স্ত্রী হত্যার দায়ে বহুল আলোচিত পিতৃ হত্যাকারী গ্রেফতার

Rezaul Suzataকরে লাশ গুমের সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। এ খবর তার নিজ এলাকায় ছড়িয়ে পরলে এলাকাবাসী গৌরনদী উপজেলা পরিষদের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সিকদার সফিকুর রহমান রেজাউলের ফাঁসির দাবিতে টরকী বন্দরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকায় বসবাসের সুবাধে রেজাউলের সাথে পরিচয় হয় বনানী ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি কলেজের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ও বরিশালের কাউনিয়া এলাকার ধনার্ঢ্য ব্যক্তি মরহুম এডভোকেট রিয়াজ উদ্দিনের কন্যা কামরুন নাহার নাদিরার সাথে। পরিচয়ের সূত্রধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রেজাউল তার পূর্বের তিনটি বিয়ের কথা গোপন রেখে গত ছয়মাস পূর্বে নাদিরাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে তারা রায়েরবাজারের ৯১ হাতেমবাগের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। এরইমধ্যে নাদিরা দু’মাসের অন্তঃস্বত্তা হয়ে পরেন। বিয়ের পর থেকেই নাদিরার পিতার অঢেল সম্পত্তির ওপর রেজাউলের লোলুপ দৃষ্টি পরে। গত একমাস পূর্বে রেজাউল তার সহযোগীদের নিয়ে নাদিরার পিতার কাউনিয়া এলাকার একটি বিশাল পুকুর দখল করে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেন। এ নিয়ে নাদিরার সাথে রেজাউলের দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়।

এ ঘটনার জেরধরে গত রবিবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা বাঁধে। একপর্যায়ে রেজাউল তাকে (নাদিরাকে) শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। নিহত নাদিরার লাশগুমের জন্য ওইদিন রাতে রেজাউল তার নিজস্ব প্রাইভেটকারযোগে গৌরনদীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার শাহাবাগ থানা পুলিশ ওইদিন রাত সাড়ে আটটার দিকে লাশবাহী প্রাইভেটকারসহ ঘাতক রেজাউল, চালক গৌরনদীর কটকস্থল গ্রামের আদার আলী আকনের পুত্র রবিউল আকনকে গ্রেফতার করে। মুহুর্তের মধ্যে এ খবর সন্ত্রাসী রেজাউলের নিজ এলাকায় ছড়িয়ে পরলে ওইদিন রাত সাড়ে এগারোটার দিকে এলাকাবাসী খুনী রেজাউলের ফাঁসির দাবিতে টরকী বন্দর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।   

কে এই রেজাউল:
টরকী বন্দরের ফিরোজ মিয়ার কাপড়ের দোকানের মধ্যে বসে প্রকাশ্যে দিবালোকে ২০০৩ সালের ১ এপ্রিল সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদার তার পিতা বার্থী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাবুল শিকদারকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত হাবুল সিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী লিনা রহমান বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। টরকী বন্দরের ব্যবসায়ী নুর মোহাম্মদ জানান, সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদারের বড়ভাই সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় রহস্যজনক কারনে আলোচিত হাবুল সিকদারের হত্যা মামলাটি মাটি হয়ে যায়। পিতা হত্যার মামলা থেকে রেহাই পেয়ে রেজাউল আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

ব্যবসায়ী কে.এম জুয়েল জানান, ২০০৪ সালে রেজাউল গাজীপুর এলাকার শামচুন নাহার পাপরী নামের এক যুবতীকে বিয়ে করেন। সেখানে বাবু সিকদার নামের ৫ বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।

২০০৬ সালে রেজাউল গৌরনদীর পাশ্ববর্তী কালকিনি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া গ্রামের খালেক হাওলাদারের প্রথম কন্যা সূর্বনা আক্তারকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

২০০৯ সালে সূর্বনার ছোট বোন (রেজাউলের শ্যালিকা) স্কুল ছাত্রী সুজিতা আক্তারকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জোড়পূর্বক রেজাউল তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করে। ওইসময় এলাকাবাসি সন্ত্রাসী রেজাউল ও সহযোগীদের প্রতিরোধের চেষ্টা করলে গ্রামবাসীর সাথে রেজাউল বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছিলো। ওই ঘটনায় পুলিশ রেজাউলসহ তার সেকেন্ড ইন কমান্ড বাপ্পী সরদারকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গ্রেফতার করেছিলো।

এছাড়াও সিসি লোনের জমাকৃত জমির দলিল ফেরত না দেয়ায় ২০০৯ সালের ২৭ জুন টরকী বন্দর ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেনকে ব্যাংকের মধ্যে বসে রেজাউল ও তার সহযোগী আলমগীর শিকদার মারধর করে জমির দলিল ছিনিয়ে নিয়েছিলো। এ ঘটনায় ওইদিনই ম্যানেজার বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।

ওই বছরের ২২ নবেম্বর ঈদুল আযহার নামাজের জামাত শেষে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় সন্ত্রাসী রেজাউল কর্তৃক বার্থী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও টরকী বন্দর আদর্শ জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হোসেন মিয়াকে লাঞ্চিত করে।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি টরকী বন্দর বণিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব শাজাহান শরীফকে তার পদ থেকে পদত্যাগ করার জন্য রেজাউল ও তার বাহিনীর ক্যাডাররা চাপ প্রয়োগ করে। পদত্যাগে অস্বীকার করায় শাজাহান শরীফকে বেধম মারধর করা হয়। এ ব্যাপারে থানায় সাধারন ডায়েরীও করা হয়েছিলো। একই বছরেই দস্যুতা মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত পলাতক আসামি ও সন্ত্রাসী রেজাউল বাহিনীর ক্যাডার সোহেল সরদারকে গৌরনদী থানার এস.আই সামসুদ্দিন টরকী বাসষ্ঠ্যান্ড থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতকে নিয়ে এস.আইসহ কনষ্টবল রাজিউল ইসলাম মটরসাইকেলযোগে থানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। খবর পেয়ে সন্ত্রাসী রেজাউল তার বাহিনীর ৮/১০ জন ক্যাডার নিয়ে পাজারো জীপে এসে মটরসাইকেলকে ধাওয়া করে। থানার গেটে মটরসাইকেলকে অতিক্রম করে ওই জীপ দিয়ে ব্যারিকেট দিয়ে দারোগা সামসুদ্দিনকে প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলিকরে হত্যার হুমকি দিয়ে ক্যাডার সোহেলকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় পুলিশ রেজাউল বাহিনীর প্রধান রেজাউল সিকদার ও তার সহযোগী ক্যাডার বাপ্পী সরদার, সোলায়মান হাওলাদার, সোহেল, ইমন, আনিচ, মঈন, ইমরান, সোহেল সরদার, আল মাদানী, কসাই মিরাজ, রনি ও আনিচের নাম উল্লেখ করে ওইদিনই গৌরনদী থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করা হয়েছিলো।

সর্বশেষ অনুষ্টিতব্য পৌর নির্বাচনের দিন বিশৃংখলা সৃষ্টির লক্ষে সন্ত্রাসী রেজাউল নিজহাতে প্রকাশ্য দিবালোকে হাজার হাজার মানুষের সামনে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহানকে শারিরিক নির্যাতন করে।

টরকী বন্দরের একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, সন্ত্রাসী রেজাউলের টরকী বন্দরের বাসাটিকে টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। তার সকল অপকর্মকে ব্যবসায়ীরা মুখ বুঝে সহ্য করে যেতো। সন্ত্রাসী রেজাউল ও তার ক্যাডারদের ভয়ে কখনো কেহ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।

সিকদার সফিকুর রহমান রেজাউল ও তার ক্যাডারদের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে গৌরনদী থানার চৌকস অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম বলেন, রেজাউল ও তার ক্যাডারদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা ও জিডি রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি গৌরনদী থানায় যোগদান করার পর পরই গ্রেফতার আতংকে সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদার নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেছে।
রিপোর্ট: খোকন আহম্মেদ হীরা- Gournadi.com