গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার ৫০ টি গো-খামার বন্ধ

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ গো-খ্যাদ্যের তীব্র সংকট, অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ও উৎপাদিত দূধের দাম কম হওয়ায় লোকসানের কারনে বরিশালের গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার অর্ধ শতাধিকের বেশী  দূগ্ধ উৎপাদন গো-খামার  বন্ধ হয়ে গেছে। এখনো যে সব দূগ্ধ উৎপাদন গো- খামার চালু রয়েছে তাদেরকে প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে। খামারীদের অভিযোগ, গবাদি পশু পালনের ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা ও তদারকির ব্যবস্থা না থাকায় তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। দূধের দাম বৃদ্ধির দাবিতে শীঘ্রই আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দূগ্ধ খামারিরা জানিয়েছেন।

স্থানীয় লোকজন, খামারি ও দূগ্ধ উৎপাদনের সাথে সংশি¬স্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদীতে দেশের প্রসিদ্ধ দধি মিষ্টি তৈরী করা হয়। দেশে ও দেশের বাইরে এসব দধি মিষ্টির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ সুবাধে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ার আশপাশের এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক দধি মিষ্টির কারখানা ও শো-রুম রয়েছে। এ সকল দধি মিষ্টির কারখানার দুধের চাহিদা মেটাতে বানিজ্যিকভাবে গৌরনদীতে প্রায় শতাধিক দুগ্ধ উৎপাদন  গো-খামার গড়ে উঠেছে। গো-খাদ্যে তীব্র সংকট ও খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ও উৎপাদিত দূধের দাম কম হওয়ার  কারনে খামারিদের প্রতিনিয়ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ কারনে অর্ধ শতাকিকের বেশী দূগ্ধ উৎপাদন গো খামার বন্ধ হয়ে গেছে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান। বর্তমানে বাজারে খড়-কুড়া, গমের ভুষি, খৈলসহ যাবতীয় গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে অতীবৃষ্টির কারনে সংকট আরো মারাত্মক আকার ধারন করেছে। বৃষ্টিতে ভিজে অনেকের খড়ের পালা নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না কাঁচা ঘাস। গৌরনদী উপজেলার খামারি চাঁদশী গ্রামের মোহাম্মদ আলী, খাঞ্জাপুর গ্রামের  সেলিম মিয়া, শরীফাবাদের কাসেম আলীসহ অনেকেই জানান, কিছুদিন যাবত গো-খাদ্যের তীব্র সংকট ও অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিমন কুড়া আগে ছিল দুইশত টাকা বর্তমানে তিন শত পঞ্চাস থেকে চারশত টাকা। ৫০ কেজির গমের ভুষি আটশত পঞ্চাশ টাকার স্থলে ১৪’শ থেকে ১৫’শ টাকা। ৩৫ কেজির খেশারীর ভুষির বস্তা সাড়ে চারশত থেকে ৭’শ টাকা, সরিষার খৈলের বস্তার সাড়ে ১২ শ থেকে  ১৭/ ১৮’শ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। পক্ষান্তরে দূধের দাম খুবই কম। একটি গরুর খাবারের ব্যয় অনুযায়ী প্রতিকেজি দূধ উৎপাদনে ৪০/৪২ টাকা ব্যয় হলেও  বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি দূধের দাম ৩২/৩৪ টাকা নির্ধারন করেছে দধি মিষ্টির কারখানার মালিকরা। কাছেমাবাদ গ্রামের আল-বারাকা দুগ্ধ উৎপাদন গো-খামারের মালিক আমিনুল ইসলাম তোতা (৪৫) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়লে ও দুধের দাম বাড়েনি। গৌরনদীর মিষ্টির দোকানের মালিকরা সিন্ডিকেট করে প্রতি লিটার দুধের দাম নির্ধারন করেছেন ৩৫ টাকা। কখনো কখনো তাও ১/২ টাকা  কমানো হয়। লোকসান দিতে দিতে আর পারিনা, বড় কষ্টে আছি। তিনি আরো জানান, তার খামারে ছোট বড় সব মিলিয়ে ৬৫টি গরু ছিলো। লোকসাসের কারনে বর্তমানে খামারটি সংকুচিত  করা হয়েছে। বর্তমানে ১২টি গরু আছে।

আগৈলঝাড়ার ভালুকসী গ্রামের সাহাদাত কাজী ক্ষোভের সাথে বলেন, লোকসান দিতে দিতে খামারটি বন্ধ করে দিয়েছি। একই কথা জানালেন দুগ্ধ উৎপাদনকারী ও গো-খামারের অসংখ্য মালিকরা। এ সব ক্ষতিগ্রস্থরা জানান,  লাভের আশায় তারা খামার তৈরী করেছিলেন কিন্তু  গো-খ্যাদ্যের তীব্র সংকট, মূল্য বৃদ্ধি দুধের দাম কম  ও সরকারি সহায়তার অভাবে তারা নিঃস্ব হয়ে অবশেষে খামারগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন।

দিয়াশুর গ্রামের রায়হান গো-ফার্মের মালিক জামাল উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একদিকে খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও দুধের দাম কম অন্যদিকে পশুদের দেখার কেউ নেই। গৌরনদী পশু সম্পদ বিভাগ ও হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবৎ (প্রায় দেড় বছর) কোন  কর্মকর্তা ও ভেটেনারী সার্জনের পদ ও টিকাদানকারী এবং প্রজননকারী পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূণ্য রয়েছে। গবাদি পশু পালনের ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা ও তদারকির ব্যবস্থা না থাকায় খামারিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে তিনি জানান। দুগ্ধ উৎপাদন ও গো-খামারকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তা ও তদারকির ব্যবস্থা চালুর জন্য তারা সরকারের কাছে দাবি জানান। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুধের কম দাম নির্ধারন করার অভিযোগ প্রসঙ্গে গৌরনদী দধি মিষ্টি উৎপাদন সাহা মিষ্টান্ন ভান্ডারের সত্বাধিকারী চিত্ত রঞ্জন সাহা, দীলিপ কুমার মিষ্টান্ন ভান্ডরের সত্বাধিকারী স্বপন কুমার দাস, গৌরনদী মিষ্টান্ন ভান্ডারের সত্বাধিকারী  ফরিদ মিয়া ও প্রবীন ব্যবসায়ী শচীন ঘোষের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুধের দাম কমানোর অভিযোগ সত্য নয়। দুধের সঠিক মূল্য দেয়া হয়। গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারনে দুধ উৎপাদনে খামারিদের লোকসান দিতে হচ্ছে। দুধের ন্যায্য মূল্য নির্ধারন ও দাবি দাওয়া আদায়ের লক্ষে গঠিত খামারিদের স্বার্থ সংরক্ষন কমিটির আহবায়ক আমিনুল ইসলাম তোতা জানান, তারা খুব শীঘ্রই ব্যাপক কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়গুলো সম্পর্কে আমি অবহিত নই। তবে খামারিরা লিখিতভাবে দাবি দাওয়া পেশ করলে গো-খামার শিল্পকে টিকিয়ে রাকতে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া হবে।