ছাত্রলীগ নেতাদের লাঞ্চিতের ঘটনায় ফের তদন্ত কমিটির রহস্য

তদন্ত কমিটি এই নিয়ে ২বার সময় প্রার্থনা করায় হাসানাত ভক্ত আ’লীগ নেতাদের মধ্যে আবারও বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ১৫ জুন তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার কথা থাকলেও সময় প্রার্থনা করে তা প্রথমবার ২২জুনে রুপান্তর করা হয়েছে। কিন্তু পুনরায় গতকাল তদন্ত কমিটি পুনরায় আরো ১সপ্তাহ সময় প্রার্থনা করায় কমিটির তদন্ত নিয়ে দেখা দিয়েছে রহস্য। ফলে তদন্ত কমিটির গড়িমসি নিয়ে আ’লীগ নেতাদের মধ্যে দেখা চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ দিকে বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, লঞ্চিতের পুরুষ্কার স্বরুপ লঞ্চিতকারী নেতারা অর্জন করেছেন ছাত্র কর্ম পরিষদের সহ-সভাপতি (ভিপি)ও সাধারন সম্পাদক (জিএস)। গত এপ্রিল মাসের শুক্রবার রফিক সেরনিয়াবাদকে মারধরের মাধ্যমে শুরু হয়েছে বরিশাল আ’লীগের অভ্যন্তরীন ক্রোন্দলের সহিংসতার বহিঃপ্রকাশ। এরপর বাকেরগঞ্জের কমিটিকে কেন্দ্র করে বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মিলন ভূইয়া ও কাজী মনির উদ্দিন তারিককে মারধর এবং সর্বশেষ তারিক বিন ইসলামকে লঞ্চিত করার ঘোষনা। আশ্চর্যের বিষয় যে সব ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে সিনিয়র এসব নেতাদের মারধর করা হয়েছে তারা  তাদের শাস্তির পরিবর্তে পুরুষ্কার স্বরুপ পদোন্নতি পেয়েছে। যার প্রমান স্বরুপ ছাত্রলীগ নেতাদের দাবী বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্রলীগের অবৈধ ছাত্র কর্ম পরিষদকে সে সব নেতারাই নেতৃত্ব দিচ্ছে। যার মধ্যে ভিপি পদের মঈন তুষার ও জিএস পদের নাহিদ সেরনিয়াবাত উল্লেখযোগ্য। ও দিকে মিলন ভূইয়া, কাজী তারিক ও ওয়াসিম দেওয়ানকে লাঞ্চিত করার ঘটনায় বরিশাল আ’লীগ যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে তা অদ্যবদি আলোর মুখ না দেখায় তদন্ত কমিটিকে পকেট কমিটি বলে মন্তব্য করেছেন বরিশাল আ’লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা। প্রশ্ন উঠেছে কমিটির তদন্তকারী সদস্যদের তদন্ত নিয়ে। ঘটনার পর প্রায় ১মাস অতিবাহিত হতে চললেও ৪ সদস্যের এই তদন্ত কমিটি বারংবার কেন ৭দিনের সময় প্রার্থনা করেছেন এ নিয়ে দেখা দিয়েছে রহস্য। এ দিকে লঞ্চিত ৩ ছাত্রলীগ নেতা মিলন ভূইয়া, কাজী তারিক ও ওয়াসিম দেওয়ান বলছেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে কিনা তা তারা জানেই না। গতকাল পর্যন্ত তদন্ত কমিটির কোন সদস্য তাদের কাছে যায়নি। এমনকি মোবাইল ফোনেও কোন রকম কোন বিষয়ে আলাপ-অলোচনাও করেননি। তারা এই তদন্ত কমিটিকে পকেট কমিটি বলে মনে করছেন। তারা আরও বলেন, সারা দেশের মানুষ জানে কোথায় কখন কিভাবে কারা আমাদের লঞ্চিত করেছে অথচ তদন্ত কমিটি জানেনা। নাম মাত্র এই তদন্ত কমিটি কোন ধরনের তদন্ত রিপোর্টই প্রকাশ করবেন না বলে মন্তব্য করে তারা জানান, কোথায় কি কার ইশারায় বা ইন্দনে হচ্ছে আমরা সবি বুঝি। তাদের এই বক্তব্যের পর তদন্তে কমিটি তাদের তদন্তে কি পেয়েছেন এ প্রশ্ন নিয়ে গতকাল দৈনিক সত্যসংবাদ তদন্ত কমিটির দ্বারস্থ হলে আ’লীগ নেতা খান মামুন জানান, আমরা তদন্তের জন্য আরও ৭দিনের সময় নিয়েছি। মেয়র মহাদয় ঢাকায় রয়েছেন। খুব শীঘ্রই তিনি বরিশাল ফিরবেন। কিন্তু মেয়র হিরনের সাথে এই তদন্ত কমিটির সম্পর্ক কি এমন প্রশ্নে কোন জবাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তদন্ত কমিটি। এর বাইরে গত ১৬ জুন বিএম কলেজের সাবেক ভিপি আনোয়ার হোসেন তদন্ত সম্পর্কে বলেছিলেন, আমরা তদন্তের জন্য আরও ১ সপ্তাহ সময় প্রার্থনা করেছি। চলতি মাসের ১৫তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা ছিল। কিন্তু একের পর এক কলেজ গুলোতে যেভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে এগুলো কি একি ব্যেক্তির ইন্দনে হচ্ছে কিনা সেটাও দেখার ব্যাপার। ঘটনার তদন্তে জন্য আরো এক সপ্তাহ সময় প্রয়োজন হবে কেন এ প্রশ্নের জবাব এরিয়ে গিয়ে তিনি জানান, আমরা লাঞ্চিত করার ঘটনা যে কয়টি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল সেগুলো সংগ্রহ করেছি। তার এ কথার ভিত্তিতে তাকে পাল্টা প্রশ্ন করা হয় তবে কি তদন্ত শেষ হওয়ার কথা নয় ? এ প্রশ্নের জবাবে ভিপি আনোয়ার বলেছিলেন, হা বলতে পারেন প্রায় শেষ। তারপরও আগামি ২২ জুন পর্যন্ত সময় প্রার্থনা করা হয়েছে। তদন্তের পারবর্তী করনীয় সম্পর্কে তিনি জানান, আমরা তদন্ত প্রতিবেদন জেলা আ’লীগের নিকট হস্তান্তর করব। এরপর জেলা আ’লীগ দক্ষিনাঞ্চলের আ’লীগের কর্নধর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ’র কাছে প্রতিবেদন পেশ করলে তিনি ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন। তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হচ্ছেন জেলা যুব লীগের সভাপতি জাকির হোসেন সহ মেজবাহ উদ্দিন জুয়েল এবং খান মামুন। প্রসঙ্গত, বিএম কলেজ বাকসু নির্বাচনকে  কেন্দ্র করে ২৯এপ্রিল শুক্রবার দুপুরে বরিশাল বিএম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক রফিক সেরনিয়াবাদকে মারধর করেছে বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরন ভক্ত ছাত্রলীগ নেতা মঈন তুষার ও তার লোকজন। এ ঘটনায় বিকেলে বরিশাল কোতোয়ালী থানায় রফিক সেরনিয়াবাদ এবং মঈন তুষার পাল্টাপাল্টি মামলাও দায়ের  করে। এরপর মে মাসের প্রথম দিকে মঈন তুষার ও নাহিদ সেরনিয়াবাদের নেতৃত্বে বাকেরগঞ্জের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল রোড এলাকার হোটেল প্যারাডাইসের সামনে লঞ্চিত করা হয় জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মিলন ভূইয়াকে। একইদিনে তাদের হাতে লাঞ্চিত হয় জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন সম্পাদক কাজী মনির উদ্দিন তারিক ও ছাত্রলীগ নেতা ওয়াসিম দেওয়ান।