বর্তমান সরকারের আমলে দেশে ফিরছেন না তারেক রহমান

সমালোচিত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দেশে ফিরলে তাকে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হবে এ আশংকায় তাকে দেশে আসার ব্যাপারে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার উপদেষ্টা ও বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

এ কারণে বিএনপির তৃনমূল নেতাকর্মীদের তারেককে দেশে ফিরিয়ে এনে দলের দায়িত্ব দেয়ার যে দাবি উঠেছিলো তা আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আর দলের কোনো সভা সমাবেশে তারেককে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিও তোলেন না কোনো নেতাকর্মীরা। কেবল কতিপয় নেতাকেই বলতে শোনা যায়, তারেক রহমান বীরের বেশে আসবে ফিরে বাংলাদেশে।

এ সরকারের আমলে তারেক রহমান যে দেশে ফিরছেন না তা আরো পরিষ্কার হয়েছে গত ১০ই জুলাই নিউইয়র্ক জ্যাকসন হাইটসের প্রান কেন্দ্র ‘পালকি’ সেন্টারে তারেক আন্তর্জাতিক পরিষদের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় খালেদা জিয়ার অলিখিত উপদেষ্টা সাংবাদিক কলামিষ্ট ও সম্পাদক শফিক রেহমানের মন্তব্যে।

বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপরে আয়োজিত এই সেমিনারের বিষয়বস্তু ছিল বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিপন্ন গনতন্ত্র। প্রায় ৩০ মিনিট ব্যাপী বক্তব্যে তিনি সম্প্রতি দেখে আসা তারেক রহমানের শারীরিক ও মানষিক অবস্থার বর্ননা দেন।

বর্তমান সরকারের আমলে সাধারণ নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা না থাকায় তারেক রহমানের দেশে ফিরে যাওয়া নিয়ে আশংকা প্রকাশ করে তিনি বলেন, যদি দেশবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারে এবং খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তাহলেই কেবল তারেক রহমানের দেশে ফিরে যাওয়া সম্ভব অন্যথায় তারেক রহমানের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশংকা রয়েছে।

সম্প্রতি আমেরিকা সফরে সেদেশের নীতি নির্ধারক পর্যায় থেকে খালেদা জিয়াকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে, তারেক রহমান কেন্দ্রিক কোনো আলোচনা নয়। বরং তাকে পর্দার অন্তরালে রেখে রাজনীতি করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এরপর থেকেই বিএনপির রাজনীতিতে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান উধাও হয়ে যায়।

তারেক রহমান প্রসঙ্গে সরকারের মনোভাবের সঙ্গে মার্কিন সরকারের মনোভাব মিলে যাওয়ায় তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার যে পরিকল্পনা বিএনপি নিয়েছিলো তা থেকে তারা সরে এসেছে। গত ১৩ জুলাই বুধবার ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউটে বিএনপি আয়োজিত গণঅনশনে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা বা তার শারিরিক অবস্থা সম্পর্কে খালেদা জিয়া কোনো কথা বলেননি। এমনকি বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন তারাও তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। অনুষ্টানে তারেকের কোনো ভিডিও চিত্র  দেখানো বা কোনো বানী প্রচার করা হয়নি। অনুষ্টানে তারেক রহমান ছিলেন আলোচনার বাইরে।  

এদিকে ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে আগামী ২৫ জুলাই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মুদ্রাপাচার মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর মুখ্য আইনজীবী আনিসুল হক বলেন, বিচারিক আদালতে মামলার পরবর্তী তারিখে তারেক রহমানকে পলাতক দেখিয়েই তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) উত্থাপন করতে এখন আর কোনো বাধা নেই।

২১ আগস্ট হত্যা মামলার পর ২১ আগস্টের বিস্ফোরক মামলায়ও তারেক রহমানসহ ১২ পলাতক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ জহুরুল হক পরোয়ানা জারির এ আদেশ দেন। পরোয়ানা তামিল সংক্রান্ত প্রতিবেদন আগামী ২৬ জুলাই দাখিল করতে পুলিশের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গত ৩ জুলাই ২১ আগস্টের ঘটনায় দুই মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হত্যা মামলায় তারেকসহ পলাতক ১৮ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে মুখ্য মহানগর হাকিম কেশব রায় চৌধুরীর আদালত।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারেককে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তাকে জড়িয়ে যে চার্জশিট দেয়া হয়েছে তা সঠিক নয় এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তিনি বলেন, সরকার পুলিশি রাষ্ট্র কায়েম করছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর দমন নীপিড়ন অব্যাহত রেখেছে। গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির ওপর আঘাত করছে।

উল্লেখ্য, ডজনের বেশি মামলার আসামি তারেক রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জামিনে মুক্তির পর লন্ডনে যান। এখনও তিনি সেখানেই রয়েছেন।