আগৈলঝাড়ায় যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা গঠন

বরিশালের আগৈলঝাড়া থানা প্রশাসন যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা গঠন করেছে। ৭১’র হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, জমিদখলসহ মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীর গঠনকৃত তালিকা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সমন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকায় স্থান পেয়েছে আগৈলঝাড়ার ১৩ জন যুদ্ধাপরাধীর নাম। তালিকানুযায়ী ১৩ জনের মধ্যে বর্তমানে ৬ জন জিবীত ও ৭ জন মৃত ব্যক্তির নাম রয়েছে। এরমধ্যে রাজাকার ৭ জন, পিচ কমিটির সদস্য ৩ জন, জামায়াত নেতা ২ জন ও ১ জন আলবদরের নাম রয়েছে।

সূত্রমতে, প্রশাসন কেবল ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় মুক্তিযোদ্ধা নিধন, সংখ্যালঘু নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা, লুণ্ঠনকারীর নেতৃত্ব দানকারীদের নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের দোসরদের তালিকা গঠন করা হয়নি। প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী আগৈলঝাড়ায় যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় রয়েছে-উপজেলার ফুল্লশ্রী গ্রামের সোনামদ্দিন ফকিরের পুত্র নজর আলী ফকির-রাজাকার (জীবিত), উত্তর শিহিপাশা গ্রামের আরজান আলী সরদারের পুত্র মতি সরদার-রাজাকার (জীবিত), মধ্যশিহিপাশা গ্রামের বাবুজান মুন্সির পুত্র আফতাব উদ্দিন মুন্সি-পিচ কমিটির চেয়ারম্যান (মৃত), একই গ্রামের ইসমাইল দাড়িয়ার পুত্র হালিম দাড়িয়া-রাজাকার (মৃত), একই গ্রামের আফতাব উদ্দিন মুন্সির পুত্র সাহেব আলী মুন্সি-পিচ কমিটির সভাপতি (মৃত), গৈলা গ্রামের তমিজ উদ্দিন মুন্সির পুত্র নাজিবুর রহমান মোল্লা ওরফে নাজেম মুন্সি-পিচ কমিটির সেক্রেটারী (মৃত), কালুপাড়া গ্রামের শাহাবুদ্দিন খানের পুত্র ইফতিকুর রহমান তোতা খান-আলবদর (জীবিত), হাসেম খানের পুত্র শাহাবুদ্দিন খান-জামায়াত নেতা (জীবিত), উত্তর শিহিপাশা গ্রামের বলাই শিকদারের পুত্র এসকেন্দার আলী শিকদার-রাজাকার (জীবিত), একই গ্রামের তুকান হাওলাদারের পুত্র সৈয়দ আলী হাওলাদার-জামায়াত (মৃত), একই গ্রামের জৈনদ্দিন সরদারের পুত্র সিরাজ উদ্দিন সরদার-রাজাকার (মৃত), একই গ্রামের আব্দুল সরদারের পুত্র ইদ্রিস সরদার-রাজাকার (জীবিত), একই গ্রামের আহম্মেদ হাওলাদারের পুত্র কাদের হাওলাদার-রাজাকার (মৃত)।

স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ফুল্লশ্রী গ্রামের নজর আলী ফকিরকে মুক্তিযোদ্ধারা ধারালো ব্লেড দিয়ে কেঁচে কেঁচে গায়ে লবন মেখে দিলেও এখনো বেঁচে আছে স্বাধীনতা বিরোধী পাকিস্তানী এই দোসর। বর্তমানে তিনি বিএনপির রাজনিতির সাথে জড়িত। উত্তর শিহিপাশা গ্রামের মতি সরদার স্বাধীনতা বিরোধী সকল কর্মকান্ড করেও দেশ স্বাধীনের পর আওয়ামীলীগের কাতারে ঢুকে আওয়ামীলীগ পন্থী হয়ে যায়। বর্তমানে তিনি গৈলায় সরকারী ডিলার হিসেবে নিযুক্ত। মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাযজ্ঞের হোতা মুসফিকুর রহমান তোতা সোনালী ব্যাংকের উজিরপুরে স্বনির্ভর শাখায় কর্মরত। মাওলানা শাহাবুদ্দিন খান দীর্ঘদিন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেলের পদে থেকে বর্তমানে বার্ধক্যের কারনে নুব্জ দেহে নিজ গৃহে অবস্থানরত। এসকেন্দার আলী শিকদারকে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করলে সে এক পা হারায়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও ক্রাচে ভর করে বিএনপি নেতা এসকেন্দার আলী কুমারভাঙ্গা নামকস্থানে ডাকাতিকালে জনতার হাতে ধরা পরে। পিচ কমিটির সেক্রেটারী নাজিবুর রহমান মোল্লা ওরফে নাজেম মুন্সির পুত্র সাবেক জাতীয়পার্টির প্রভাবশালী নেতা ইউসুফ হোসেন মোল্লা। বর্তমানে তিনি আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক। ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময় থেকে তিনি  উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে তালিকা তৈরি করা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, গোপনীয়তা রক্ষা করে গঠনকৃত যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা তৈরির কাজ সম্পন্ন করে জেলা পুলিশ সুপারের বিশেষ শাখায় মাধ্যমে জেলা প্রশাসন ও সরকারের উর্ধ্বতন প্রশাসনের কাছে প্রেরন করা হয়েছে।