হস্তান্তরের পূর্বেই ফাঁটল সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভবনে

সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের নবনির্মিত ভবনটি হস্তান্তরের পূর্বেই দেয়ালে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ভবনে বিভিন্নস্থানের আস্তর খসে পরতে শুরু করেছে। গত দু’বছর পুর্বে নতুন ভবনের নির্মান কাজ শেষ হলেও অজ্ঞাত কারনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করেননি। নবনির্মিত ভবন হস্তান্তর না করায় এবং দীর্ঘদিনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভবনে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগের কাজ সম্পন্ন না করায় সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সদস্যরা এখনো ভবনটি ব্যবহার করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তদন্ত কেন্দ্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন থেকে সরিকল বন্দরের কৃষি বিভাগের ব্লক সুপারভাইজারদের পরিত্যক্ত ভবনে বসবাস করে আসছেন। তাদের বসবাসকৃত পরিত্যক্ত ভবনটির ছাঁদ ধসে যেকোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা করছেন পুলিশ সদস্যরা। পাশ্ববর্তী সরকারী ডাক বাংলোতে পরিচালিত হচ্ছে পুলিশ সদস্যদের অফিসিয়াল কর্মকান্ড।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সদস্যদের বসবাসের কারনে দীর্ঘ একযুগ পর্যন্ত সরকারী ডাক বাংলোটি অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারছেন না। ফলে দুর দুরন্ত থেকে সরকারী কাজে আসা কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কাজে এখানে আসা ব্যবসায়ী ও সুধী সমাজের লোকজনদের রাত্রিযাপন করতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল গণপূর্ত বিভাগ ১ কোটি ১ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০০৭ সনের প্রথমার্ধ্যে সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের নতুন ভবন নির্মানের জন্য দরপত্র আহবান করেন। টেন্ডারের মাধ্যমে বরিশালের মের্সাস নবারুন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধীকারি মোঃ হেমায়েত উদ্দিন হিমু তালুকদার ভবন নির্মানের কাজ পান। সরিকল বন্দর থেকে মাত্র কয়েক’শ গজ উত্তরে দ্বিতল এ সুরম্য ভবনটির নির্মান কাজ গত ২০০৯ সনে সমাপ্ত হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নবনির্মিত সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এ ভবনটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পূর্বেই ভবনের সম্মুখের দেয়ালে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। এছাড়াও নবনির্মিত ভবনের বিভিন্নস্থানের পিলার ও দেয়ালের আস্তর খসে পরেছে। স্থানীয়রা জানান, ভবনটি নির্মানকালে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিন্মমানের ইট, বালু, সিমেন্ট ও রড ব্যবহার করার কারনেই নবনির্মিত ভবনের রুগ্ন দশা হয়েছে। ঠিকাদার প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি। সূত্রে আরো জানা গেছে, ভবন নির্মানের মান খারাপ হওয়া সত্বেও তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীরা মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ভবন হস্তান্তরের পূর্বেই ঠিকাদারের সমস্ত বিল পাশ করে দিয়েছেন। গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ঠিকাদার তার কাজের সমূদ্বয় বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন।

নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ স্বীকার করে ঠিকাদার মোঃ হেমায়েত উদ্দিন হিমু তালুকদার বলেন, ভবনটির কাজ গত দু’বছর পূর্বে শেষ হয়েছে। এখন আস্তর খসে কিংবা দেয়ালে ফাঁটল দেখা দিতেই পারে। হস্তান্তরের পূর্বে সবঠিক করে দেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। নবনির্মিত ভবন হস্তান্তর প্রসঙ্গে তিনি বিদ্যুৎ বিভাগকে দায়ি করে বলেন, গত দেড় বছর পূর্বে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে নতুন সংযোগের জন্য আবেদন করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। পানি ও বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ দিতে না পারায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনটি হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরো বলেন, গত এক সপ্তাহ পূর্বে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া গেছে। জুলাই মাসের মধ্যেই ভবনটি হস্তান্তর করা হবে বলে।

পল্লী বিদ্যুৎতের গৌরনদী জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আবু বক্কর শিবলী ঠিকাদারের উল্লেখিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ঠিকাদার নামে মাত্র আবেদন করে আর কোন খোঁজ খবর রাখেননি। তাছাড়া সরকারী ভাবে গত এক বছর বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা বন্ধ ছিলো।

গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম ক্ষোভের সাথে বলেন, জনগুরুতপূর্ণ সরিকল এলাকার জন্য সরকারী ভাবে নবনির্মিত ভবনটি হস্তান্তর না করায় আমার পুলিশ সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে পরিত্যক্ত একটি জরার্জীন ভবনে বসবাস করে আসছেন। ঠিকাদার নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মান করায় নবনির্মিত ভবনটি হস্তান্তরের পূর্বেই ফাঁটল দেখা দিয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এ ব্যাপারে বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ হারিসুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বরিশালে যোগদান করার পূর্বেই সরিকল পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভবন নির্মানের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বিধায় এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারবোনা।