কোটি টাকা পাওয়ার আদেশ থাকা সত্ত্বেও সন্তান কাঁদে ক্ষুধায়

আহমেদ আবু জাফর, ঝালকাঠি : উচ্চ আদালতসহ নিম্ম আদালতের তিনটি রায় ডিক্রি পাওয়া সত্ত্বেও সম্পত্তির ক্ষতিপূরনের  টাকা পাচ্ছেনা সংশ্লিষ্টরা। আদালত রায় ঘোষনার ৬০ দিনের মধ্যে বাদী বরাবরে সম্পত্তির ক্ষতিপূরনের টাকা প্রদানের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন সম্পত্তির ক্ষতিপূরনের টাকা প্রদান না করায় পরিবারগুলোর মানবেতর জীবনযাপন এমনকি সন্তানরা কাঁদছে ক্ষুধার জ্বালায়।

জানাগেছে, ১৯৬১-৬২ সালে এলএ ৪৯ নং কেসের মাধ্যমে সরকার জমির মালিকদের ক্ষতিপূরনের টাকা পরিশোধ না করে সম্পত্তির ওপর ঝালকাঠি ডিসি অফিস, মার্চেন্ট মহিলা কলেজ(বর্তমান সরকারী মহিলা কলেজ), শিল্পকলা একাডেমী, আ: ওহাব গাজী শিশু বিদ্যালয়, ধানসিঁড়ি মহিলা ক্লাব, আইনজীবি সমিতি ভবন, শিশু পার্ক ও ঝালকাঠি রাইফেল ক্লাব নির্মান করে। এছাড়া ওই জমির ওপর ডিসি , এসপি ও জেলা জজ’র বাসভবন নির্মান করা হয়।

ঝালকাঠি শহরের চাঁদকাঠি এলাকার জনৈক রুপসা ফকির ও মানিক শাহ ফকিরের ১১.৮০৮ সহস্রাংশ সম্পত্তি ভুমি হুকুম দখল করে নেয় সরকার। ঐ সময়ে সরকার জমির মালিক বরাবরে সম্পত্তির ক্ষতিপূরনের টাকা প্রদান না করায় রুপসা ফকিরের পুত্র হাশেম আলী ফকির ঝালকাঠি সাবজজ আদালতে দেওয়ানী ৫/৯২ নং মোকর্দ্দমা দায়ের করেন। আদালত ঐ মোকর্দ্দমার রায়ের আদেশে সম্পত্তির ক্ষতিপূরনের টাকা জমির মালিক বরাবরে পরিশোধের জন্য তৎকালীন জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

কিন্তু সম্পত্তির মালিকরা ক্ষতিপূরনের টাকা না পাওয়ায় তারা মহামান্য হাইকোর্টে দেওয়ানী আপীল ১৬৯/৯৪ নং মামলা দায়ের করেন। উক্ত আপীল মামলায় দু’জন বিচারপতির সমন্বয়ে যৌথ বেঞ্চ সম্পত্তির ক্ষতিপূরনের টাকা পরিশোধের আদেশ বহাল রেখে রায় প্রদান করেন। কিন্তু ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন উচ্চ আদালতের রায় পেয়েও কোন কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহন করেন নি। ফলে মামলার বাদী হাশেম আলী ফকির সরকারের কাছ থেকে জমির ক্ষতিপূরনের টাকা না পেয়ে অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন শেষে চিকিৎসার অভাবে ইহকাল ত্যাগ করেন।

পরবর্তীতে মৃত হাশেম আলী ফকিরের ছেলে বেলায়েত হোসেন ফকির সোনাই গং বাদী হয়ে ঝালকাঠি সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানী ১৫/০৩ নং মোকর্দ্দমা দায়ের করেন। উক্ত মোকর্দ্দমায় বিজ্ঞ বিচারক বিগত ১৭-২-২০১১ তারিখের রায়ে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং ভুমি হুকুম দখল কর্মকর্তাকে ৬০দিনের মধ্যে সম্পত্তির ক্ষতিপূরনের টাকা বাদী পক্ষ বরাবরে পরিশোধের নির্দেশ দেন। ব্যর্থতায় ক্ষতিপূরনের টাকা আদালতযোগে আদায়যোগ্য হবে মর্ম্মে রায়ে উল্লেখ করেন। বিজ্ঞ বিচারক রায়ের গভীরে এই মর্ম্মে উল্লেখ করেন যে, ‘ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং হুকুম দখল কর্মকর্তা বিজ্ঞ সাবজজ আদালতের এবং মহামান্য উচ্চ আদালতের দুজন বিচারপতির রায় ক্রমাগতভাবে অমান্য করে আসিতেছেন, যাহা গভীর উদ্বেগের বিষয়’। এতদসত্ত্বেও সরকারী আইন নিয়ম অনুযায়ী সম্পত্তির ক্ষতিপূরনের টাকা পাওয়ার আইনগত অধিকার থাকা সত্ত্বেও সম্পত্তির মালিকরা টাকা না পেয়ে অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করছে।

মামলার বাদী বেলায়েত হোসেন সোনাই জানান, ৬৪৭ সহস্রাংশ সম্পত্তির ক্ষতিপূরনের টাকা চেয়ে আবেদন করলেও আদালতের তিনটি মোকর্দ্দমায় রায় এবং ডিক্রি উপেক্ষা করে সরকার পক্ষে কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে রাষ্ট্র পক্ষের কৌশলী সম্প্রতি ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতে আপীল মোকর্দ্দমা দায়ের করেন। তিনি মামলাটিকে আইনগত ভিত্তিহীন বলে দাবী করে ক্ষতিপূরনের টাকা পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন জানিয়েছেন।