ষাটের দশকের শুরুর দিক। আড়িয়াল খাঁ নদীবিধৌত মাদারীপুর এখনকার মতো এত ব্যস্ত ছিল না। জনবসতি ছিল অনেক কম। গাছগাছালির আধিক্যে অনেকটা জঙ্গলভাব ছিল মনোরম এই শহরটির। মাদারীপুর শহর থেকে ৩ কি.মি. দূরে চরমুগুরিয়া বন্দর। জেলা শহর থেকে উন্নয়নের ছোঁয়া কম নয় এখানেও। চরমুগুরিয়া বন্দর এলাকা বানরের রাজ্য বলে খ্যাত ছিল একসময়। মাদারীপুর জেলার মধ্যে এই চরমুগুরিয়া ছিল বানরের অভয়াশ্রম।
তৎকালে চরমুগুরিয়া বন্দর ছিল পাখিডাকা, ছায়াঘেরা একটি গ্রাম। অসংখ্য গাছগাছালিতে পূর্ণ ছিল এই এলাকা। চারদিকে যেন সবুজেরই হাতছানি। আশপাশের এলাকা থেকে এখানে জনবসতি কম ও বন-জঙ্গল থাকায় শুধু বানর নয়, হনুমানেরও বিচরণ ছিল এখানে। আরও ছিল নানা প্রজাতির হাজার হাজার পাখি।
এ শতাব্দীতে এসে বানরগুলো যেন আর ধরে রাখতে পারছে না তাদের রাজ্যের সুনাম। এক সময়ের নিজের আবাসস্থলে এখন একরকম আশ্রিতই মনে হচ্ছে তাদের।
পাকা রাস্তার দু’ধারে কাঁচা-পাকা বাড়িঘর। এক সময়ের বনঘেরা এ গ্রাম এখন আর দেখলে বোঝাই যায় না। চরমুগুরিয়া বাজারের কাছাকাছি আসতেই পথে একটি দুটি বানর চোখে পড়তে শুরু করে। কিন্তু প্রকৃতির বিরূপতা ও মানব-বসতি বৃদ্ধির ফলে কমে গেছে বানরের সংখ্যা। দিন দিন বানরের সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলেও জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ক্ষুধার তাড়নায় এসব বানর মানুষের বাড়িতে চলে আসে। রান্নাঘর থেকে খাবার চুরি করে খায়। খাদ্যের অভাবে অনেক বানরই এলাকা ছেড়ে মাদারীপুর শহরে চলে এসেছে। এখানে দেড় হাজারের মতো বানর আছে। এরা কালীবাড়ি, জেমস একাডেমী, জেটিসি ফাঁড়ি ও জমাদ্দার মিল এলাকায় বিভক্ত হয়ে বাস করে। বানরগুলো আলাদাভাবে দলবদ্ধ হয়ে ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় বাস করলেও এক এলাকার বানর অন্য এলাকায় প্রবেশ করে না। দিন দিন মানুষের বসতি বেড়ে যাওয়ায় কমে যাচ্ছে বন ও আবাদি জমি। ফলে বানরের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এসব এলাকা। ফলদ বৃক্ষের পরিমাণও কম। তাই ঘুরেফিরে খাবে সে উপায়ও নেই বানরগুলোর। খাদ্যের জন্য মানুষের দয়া-দাক্ষিণ্য এবং চুরি করার উপর নির্ভর করতে হয় তাদের। কিন্তু এভাবে যে পেট চলতে চায় না আর! তাই দিন দিন শীর্ণ হয়ে যাচ্ছে তাদের শরীর। ঝড়-বৃষ্টির দিন অসহায় এ বানরগুলো একটু মাথা গোঁজার জন্য দিগি¦দিক ছুটতে থাকে।
১৯৮৮ সালের বন্যায় প্রথম সংকটের মুখে পড়ে বানরদল। অসংখ্য বানর মারাও যায়। পরবর্তী সময় ১৯৯৮ সালের বন্যায় দ্বিতীয়বারের মতো বিপন্ন হয়ে পড়ে বানরগুলো। জীব-বৈচিত্র্যের অন্যতম প্রাণী বানরগুলোর জীবন এখন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। দিন দিন কমে যাচ্ছে এদের সংখ্যা। বর্তমানে প্রায় দেড় হাজারের মতো বানর থাকলেও অধিকাংশই হাড্ডিসার। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে মাদারীপুরের ঐতিহ্য চরমুগুরিয়ার বানর-রাজ্য আজ বিপন্নের পথে।
তথ্য সূত্র: ইন্টারনেট