জোড়াতালি দিয়েই চলছে বরিশালের আওয়ামীলীগ

(বিসিসি)’র মেয়র শওকত হোসেন হিরনের মধ্যে ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দ্বন্ধে স্থবির হয়ে পড়েছে দলীয় কার্যক্রম। ফলে ভেঙে পড়েছে বরিশাল আওয়ামী লীগের চেইন অব কমান্ড। এছাড়া দুই নেতার কোন্দলের কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ নগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন করাও সম্ভব হচ্ছে না।দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল ১৯৯৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। তৎকালীন কাউন্সিলে ৫৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মহিউদ্দিন আহমেদ, সহ-সভাপতি এড. সোবাহান মাসুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এড. নজরুল ইসলাম, যুগ্ম-সম্পাদক তরুণ দেব, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোবারক হোসেন, সদস্য সিরাজুল ইসলাম মানিক, আবদুল লতিফ, জিন্নাহ, দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ ও জাহিদ হোসেন মারা গেছেন। এছাড়া দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় অনেকেই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। দু’বার কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও রহস্যজনক কারণে কমিটি গঠন সম্ভব হয়নি।জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক এড. তালুকদার মো. ইউনুস এমপি বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনা পেলেই কাউন্সিলের ব্যাপারে প্রস্তুতি নেয়া হবে।১৯৯৮ সালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের গঠিত কমিটিকে জোড়াতালি দিয়েই চালানো হচ্ছে। কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান শাহজাহানের মৃত্যু এবং বিগত চার দলীয় জোট সরকারের আমলে অনেক নেতাকর্মী এলাকা ছেড়ে চলে যান। ফলে একপর্যায়ে দলীয় কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়লে ২০০৩ সালে মহানগর কমিটি ভেঙে হিরনকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন। এরপর ২০০৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মহানগর কমিটি গঠনের কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তা বাতিল করা হয়।মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরন  বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। কেন্দ্রীয় নেতারা চাইলেই সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হবে।১৮ বছরেও গঠন করা হয়নি বরিশাল জেলা যুবলীগের কমিটি। জাকির হোসেনকে সভাপতি ও ফজলুল করিম শাহিনকে সাধারণ সম্পাদক করে সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে কমিটি গঠন করা হয়। ২০০৬ সালের জুলাই মাসে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। মহানগর যুবলীগেরও সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। ১১ বছর পর ২০০৪ সালে সেই কমিটি ভেঙে তৎকালীন কমিশনার নিজামুল ইসলাম নিজামকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয় আহ্বায়ক কমিটি।১৯৯২ সালে গঠিত হয়েছিল জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রমসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী। তাদের কর্মকাণ্ডে ক্ষিপ্ত হয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণাসহ স্থগিত করেন সংগঠনের সব ধরনের কর্মকাণ্ড।  বরিশালে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হাসানাত-হিরন গ্রুপের ছাত্রলীগ নেতারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বরিশাল মেডিকেল কলেজ, হাতেম আলী কলেজ ও বিএম কলেজে দু’গ্রুপের নানা অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে অহরহ। সমপ্রতি বিএম কলেজে বাকসুর নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও হাসানাত-হিরন গ্রুপের বিভাজন চলছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি হিরন সমর্থক কলেজ শাখা ছাত্রলীগের মঈন তুষার, নাহিদ সেরনিয়াবাদ, হাতেম আলী কলেজ ছাত্রলীগের বাবলু জমাদার, ছাত্রনেতা শেখর দাস, জসিম উদ্দীন বাকসু নির্বাচনের দাবিতে অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ এবং লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাসানাত পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচিত কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক রফিক সেরনিয়াবাদ।

একই অবস্থা চলছে জেলা কৃষকলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিকলীগ এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোতে।হাসানাত-হিরন দ্বন্দ্বে অনেকেই রাজনীতি থেকে দূরে সরে গেছেন। এছাড়া উভয়গ্রুপের মধ্যে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করে। এতে ভেঙে পড়েছে উভয় দলের চেইন অব কমান্ড। বরিশাল এলজিইডিতে হিজলা-মুলাদীর সাইক্লোন সেল্টারসহ স্কুল নির্মাণে ১ কোটি ৮১ লাখ টাকার টেন্ডার ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে গত বছরের ২ আগস্ট হিরন-হাসানাত গ্রুপের সংঘর্ষ সারা দেশে ব্যাপকভাবে সমালোচনার ঝড় তুলেছিল। গ্রুপিং রাজনীতির ধারাবাহিকতায় নগরীতে হামলা ভাঙচুর গুলিবর্ষণের অভিযোগে গত ৪নভেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বরিশাল জেলা ও মহানগরের ১১ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়।জেলা আ’লীগের প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আনিছুর রহমান বলেন, বরিশাল আ’লীগে অভ্যন্তরীণ কোনো দ্বন্দ্ব নেই। যারা দ্বন্দ্বের জন্ম দিচ্ছে তারা আ’লীগের নিবেদিত কর্মী নয়। এছাড়া  কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ পেলেই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।