ঝালকাঠি গাউছেল আজম গাউছে পাক দরবারের ওরশে বাঁধার নিস্পত্তির দাবী

আহমেদ আবু জাফর, ঝালকাঠি ॥ বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী রহ: অনুসারীরা বারবার পশ্চিম ঝালকাঠিতে যে সকল কারনে ওরশ অনুষ্ঠান করতে গিয়েও হোচট খাচ্ছে তার কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে। শহর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন পশ্চিম ঝালকাঠি এলাকায় নিজম্ব স্থাপনা তৈরী করে দীর্ঘদিন যাবত গাউছেল আজম দরবারের ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা হয়ে আসছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অগোচরে কিছু অসাধু ব্যক্তির অসামাজিক ও উচ্ছৃংখল আচরনের ফলে ক্ষুব্ধ হচ্ছে এলাকাবাসি, আগন্তুকরা ও প্রশাসন।

জানাগেছে, ১৯৮৬ সালে ইঞ্জিনিয়ার মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের পৃষ্ঠপোষকতায় ঝালকাঠিতে দরবারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দরবারটির বিরুদ্ধে  ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ পরিপন্থী কাজের অভিযোগ আনেন নেছারাবাদীরা। বহু ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে দরবারটি টিকিয়ে রাখতে পারলেও কিছু অসাধু লোকের কারনে দরবারের ভাবমূর্তি দিনদিন ক্ষুন্ন হতে চলছে। এমনকি দরবারের পাশ্ববর্তী কিছু বখাটে ব্যক্তি গাঁজা, ফেন্সিডিল, মদ বিক্রিসহ সেবন  করে তারা বিপদে দরবারের পাশে  আশ্রয় নেয় আত্মরক্ষার জন্য। যার ফলে প্রশাসনসহ লোকজন তাদের দরবারের লোক বলেই চেনে জানে। তাদের কেউ কেউ সংশোধন হলেও বর্তমানে তাদের অনেকেই দরবারের আংশিক দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানাগেছে। এমনকি তাদের ব্যবহার আচরনে  এলাকার লোকজনসহ স্থানীয় প্রশাসন ক্ষুব্ধ।

উল্লেখ করা যেতে পারে অনুষ্ঠানের কিছুদিন পূর্বে  একজন পুলিশ কর্মকর্তা তদন্তে গেলে তার সাথে জনৈক আনোয়ার হোসেন অসৌজন্য আচরন করেন। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরে প্রতিবেদককে জানান। বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৩ সেপ্টেম্বরের বার্ষিক সম্মেলনের দিন সকালে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের পক্ষে জনৈক কর্মকর্তা দরবারে ডুকতেই তাকে পায়ের জুতা খুলে প্রবেশের কথা বলেন। এতে তিনি কিছুটা বিব্রতবোধ করেন। রাতে পুলিশের এক কর্মকর্তা দরবারে গেলে তার বসা চেয়ার নিতে উদ্যত হন জনৈক দেলোয়ার হোসেন। এঘটনায় তিনি আশ্চর্য ও বিব্রতবোধ করায় দরবারের ভক্ত কামাল মুন্সীর হস্তক্ষেপে বিষয়টি সুরাহা ঘটে। এছাড়া শহরের কিছু উৎসাহিত লোক রাতে দরবারে গিয়ে দরবার সম্পর্কে জানার জন্য গেলে তাদের সাথে গেটে কর্তব্যরত লোক অসৌজন্য আচরন করে ফিরিয়ে দেয়।

অন্যদিকে দরবার এলাকাটি শহর থেকে একটি খালের কারনে বিচ্ছিন্ন ও ঝোপ-ঝাড় থাকায় সবসময় দরবার কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষনিক নজর দিতে পারে না। এলাকার কিছু বিপদগামী যুবক নেশায় আসক্ত হয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে চলাফেরার কারনে নিরিহ লোকজনের বসবাস ঝুঁকিপূর্ন । এমনকি তারা দরবারের লোক বলেও পরিচয় দেন বিধায় এলাকার নিরিহ লোকজন দরবারের ওপর ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রকাশ করেন। খোঁজ খবর নিয়ে জানাগেছে, দরবারের পরিচালনায় থাকা খাদেম ইঞ্জিনিয়ার ইসমাইল হোসেন বেশীর ভাগ সময় অনুপস্থিত থাকার কারনে ঐ সমস্ত লোকজন বাঁধাগ্রস্থ হয় না।

এ সকল কারনে নেছারাবাদীসহ তার অনুসারীরা ঐ সকল বিপদগামী লোকজনের কর্মকান্ডকে পুঁজি করে বিভিন্ন জায়গায় বদনাম রটাতে  এবং ওরশে প্রকাশ্যে বাঁধা দিতে উৎসাহিত হন। মুল দরবারের কাজকর্মে  ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু না থাকলেও দরবারে থাকা কতিপয় লোকজনের আচরন প্রশ্নবিদ্ধ। এমনকি দরবার এলাকায় কেউ বিড়ি সিগারেট ও পান করতে পারেনা। কিন্তু দরবার সর্ম্পকে বাইরে ব্যাপক বদনাম রয়েছে। কেউ কেউ বলে বেড়াচ্ছে ওখানে নারী-পুরুষ মিলে একসাথে নাঁচগান, গাজা-মদ সেবন করে। কিন্তু দরবার এলাকায় ঘরের বাইরে বেপর্দায় কোন নারীকে দেখা যায়নি।

সম্প্রতি দরবারের ব্যাপক উন্নয়নের মধ্যে প্রধান খানকাটি প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। যা সিডরের মত দূর্যোগকালে এলাকার লোকজনের নিরাপত্তার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। গাউছেল আজম গাউছে পাক , পাক শব্দটির অর্থ পবিএ। আর ওরশ মানে পবিত্র রুহের মিলনস্থান। দীর্ঘদিন যাবত সেই পবিত্রতা সহকারে দরবার কর্তৃপক্ষ মহান সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান চালিয়ে পবিত্র রুহের মিলনের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। কর্তৃপক্ষের প্রচেস্টা ও সৃষ্টিকর্তার সাহায্য এবং লোকজনের সহায়তায় দরবারের উন্নয়ন করে নিজস্ব ধর্মীয় অনুষ্ঠান তথা মানবসেবা করার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যাহা দলমত নির্বিশেষে সকল ধর্মীয় লোকের সহযোগিতা করা উচিত বলে জ্ঞানী-গুনী ব্যক্তিরা মনে করেন। দরবার কর্তৃপক্ষেরও ক্রটিবিচ্যুতি সংশোধন করে সাধু সংঘের স্থানটির পবিত্রতা বজায় রাখা উচিত।

এদিকে কতিপয় মৌলবাদি সংগঠন ভুল তথ্যের ভিত্তিতে বিগত কয়েক বছর যাবত উক্ত অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিং, সড়ক অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে ওরশের বিরোধিতা করে আসছেন। জেলা প্রশাসক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য জরুরী বৈঠক ডেকেও কোন চুড়ান্ত সমাধানে সক্ষম হন নি। যার ফলে ইতিপূর্বে একবারসহ দরবার এলাকায় উত্তেজনা নিরসনে বারবার ১৪৪ধারা জারী করতে বাধ্য হয় প্রশাসন। উভয় পক্ষের মাঝে সৃষ্ট বিরোধ স্থায়ী নিস্পত্তির জন্য ঝালকাঠি নাগরিক ফোরাম জেলা প্রশাসকের কাছে ধর্মীয় আইনগত সমাধান দাবী করেন। যাতে উভয়পক্ষ শান্তিপূর্ন ভাবে নিজনিজ ধর্মমত পালন করতে পারেন।