বখাটেপনায় বাঁধা দেওয়ার জের ধরে কলেজ ক্যাম্পাসে ৮টি বোমার বিস্ফোরণ, দেশীয় অস্ত্রের মহড়া ও ছাত্রলীগের দু’গ্র“পের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় নিরব থেকে বাসা বাড়িতে ঢুকে পুলিশের তান্ডবে শিশু ও মহিলাসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। এ সময় পুলিশ ৪টি বাড়িতে ভাংচুর করে। পুলিশের নির্যাতনের শিকার বিক্ষুদ্ধ স্থানীয়রা কালকিনি ভূরঘাটা সড়ক অবরোধ করে রাখলে র্যাবের মৃদু লাটি চার্জে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তাৎক্ষানিক ইউএনও’র উপস্থিতিতে আওয়ামীলীগ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা জরুরী সভায় বসলে তোপের মুখে পড়ে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নির্যাতিতদের বাড়িতে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। গতকাল শুক্রবার মানববন্ধন ও সাংবাদিক সম্মেলন করে দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবী করেছে নির্যাতিতরা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কে র্যালী প্রদক্ষিত হয়। সকাল ১১টায় কালকিনি পুরান বাজার কমিটি ব্যানারে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও ব্যবসায়ীগের উদ্যোগে বৈশাখী র্যালী কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পৌর ছাত্রলীগের এক নেতা ওই র্যালীর মেয়েদের শরীরে ময়দা মিশ্রিত রং ছুঁরে মারাকে কেন্দ্র করে র্যালীর লোকজন ও কলেজ-পৌর শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হলে এক পর্যায়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ৮টি বোমা বিস্ফোরিত হয়। রামদা, ছুরি ও হকিষ্টিক নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চলে আড়াই ঘন্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। ১২টার সময় প্রেসক্লাবের সামনে নিরব দর্শকের মতো দাড়িয়ে থেকে পুলিশের কর্মকর্তা আশফাক, আজিজ ও ফায়েকুজ্জামান লাটি নিয়ে কেজি বিদ্যানিকেতনের পাশ দিয়ে চর ঝাউতলা গ্রামে গিয়ে তান্ডব চালিয়ে ঘর থেকে মহিলাদের টেনে হিঁচরে বের করে অমানুষিক পিটুনি দেয়। মধ্যযুগীয় কায়দায় চরঝউতলা এলাকার নিরীহ গ্রামবাসীর উপর পুলিশী হামালায় আহত হয় কালকিনি শ্রমিক ইউনিয়ন ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কমিশনার বাবুল বেপারী (৫৫), স্ত্রী শিক্ষিকা আফরোজা(৩২), ছেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী তুষার (১৯) ও মেয়ে তাহাসিন(৭), তাসলিমা (৪০), লোকমান(৫০), সোমেলা (৬০), মোবারক মোল্লা (৬০), তাসলিমা (৪৪) আহত হন। এছাড়াও দুই গ্র“পের সংঘর্ষে সোহেল (২০), আরমান (২৫), লায়ন শিকদার (১৬), বাবু হাওলাদার (১৭), টুটুল (২৫), আকরাম (২৮), তুলফার সরদার (৪৫), খালিদ হাসান (১৪), দিদার মোল্লা (২৫), রাসেল কাজী (২২), জসিম হাওলাদার (২০)। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। নিরহ মানুষদের উপর পুলিশের হামলার সময়ে অফিসার ইনচার্জের মোবাইলে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি বলে ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগ।
ঐদিন বিকাল ৪টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহরিয়াজ, উপজেলা চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক, আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যাপিকা তহমিনা সিদ্দিকী, কালকিনি থানার অফিসার ইনচার্জ শাহিন মন্ডল আহতদের বাড়ীতে বাড়ীতে দেখতে জান। এ সময় তারা আহতদের শান্তনা দিয়ে বলেন তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পুলিশী হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুর ১২টায় কালকিনি ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন শাখার উদ্যোগে কালকিনি-ভূরঘাটা সড়কে মানববন্দন, সংবাদ সম্মেলন ও সমাবেশ করেন।
শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি লোকমান হোসেন সরদার শুক্রবার দুপুরে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে জানান, ‘কেন আমার এই শ্রমিক নেতার পরিবার ও অন্যান্য নিরীহ পরিবারের উপর বর্বরতা হামলা এর প্রতিবাদ জানাই’।
কালকিনি থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, ‘এ ঘটনায় আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি এবং এ ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে’।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর পুলিশ সুপার সরদার মোঃ তমিজউদ্দিনের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।