বিএনপির হরতাল ফাঁদ

BNP Bangladeshতাতে হরতাল পালনের কোনো কর্মসূচি নেই। ঘোষিত কর্মসূচিতে সভা সমাবেশ ও স্মারকলিপি পেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু এসব কর্মসূচিই হরতাল পালনের জন্য সরকারের জন্য ফাঁদ হিসেবে পেতে রেখেছে বিএনপি। সরকার সে ফাঁদে পা দিলেই হরতালের ঘোষণা দেবে দলটি।

গত ৬ এপ্রিল বুধবার রাতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় সরকার বিরোধী ৫ দিনের আন্দোলন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, গ্যাস সঙ্কটের প্রতিবাদে ১৮ এপ্রিল, বিদ্যুৎ সঙ্কটের প্রতিবাদে ২৪ এপ্রিল, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২৬ এপ্রিল, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারীর প্রতিবাদে ৫ মে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভাগ এবং জেলা শহরে সমাবেশ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান। ৯ মে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভাগ এবং জেলা শহরে সমাবেশ ও মিছিল।

ঘোষিত কর্মসূচিতে হরতাল ঘেরাওয়ের মতো কঠিন কঠোর কর্মসূচি কেন নেই এমন প্রশ্নের জবাবে দলীয় একাধিক নেতা জানান, বিএনপির কর্মসুচি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কর্মসূচি পালন করতে গেলে সরকার যদি বাধা দেয় তখন হরতাল দেয়া হবে। ঘোষিত কর্মসূচি হরতাল দেয়ার পরিবেশ তৈরিতে সরকারের জন্য ফাঁদ কিনা এমন প্রশ্নের জবাব কৌশলে এড়িয়ে গেছেন নেতারা।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কারণে বিএনপি তাদের আন্দোলনের কর্মসূচি স্থগিত রেখেছিল। বিশ্বকাপ ক্রিকেট শেষ হলেই তারা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে বলে দলের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই জানানো হয়।  আরো জানানো হয়, এবারের আন্দোলন হবে আগের আন্দোলনের চেয়ে একধাপ এগুনো। আন্দোলনের স্বাভাবিক কর্মসূচি, যেমন, সভা-সমাবেশ তো থাকবেই, ইস্যুভিত্তিক রোডমার্চ ও লংমার্চ এমনকি অবরোধ ও হরতালও থাকতে পারে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানিয়েছিলেন, লাগাতার হরতাল কর্মসূচিও থাকতে পারে।

বৃহৎ আকারে সরকারবিরোধী কর্মসূচি দেয়া হবে, সে প্রসঙ্গে ইতিপূর্বে  দেয়া বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষের অবস্থা আজ অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। দেশ ও জনগণের যে অবস্থা হয়েছে, তা সহ্য করার মতো নয়। আমরা শুধু অপেক্ষায় আছি। সমমনা শক্তি ও জনগণকে নিয়ে দেশ রক্ষার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। দেশ রক্ষায় জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্য দরকার। এতে ছোট-বড় বলে কিছু  নেই। দেশের মানুষকে বাঁচাতে সবাইকে এক হতে হবে। এ বক্তৃতায়  দেশ রক্ষার আন্দোলনে জনগণকেও অংশ নিতে তিনি আহ্বান জানান।

কিন্তু বুধবার রাতে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহিত কর্মসূচিতে সভা সমাবেশ ও স্মারকলিপি প্রদান ব্যাতিত কঠোর কোনো কর্মসূচি নেই। এর কারণ হিসেবে তারা জানান, বিএনপি হরতাল দেবে কিন্তু পরিবেশ তৈরি করতে হবে সরকারকে। সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যত বাধা দেবে আন্দোলনের কর্মসূচি তত বড় আকার ধারণ করবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরের কাগজকে বলেন, স্থায়ী কমিটির সভায় গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। এ কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করা, কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া এবং সরকার কিভাবে কর্মসূচিগুলো নেয় তার ওপর নির্ভর করবে নতুন নতুন কর্মসূচি আসা। তিনি বলেন, কঠোর কর্মসূচি বলতে যদি হরতালকেই বোঝানো হয় তাহলে সময়ই বলে দেবে কখন হরতাল প্রয়োজন।

খোন্দকার কাওছার হোসেন
০৭-০৪-২০১১