়। পরে লাশের টুকরোগুলো ওই বনের ভেতরে একটি ডোবার মধ্যে ফেলে দেন।
১১ নভেম্বর মানিকগঞ্জে মিনু বেগমকে যৌতুকের কারণে স্বামীগৃহে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
১৫ নভেম্বর চৌদ্দগ্রামে ইভটিজারদের হাত থেকে পুত্রবধূর ইজ্জত বাঁচাতে গেলে বখাটেদের হত্যা করে মোসলেম মিয়াকে।
১৭ নভেম্বর ঈদুল আযহার দিন বিকালে কুড়িগ্রামে নাতনিকে ইভটিজিং করার প্রতিবাদ করতে গেলে বখাটেরা গলা টিপে হত্যা করে বৃদ্ধ নানা আব্দুস সুবহানকে ।
৩০ নভেম্বর চাঁদপুরের মতলবে ইভটিজারদের হাতে খুন হয় মেয়ের বাবা মনির হোসেন সরকার।
৫ ডিসেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গায় রেখা বেগম নামে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পাষণ্ড স্বামী আব্দুল আলী শিকদার।
১১ ডিসেম্বর মিরপুরে স্কুল শিক্ষিকা আকলিমা আক্তার রুবিকে (২৭) পূর্ব পরিচিত এক যুবক নির্মমভাবে হত্যা করে।
১৩ ডিসেম্বর ধামরাইয়ে প্রশিকা কর্মী সুপ্রিয়া রায়কে (২৭) স্বামী আশিক রায় (৩২) পিটিয়ে হত্যা করে।
১৩ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার কলারোয়ায় স্ত্রীর পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় স্বামী নূর মোহাম্মদকে (৪২) রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করে স্ত্রী শাফলা বেগম।
১৪ ডিসেম্বর হরিণাকুণ্ডে বিয়েতে অমত হওয়ায় হাজেরা খাতুনকে (২০) প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে তার ভাই।
১৭ ডিসেম্বর ডামুড্যা উপজেলার চরমালতাঁও গ্রামের সুমন সরদার (২৫) তার স্ত্রী আইরিন আক্তারকে (১৮) হত্যা করে কচুরিপানার নিচে চাপা দেওয়ার সময় ধরা পড়ে।
১৮ ডিসেম্বর গাংনি উপজেলার আকুবপুর গ্রামে অন্তঃসত্ত্বা মুক্তানুরকে পিটিয়ে হত্যা করে স্বামী আব্দুর রশীদ।
১৮ ডিসেম্বর তানোরে সৎ পুত্রের সাথে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগে গ্রাম্য সালিশে বেত্রাঘাতে আহত মেহেরজান মারা যান।
২৪ ডিসেম্বর গাজীপুরের কালিগঞ্জে জুয়া খেলার টাকা চাওয়ায় স্বামী বিল্লাল হোসেনকে (৫৫) হত্যা করে স্ত্রী হালিমা বেগম (৪৫)।
২৯ ডিসেম্বর তাঁতীবাজারে স্বর্ণব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে সস্ত্রাসীরা।

উল্লেখ্য, বছরের প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও খুনের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়- চাঁদাবাজি, এলাকায় প্রভাব বিস্তার, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ, যৌতুক ও প্রেমঘটিত কারণে এসব খুনের ঘটনা ঘটেছে।

গুপ্তহত্যা
বেড়েই চলেছে গুপ্তহত্যা। গত তিন মাসে দেশে ২৯৪টি গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ডিসেম্বর মাসে দেশে গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১০৫টি। অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে গুপ্তহত্যার ঘটনা ঘটেছে যথাক্রমে ৯৩ ও ৯৬টি।
২ ডিসেম্বর রাজবাড়ীতে হাউলি জয়পুর এলাকার রেললাইনের পাশে মসুর ক্ষেতের ভেতর মাটি চাপা দেয়া ২৫-২৬ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে সদর থানা পুলিশ।
৯ ডিসেম্বর সিলেটে নিজ বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় অজ্ঞাত হত্যার শিকার মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারার লাশ।
১৫ ডিসেম্বর ফকিরাপুলের একটি আবাসিক হোটেল থেকে রুমা আক্তার (৩৬) নামে এক মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়।
৩১ ডিসেম্বর অপহরণের ১০ দিন পর উদ্ধার করা হয় রমনা থানা কমপ্লেক্স জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা ইসহাকের লাশ।

আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে মৃত্যু
২০১০ সালে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মৃত্যু হয়েছে ১৭০ জনের। এর মধ্যে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধেই বেশিরভাগ নিহত হয়েছে।
২ মে রোববার রাতে বরিশাল শহরের কাউনিয়া টেক্সটাইল এলাকায় র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় আসাদুল হক ওরফে শাহীন।
৩ মে সোমবার রাতে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কলাবাড়িয়া গ্রামে পুলিশের ক্রসফায়ারে আলিম বিশ্বাস (৩৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়।
৪ মে মঙ্গলবার মধ্যরাতে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে পুলিশের ক্রসফায়ারে কাদের নামে একজন নিহত হয়।
৯ মে কাশিমবাজার কারা হেফাজতে আক্তার হোসেন নামে এক কয়েদীর মৃত্যু ঘটে।
১০ মে সোমবার চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানা হেফাজতে মো. মানিক (৩২) নামে এ নৈশপ্রহরী মারা যায়।
১১ মে মঙ্গলবার রাত ৩ টা থেকে ৫ টার মধ্যে তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যু হয় ৪ জনের। এসময় নগরীর সূত্রাপুরে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে আলাউদ্দিন (২৫) ও সুমন (২৭), পল্লবীতে ডিবি পুলিশের ক্রসফায়ারে রাহাত (২৫) এবং কুষ্টিয়ায় মিলন ফকির ওরফে জীবন প্রাণ হারায়।
১৩ মে বৃহস্পতিবার চাটখিল থানা পুলিশের নির্যাতনে গুরুতর আহত রবিউল ইসলাম খোকন ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যায়।
১৪ মে রাতে কুষ্টিয়ার মিরপুরে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় সাইদুল হক (৩০) নামে একজন।
১৫ মে শনিবার ভোরে পাবনার আতাইকুলা থানার ফলিয়া গ্রামে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় আবদুল মালেক এবং একই দিন বরিশালের বাবুগঞ্জে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় জগ-দ্বীশ শীল নামে একজন।
১৮ মে চুয়াডাঙ্গার নেহালপুর গ্রামে আসাদুল নামে এক ব্যক্তি পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত হয়। একই দিন দুই মাস পূর্বে অপহৃত হওয়া বিডিআর হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া সিপাহী নজরুলের লাশ উদ্ধার করা হয় বাগেরহাটের শরনখোলার বলেশ্বর নদী থেকে।
২৩ মে রোববার রাতে চট্টগ্রামে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে ছিন্নমূল মানুষের নেতা আক্কাছ এবং কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে সিদ্দিক ও সাইদুল নিহত হয়।
২৫ মে সকালে র‌্যাবের হেফাজতে থাকা ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদের লাশ পাওয়া যায় জাতীয় হৃদরোগ ইনষ্টিটিউটে।
৩০ মে মিরপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় একজন।
পুলিশ হেফাজতে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় অভিযুক্ত ডিএডি আবদুর রহিমের মৃত্যুর ঘটনা অন্যতম।
তাছাড়া ঘুষের টাকা না দেয়ায় ঢাকার দারুসসালামে পরিবহণ শ্রমিক মজিবুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। নিহতের ছোট ভাই মোহাম্মদ রিপন অভিযোগ করেন, ১ জুলাই দুপুরে মজিবুর রহমান তার আট বছরের ছেলে ইকবালকে নিয়ে কাউন্দিয়া মোল−ারটেক শশুর বাড়িতে যান। সন্ধ্যায় তিনি বাসায় ফেরার সময় দারুস সালাম থানার এসআই হেকমত আলী, এসআই সায়েম, এসআই মাসুদ ও পুলিশ সোর্স মহিবুল ও কাজল মিলে শিশু সন্তান ইকবালের সামনে তাকে আটক করে। ওই সময় পুলিশ তার কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস¡ীকৃতি জানালে পুলিশ ও সোর্সরা মিলে রাইফেলের বাঁট দিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ তুরাগ নদীতে ফেলে দেয়। রাতে মজিবুর বাসায় না এলে পরিবারের সদস্যরা থানাসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পায়নি। পরের দিন সকালে লোকজন বেড়িবাঁধে তার লাশ দেখে বাসায় খবর দেয়।
নিহতের ভাই আরো বলেন, ঘটনার আগের সপ্তাহেও পুলিশ তাকে একবার গ্রেপ্তার করেছিল। ওই সময় ৭ হাজার টাকার বিনিময়ে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। অন্য দিকে নিহত মজিবুরের ছেলে ইকবাল জানায়, ১ জুলাই বিকালে ফুটবল কিনে দেয়ার কথা তার বাবা তাকে নিয়ে নদীর ওপারে মোল−ারটেক এলাকায় নিয়ে যায়। মেলায় ঘুরে সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরছিল তারা। এ সময় ৬ জন পুলিশ তার বাবাকে জাপটে ধরলে তিনি নদীতে লাফ দেন। তখন পুলিশ ও দু’জন সোর্সও নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পানির মধ্যেই বেধড়ক পেটাতে থাকে। পরে নদীর পাড়ে তুলে দ্বিতীয় দফায় তারা বন্দুকের বাঁট দিয়ে পেটায়। তার বাবার দেহ নিস্তেজ হয়ে গেলে নদীতে ফেলে দেয়।
এ ধরনের ঘটনা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থাহীনতা কয়েক ধাপ বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা হচ্ছে।
৩০ আগস্ট হবিগঞ্জের কৃষক নুরুল ইসলাম জেবুকে ডিবি পুলিশ গুলি করে হত্যা করে।
৩০ সেপ্টেম্বর খুলনায় আ’লীগ নেতা ফজলুর রহমান মহব্বত র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়।
২ নভেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুরে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে মারা যায় শমসের মোমিন শিমুল।
৬ নভেম্বর খুলনায় পুলিশের গুলিতে মারা যায় মতিলাল সরকার।
১২ নভেম্বর সাভারে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে মারা যায় হাসান ও মনির নামে দুই যুবক।
১৪ নভেম্বর নারায়নগঞ্জে র‌্যাবেকর ক্রসফায়ারে নিহত হয় ফজলুল হক। একই দিন নরসিংদীতে পুলিশ হেফাজতে শরীফ মিয়া নিহত হয়।
২০ নভেম্বর যশোরে পুলিশ হেফাজতে নিহত হয় ইমরান হোসেন বাপ্পী।
২৩ নভেম্বর সাভারের গোকুলনগরে র‌্যাবের হাতে নিহত হয় এক যুবক।
২৪ নভেম্বর ঝিনাইদহ ও হবিগঞ্জে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় যথাক্রমে আব্দুল কুদ্দুস ও হাকিম।
২৫ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় পুলিশ হেফাজতে নিহত হয় নান্টু কসাই। একই দিনে মোহাম্মদপুরে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় আমির হোসেন।
২৯ নভেম্বর রাজধানীর বংশালে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে মারা যায় শামসুল ইসলাম টিপু।
৩০ নভেম্বর নরসিংদীতে পুলিশ হেফাজতে মারা যায় সিরাজ মিয়া।
১ ডিসেম্বর অভাবী শিশু সাগরের (১৫) পরিবারে কাছে দাবীকৃত চাঁদা না পেয়ে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই ইসমাইলের অমানবিক নির্যাতনে সাগর নিহত হয় বলে দাবি তার মা লুৎফার।
৩ ডিসেম্বর মাত্র ১ ঘণ্টার মধ্যে র‌্যাবের তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে তথা ক্রসফায়ারে মালিবাগ মেহেরপুর ও বরিশালে নিহত হয় যথাক্রমে নাজিমুদ্দিন, দুর্জয় বাবু ও আল আমিন।
১২ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ৪ শ্রমিক।
১৩ ডিসেম্বর রাজধানীর কাফরুলে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় শহিদুল ইসলাম। একই দিন বি-বাড়িয়ায় কারাগারে নির্যাতনে মারা যান আব্দুর রহিম নামে একজন।
১৫ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় মোশারফ হোসেন। একই দিন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মারা যান আজিজুল হক।
১৯ ডিসেম্বর র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় টাংগাইলের গোপালপুরে মামুনুর রহমান ও হাজারিবাগে আলম নামে ২জন।
২১ ডিসেম্বর পাবনায় র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় আনিসুর রহমান।
২৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারে কারা হেফাজতে মারা যান শরাফত আলী।
২৭ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে মারা যায় মীর হোসেন (৫০)।
৩০ ডিসেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাজেদুল করীম।

ধর্ষণ
গত বছর সারাদেশে ধর্ষণের শিকার হয় মোট ৫১১ জন। যার মধ্যে ২৭২ জন নারী ও ২৩৯ জন শিশু। গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১৪ টি ।
উল্লেখ্য, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনপুষ্ট ছাত্রলীগ জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে চূয়াডাঙ্গায় একজন গৃহবধু এএসআই কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন, যশোরে এক গৃহবধু আনসার সদস্য ও জয়পুরহাটে ৮ বছরের এক শিশু গ্রামপুলিশের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন।
২১ এপ্রিল পটুয়াখালীতে বাহাদুর নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীর নেতৃতে ৬/৭ জন যুবক একজন গৃহবধুকে ধর্ষণ করে। ২২ এপ্রিল ভোলার লালমোহনের কচুয়াখালী গ্রামে বিএনপি কর্মী শফি মাঝির স্ত্রী ও মেয়েকে আওয়ামী লীগ কর্মীরা পালাক্রমে ধর্ষণ করে ।
ভোলায় উপনির্বাচনের পরদিন যুবলীগ নেতা সিরাজ মিয়া বিএনপি সমর্থিত নান্নু মেম্বারের ভাতিঝা রুবেলের স্ত্রীকে ধর্ষণ করে।
১৩ মে সিলেট পলিটেকনিকে ছাত্রলীগ নেতা সৈকত শ্রেণীকক্ষে এক ছাত্রীকে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সোনাইকান্দি গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শাহিন রেজার পুত্র পান্না (২২) তার একজন সহযোগীকে নিয়ে স্বামী পরিত্যক্তা এক মহিলাকে (৪০) ধর্ষণ করে।
খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার দুর্গম কেয়াংঘাট এলাকায় ১৫ মে ইউপিডিএফ-এর সন্ত্রাসীরা কল্পনা বেগম (২৪) নামে এক গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২৫ মে লালমনিরহাটে শরিফাকে গণধর্ষণের পর হত্যা করে এসিডে শরীর পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
২৯ মে নারায়নগঞ্জে চাচাকে গাছের সাথে বেধে রেখে ২ ভাতিজীকে গণধর্ষণ করে সন্ত্রাসীরা।
জুন মাসে লালমনিরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের খাদ্য পরিদর্শক শফিউল আলম ১২ বছরের কিশোরী গৃহপরিচারিকা দুলালীকে ধর্ষণ করলে তার মৃত্যু হয়।
৩ জুন শরীতপুরের প্রবাসীর স্ত্রীকে ৫-৭ জন সন্ত্রাসী জোরপূর্বক গণধর্ষণ শেষে তাকে গলাকেটে হত্যা করে।
২২ জুন নড়াইলে সেলিনা সুলতানাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়।
৫ জুলাই টাঙ্গাইলের সখীপুরে এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে তার ভিডিও চিত্র ধারণ করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। ধর্ষিতা কিশোরী উন্মুক্ত বিশ¡বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী।
৫ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সখীপুর বাজারে আসে খাতা কিনে বাড়ি ফেরার সময় হাবিবুল−াহ ওরফে হাবিব, ছাত্রলীগ নেতা আরিফ, সখীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ স¤পাদক শওকত সিকদারের ভাগ্নে বাবুল, নাতি আকাশ মেয়েটিকে মোটরসাইকেলে করে হাজিপাড়ায় ব্যক্তি মালিকানাধীন একটি ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে হাবিব মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এ সময় তার সহযোগীরা ধর্ষণের চিত্র ভিডিও করে। পরে আরেকজন ধর্ষণ করতে গেলে মেয়েটি সুযোগ বুঝে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। মেয়েটিকে ধাওয়া করে ছাত্রলীগ নেতারা। এ সময় মেয়েটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। পরিস্থিতি টের পেয়ে ধর্ষণকারী ও তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
ফিল্মিস্টাইলে এ ধরনের ধর্ষণের ঘটনা সামাজিক অবয়ের চিত্র প্রকাশ করে।
১ আগস্ট বন্ধু দিবসে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বান্ধবীকে ইকোপার্কে নিয়ে ধর্ষণ করে প্রেমিক মোশাররফ।
৩ আগস্ট গঁফরগাওয়ে ভণ্ডপীর আব্দুর রশিদ চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীকে পাটক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করে।
৪ আগস্ট মাগুড়ার শ্রীপুরে মহেশপুর হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী পূর্ণিমা পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে কতিপয় যুবক তাকে পাটক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে।
সাতক্ষীরায় মাদ্রাসা ছাত্রী তাহমিনাকে অপহরণ করে ভারতের মুম্বাই শহরের এক পতিতালয়ে নিয়ে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়।
৩১ আগস্ট গোপালগঞ্জে নিজের বাড়িতে ইডেন কলেজের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী মিতাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
৩ সেপ্টেম্বর বগুড়ার শাজাহানপুরে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী প্রকৃতির ডাকে বাইরে গেলে বখাটে আলামিন তাকে ধর্ষণ করে। পরে মামলা করতে গেলে যুবলীগ নেতা আবু সাঈদ বাধা দেয়।
২৩ সেপ্টেম্বর বাগেরহাটে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী লিজাকে ধর্ষণের পর শ্বাস রোধ করে হত্যা করে ঘাতক সোহেল।
৬ নভেম্বর রংপুরের পীরগঞ্জে এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের চিত্র ভিডিও করে তা প্রচার করে স্থানীয় বখাটেরা।
৯ নভেম্বর বরিশালের উজিরপুরে এক কিশোরীকে চিকিৎসার নামে বারো দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করে জনৈক ভণ্ড ফকির।
১০ নভেম্বর লালমনিরহাটে ৩ বছরের অবুঝ শিশু ধর্ষণের শিকার হন এক নরপিশাচের হাতে।
১৭ নভেম্বর বাগেরহাটে ছবি আক্তার নামে এক গৃহবধুকে যুব ও শ্রমিক লীগের শুভ, মিজান, মল্লিক ও খোকা গণধর্ষণের পরে বিষ প্রয়োগে নির্মমভাবে হত্যা করে।
২২ নভেম্বর বাহুবলে এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। একই দিন পাবনায় বখাদেরে হাতে গণধর্ষণের শিকার হয় এক কিশোরী। পরে আজিজুল নামে এক ধর্ষক গণপিটুনিতে নিহত হয়।
১ ডিসেম্বর নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় ডিআইটি মাঠের সামনে থেকে গার্মেন্টস কর্মীকে ধরে নিয়ে রনি, সুমন, ডাকাত আবুল ও মিঠু ধর্ষণ করে। কিন্তু যুবলীগ কর্মীদের হুমকিতে পুলিশের সামনেই ধর্ষিতা গার্মেন্টস কর্মীকে পতিতা সাজিয়ে গ্রেফতার দেখানো হয়।
৯ ডিসেম্বর জাপানী বাবলু ভোগরাবুরি ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল আলম খোকন ও আলতাফ হোসেন এক কিশোরীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে।
১৪ ডিসেম্বর ফতুল্লায় পাঁচ বছরের শিশুকে লম্পট আলামিন ধর্ষণ করে।
১৯ ডিসেম্বর চাপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে দশম শ্রেণীর ছাত্রী নুরেশা খাতুন লিমাকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে সহপাঠি মাহবুব ও আজিম পুটুর বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।