খাদ্য ঘাটতির কবলে গৌরনদী-আগৈলঝাড়া

গ্রামীন শাখা প্রশাখা খালে পানি না থাকায় সেচ সংকটের কারনে চলতি বছর দুই হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হচ্ছে না। বোরো চাষ করতে না পারায় দু’উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের প্রায় ৪ হাজার কৃষকের মাঝে এখন চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। ফলে এসব উপজেলায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে সংশ্লিস্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় ভুক্তভোগী, কৃষক ও সংশ্লিস্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর, বার্থী, চাঁদশী, মাহিলাড়া, বাটাজোর, সরিকল ও নলচিড়া ইউনিয়নে ভেতরের গ্রামীন শাখা ও প্রশাখা খালে পানি শূন্য হওয়ায় ৭টি ইউনিয়নের ২হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে সেচ সংকটের কারনে চলতি বছর বোরো চাষ হচ্ছে না। স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা ও ভূক্তভুগী কৃষকেরা জানান, নলচিড়া ইউনিয়নে ৬’শ ৫০ হেক্টর, সরিকল ইউনিয়নে ৪’শ ৫০ হেক্টর, চাঁদশী ইউনিয়নে ১’শ ৫০ হেক্টর, বার্থী ইউনিয়নে ১’শ ৫০ হেক্টর, খাঞ্জাপুর ইউনিয়নে ২’শ ৫০ হেক্টর, বাটাজোর ইউনিয়নে ১’শ ৫০ হেক্টর ও মাহিলাড়া ইউনিয়নে ২’শ ৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হচ্ছে না। গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের চরদিয়াশুর ইরি ব্ল¬কের চাষী মোঃ নজরুল ইসলাম (৪০), খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের আব্দুর জব্বার মিয়া (৬২), মাহিলাড়ার মোঃ তালেব আলী (৫২)সহ একাধিক চাষীরা জানান, সেচ সংকটের কারনে ব্লকের শত শত একর জমি অনাবাদি রয়েছে। চররমজানপুরের কৃষক জামাল সরদার (৩৫), মোঃ আলমগীর হোসেন (৬০), মোঃ জয়নাল আবেদীন (৪৫) জানান, সেচ সংকটের কারনে তারা চলতি বছর বোরো চাষ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।

আগৈলঝাড়া উপজেলার বারপাইকা গ্রামের  নির্মল বাড়ৈ (৫৫), আস্কর গ্রামের মোঃ জালাল উদ্দিন (৪২), বাগধা গ্রামের মোঃ সিরাজুল ইসলাম (৩৮), চাঁদত্রিশিরা গ্রামের মোঃ বক্তিয়ার হোসেন (৪৯) সহ ভূক্তভুগী অসংখ্য কৃষকেরা জানান, তাদের এলাকার গ্রামীণ শাখার খালগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় চলতি বছরে তারা বোরো চাষ করতে পারছেন না। বারপাইকা গ্রামের সুনিল কৃর্ত্তনীয়া, নিরঞ্জন হালদার, রাধাকান্ত বিশ্বাস, রবিন্দ্র নাথ হালদার, কুরলিয়া গ্রামের অমূল্য হালদার, গকুল মন্ডলসহ অন্যান্য চাষীরা বলেন, জরুরি ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারা দাবি জানিয়েছেন।

বাগধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি বোরো চাষ ব্যহৃত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আগামি বোরো মৌসুমের আগেই খাল খনন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে কৃষকের সমস্যার সমাধান করা হবে। আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ খলিলুর রহমান জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা, বাকাল, রত্মপুর, বাগধা ও রাজিহার ইউনিয়নের প্রায় ৫’শ হেক্টর জমিতে এবছর বোরো চাষ হচ্ছেনা। তিনি আরো বলেন, আগৈলঝাড়া উপজেলায় চলতি বছর ৯ হাজার ৮’শ ১৮ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। আগৈলঝাড়া উপজেলার ৩৫ হাজার মেট্রিক টন চালের চাহিদা থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে ৩০ হাজার ৯’শ ৬৯ মেট্রিক টন। ফলে প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতির সম্ভবনা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

গৌরনদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার মন্ডল জানান, গৌরনদী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে চলতি বোরো মৌসুমে হাইব্রীড ও উফসী জাতের ৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। সেচ সংকটে বোরো চাষ না হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, উপজেলার মধ্যে সরিকল ও নলচিড়া ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী জমি অনাবাদী রয়েছে। তবে আগামি বোরো মৌসুম শুরুর পূর্বেই সেচ সংকটে বন্ধ থাকা জমি চিহ্নিত করে সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, গৌরনদী উপজেলায় ২লক্ষ ৪ হাজার মানুষের জন্য ৩৬ হাজার ৪’শ ৭১ মেট্রিক টন খাদ্যের প্রয়োজন। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে সেচ সংকটে জমি অনবাদি থাকায় প্রায় ১ হাজার ২’শ ৮৭ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতির সম্ভবনা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।