পবা’র গোল টেবিল বৈঠক – জনদূর্ভোগ হ্রাসে বাসের সংখ্যাবৃদ্ধি জরুরি

বৃদ্ধি করে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেই সাথে সড়কে বাস চলাচলকে অগ্রাধিকার দিয়ে রিক্সা, সিএনজি, ট্যাক্সিসহ গণপরিবহনের উন্নয়ন করতে হবে। গতকাল ১২ আগষ্ট  সকাল ১০:৩০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা উক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। গোলটেবিল বৈঠক থেকে উক্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্ত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স এর সভাপতি অধ্যাপক ড. সারোয়ার জাহান; বিশিষ্ট কলামিস্ট কামাল লোহানী; সিপিবি-র সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান; সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু, বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল হক, বিআইডব্লিওটিএ-র সাবেক পরিচালক মনোয়ার হোসেন, ইউএনডিপির খন্দকার নিয়াজ রহমান প্রমুখ। বড় বড় বাসের সংখ্যা বৃদ্ধির উপর জোর আরোপ করে বক্তারা বলেন, মানসম্পন্ন পর্যাপ্ত বাস যানজট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তাছাড়া যে সমস্ত রুটে রিক্সা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে মানুষের দূর্ভোগের কথা বিবেচনা করে অবিলম্বে সেসব রুটে পুণ:রায় রিক্সা চালু করা উচিত। টেসকই পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলতে রেল নৌ কেন্দ্রিক সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থার দাবী করে বক্তারা স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী নিন্মোক্ত দাবী সমূহ জানান।

স্বল্পমেয়াদী সুপারিশসমূহ গুলো হচ্ছে- চাহিদানুযায়ী বড় বড় বাসের ব্যবস্থা করা। বাস রুটে ইজারা প্রদানকৃত বাস কোম্পানীগুলোকে পর্যাপ্ত পরিমাণ বাস চালু রাখতে বাধ্য করা। যে সব কোম্পানি শর্ত ভঙ্গ করে বাসের সংখ্যা কমায়, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী সেবা নিশ্চিত করেনি তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে সেখানে বিআরটিসির মাধ্যমে দ্রুত পর্যাপ্ত বড় বড় বাস চালুর ব্যবস্থা করা। বাস রুটের পুণ:বিন্যাস করে সব এলাকায় যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা। সব সড়কে বাস চলাচলকে অগ্রাধিকার দেওয়া। অবিলম্বে নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে হেঁটে চলাচলের জন্য সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। বাস স্ট্যান্ড ও রেল ষ্টেশনে আসা যাওয়ার জন্য হেঁটে, সাইকেল ও রিক্সায় যাতায়াতের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা। অবিলম্বে যে সমস্ত রাস্তায় রিক্সা বন্ধ করা হয়েছে সেখানে পুণ:রায় রিক্সা চালু করা। এবং রিক্সা চলাচলের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা অর্থ্যাৎ রিক্সার জন্য পৃথক লেন, ভাড়া নিয়ন্ত্রণ এবং চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। পর্যাপ্ত সংখ্যক সিএনজি, থ্রি হুইলার, ট্যাক্সি ক্যাবের ব্যবস্থা করা। মালামাল পরিবহনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা অর্থাৎ সিটি সার্ভিসগুলোতে যাত্রীদের বহনকৃত মালামাল রাখার ব্যবস্থা করা। মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা অর্থ্যাৎ দিনের নির্দিষ্ট সময়ে বাজারে বা দোকানে মালামাল উঠা-নামা করানো এবং সরু রাস্তা গলিগুলিতে টাক ঢোকা নিষিদ্ধ করে রিক্সা ভ্যান, ট্রলির ব্যবস্থা করা। প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ যেমন-পার্কিং চার্জ বৃদ্ধি করা। গ্যাসের স্বল্পতা বিবেচনায় এবং প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাইভেটকারে ব্যবহারের জন্য গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা। একাধিক প্রাইভেট গাড়ির মালিকের উপর উচ্চ হারে কর আরোপ করা। নির্ধারিত স্থান ব্যতিরেকে পার্কিং নিষিদ্ধ করা। দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশসমূহ-পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি সমন্বিত নীতিমালা তৈরি করা। নগরে একটি অভিভাবক সংস্থার মাধ্যমে যাতায়াত সংক্রান্ত সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করা। বিশেষজ্ঞ, নাগরিক এবং সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ে ট্রাফিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদ গঠন করা। ট্রাফিক পরিকল্পনা ও নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ট্রাফিক পরিকল্পনা সার্বক্ষণিক সেল গঠন করা। পথচারী ও গণপরিবহনকে প্রাধান্য দিয়ে পরিবহন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। রেল, নৌ ও সড়কপথের সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ঢাকার আশেপাশের শহরের সঙ্গে যাতায়াতের জন্য রেলকে প্রাধান্য দেয়া। এজন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক রেলগাড়ির ব্যবস্থা করা। যাত্রী সাধারণের সুবিধা বিবেচনা করে ট্রেনের সময়সূচী নির্ধারণ করা। রেল ষ্টেশন থেকে সব জায়গায় যাতায়াতের জন্য বাস, সাইকেল, রিক্সা ও হাটার  পর্যাপ্ত সুবিধা রাখা ঢাকার চারপাশের নদী ও অভ্যন্তরীণ খালগুলোর সমন্বয়ে নৌ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা । এজন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ছোট-বড় নৌযান চালু করা। সব জায়গায় যাতায়াতের সুবিধা রেখে ল্যান্ডিং ষ্টেশন স্থাপন করা। সদরঘাট পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারণ করা। গণপরিবহনের সেবা বৃদ্ধিতে বিআরটিসিকে ঢেলে সাজানো এবং বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করে পর্যায়ক্রমে সকল রুটে বিআরটসি বাসের ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যবহুত বিআরটিসি বাস সমূহকে ফিরিয়ে এনে গনপরিবহনে ব্যবহার করা।  ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতে বিশেষ সুবিধা প্রদান করা। সাইকেলে চলাচলের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি যেমন সাইকেলের জন্য পৃথক লেন, স্টান্ড ও ফ্রি সাইকেল সার্ভিস চালুসহ সুলভে সাইকেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণে-প্রাইভেটকার আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রাইভেট কার আমদানি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকারকারী ও বেসরকারী সকল পর্যায়ে অহেতুক বড় বড় বিলাস বহুল প্রাইভেটকার আমদানী ও ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নগরের ব্যস্ততম এলাকায় প্রাইভেট গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রে কনজেশন চার্জ গ্রহণ করতে হবে। সড়ক, ভবনসহ নির্ধরিত সকল স্থানে পার্কিংয়ের জন্য জায়গা ও সময়ের মূল্যানুসারে ঘন্টা হিসেবে পার্কিং ফি গ্রহণ করা। প্রাইভেট কার কেন্দ্রিক অবকাঠামো যেমন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও বহুতল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ থেকে বিরত থাকা। ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় বাধ্যতামূলক গাড়ি পার্কিং এর জায়গা রাখার বিধান বাতিল করা।