শাবিতে ২০ বছরে ১৬ শিক্ষার্থীর অকাল প্রাণহানি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের অন্যতম এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হওয়া ১৪ শিক্ষার্থী অকালে প্রাণ হারিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ ২০ বছরের ইতিহাসে পুলিশের গুলিতেও প্রাণ হারিয়েছে বিবিএর ৪র্থ বর্ষ ১ম সেমিস্টারের ছাত্র মোশাররফ হোসেন শামীম। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল নামকরণের আন্দোলনে প্রাণ হারায় নগরীর জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার ছাত্র হাফেজ বেলাল নামের একজন ছাত্র। দেশের শিক্ষাঙ্গনে বিরাজমান নেতিবাচক ধারার বৃত্ত ভেঙ্গে ব্যতিক্রমী ধারা প্রবর্তনের দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৯১ সালের ১৪ ফেব্র“য়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করে। শুরুর দিকে সেশনজট মুক্ত একটি সুন্দর ক্যাম্পাস হিসেবে সুনাম অর্জন করলেও ধীরে ধীরে ছাত্র রাজনীতি চর্চা আর নানা কারণে প্রাণ হারায় এখানে ভর্তি হওয়া একাধিক শিক্ষার্থী। ১৯৯৪ সারের শুরুর দিকে শুরু হয় ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস, ধর্মঘট, চাঁদাবাজি ও ভাংচুরের মত ধ্বাংসাত্মক কার্যকলাপ। শান্ত, পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস সহসাই গুলির আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। শুরু হয় লাগাতার ঘর্মঘট, বার বার বন্ধ হয়ে লেখাপড়ার স্বাভাবিক কার্যক্রম। ১৯৯৪ সালের ১৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে অকাল মৃত্যুর সূচনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল শাহপরান হলের পাশ্ববর্তী পুকুরে ফুটবল নিয়ে সাঁতার শিখতে গিয়ে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড পলিমার সায়েন্স’র মেধাবী ছাত্র ইফতেখার আহমদ মারা যায়। একই বছর সেপ্টেম্বর মাসে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন রসায়ন বিভাগের ছাত্র মো. রোকনুজ্জামান। দীর্ঘ ২৭ দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে ১২ অক্টোবর অপারেশন থিয়াটারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। ১৯৯৫ সালের মার্চ মাসে বড়ি যাওয়ার পথে ট্রেন দূর্ঘটনায় মারা যায় রাজু আহমেদ নামে এক ছাত্র। ১৯৯৯ সালে অকালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র এহতেশাম। রাতে খাবার খেয়ে নগরীর মদিনা মার্কেট থেকে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র তাপস ভট্টাচার্য। তাকে বহনকারী রিকসাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে প্রবেশ করার সময় সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ অভিমুখী একটি ট্রাক ধাক্কা দিলে দুমড়ে মুচড়ে পড়ে রিকশা। মারাত্মক আহত হন তাপস। ঢাকার পিজি হাসপাতালে মারা যায় তাপস। একই বছর সমাজকর্ম বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র বিদ্যুৎ রঞ্জন দত্ত সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারান। বাস্কেটবলের সেরা খেলোয়াড় ও সিভিল এনভায়রমেন্টাল এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র লাইসুর রহমান শুভ ২০০২ সালের ২০ জুলাই জণ্ডিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ঢাকার বারডেম হাসপাতালে। সুনামগঞ্জের অদূরে ডলুয়ার নারায়নতলায় নৌকা ভ্রমণকালে ২ জন ছাত্র পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করে। একই বছরের ১৫ আগস্ট জাফলং এর পিয়াইন নদীতে সাঁতার কাটতে গিয়ে প্রাণ হারায় রাজন ও ফয়সাল নামের দুজন ছাত্র। ২০০৫ সালের ১৩ জুলাই শাবিপ্রবির ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পাটোয়ারী লিটন। ২০০৬ সালের ১৩ মে নগরীর রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজে গিয়ে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মী ছাত্রী উত্যক্ত কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে আহত হয় ৬ জন শিক্ষার্থী। ঢাকার এপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মোশাররফ হোসেন শামীম। ২০১০ সালে বিবিএ’র ও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুজন ছাত্রী আত্মহত্যা করে। আর সর্বশেষ পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষ ১ম সেমিস্টারের ছাত্র সিফাত আর ইমরান সৈকত বান্ধবীর সাথে অভিমান করে মেসের নিজ রুমে আত্মহত্যা করে। অকালে ঝরে যাচ্ছে অনেক মেধাবীরা। বাবা-মায়ের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন না ঘটিয়েই স্বেচ্ছায়ও অনেকের এরকম প্রাণ হানি কোনভাবেই কারো কাম্য হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা আর কোনভাবেই যেন অকাল মৃত্যুর মিছিলের সারি বৃদ্ধি না পায়।