সহিংসতার দায় হবে সরকারের -ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন

খোন্দকার কাওছার হোসেন : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুন:বহাল করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, তা না হলে দেশ যদি সংঘাতের দিকে যায় তার দায় দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক অধিকার সোসাইটি আয়োজিত ‘সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

নাগরিক অধিকার সোসাইটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, জাবির শিক্ষক ড. কাজী আবদুস সামাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আল আমিন, এম এ হালিম প্রমুখ।

ড. মোশাররফ বলেন, রাজনীতি একটা অনিশ্চিত গন্তব্যের দিক যাচ্ছে। গোজামিলের মাধ্যমে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী করা হয়েছে। এর মধ্যে স্ববিরোধী বক্তব্য রয়েছে। একটা সংবিধানে স্ববিরোধী বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। পঞ্চম সংশোধনীতে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম সংযোজন করা হয়েছিলো এবং আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাখা হয়েছিলো। এখন তারা বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম রেখে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের জাতিসত্ত্বায় সবার পরিচয় ছিলো বাংলাদেশী। কারণ এর আগে বাঙালী জাতীয়তাবাদ নিয়ে দেশে সংকট ছিলো। পঞ্চম সংশোধনীতে জিয়াউর রহমান এটা অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন। হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান সবাই মিলে আমরা বাংলাদেশী ছিলাম। এটা একটা মীমাংসিত বিষয় ছিলো। এখন করা হয়েছে জনগণ জাতি হিসেবে বাঙালী আর জাতীয়তা বাংলাদেশী। এখানে স্ববিরোধীতা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে পঞ্চদশ সংশোধনীতে সবচেয়ে বড় সমস্যার সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও একটি অনিশ্চিত নির্বাচনের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। সরকার বলেছে, হাইকোর্টের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। অথচ হাইকোর্টের রায় এখনো লেখাই হয়নি। সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত রায় দেয়া হয়েছে। ওই রায়েই লেখা আছে আগামী ১০ ও ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে।

তিনি বলেন, আসলে সরকার বুঝতে পেরেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের কোনো খবরই থাকবে না। সেজন্য আদালতের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে।

ড. মোশাররফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নয় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে-হবে-হবে। অপরদিকে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, দলীয় সরকারের অধীনে বিরোধী দল নির্বাচনে যাবে না। ফলে আওয়ামী লীগ জোড় করে একতরফা নির্বাচন করে নিতে পারে। কিন্তু একতরফা নির্বাচনের ফলাফলের ইতিহাস বাংলাদেশে ভালো না। ওই নির্বাচনের সংসদ পাঁচ বছর টিকে থাকতে পারে না। বরং জনগণ তাদের দূরে ঠেলে দেয়। যেমন চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল করে তারা ২১ বছরে ক্ষমতার বাইরে ছিলো। একতরফা নির্বাচন কোনো দিন টিকেনি, জনগণ গ্রহণ করেনি। এবারো টিকবে না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমেরিকায় গিয়ে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় বলেছেন কোনো আলোচনা করবেন না। আবার দেশে এসে বলেছেন আলোচনা করবেন। এটার মধ্যেও একটা গোজামিল রয়েছে। এতে প্রমাণ হয় তিনি আসলে আলোচনা চান না।

তিনি বলেন, যখন আলোচনার মাধ্যমে কোনো ফয়সালা না হয় তখন রাজপথে ফয়সালা হয়। রাজপথে ফয়সালা হতে হলে সংঘাত হতে পারে। জনগণ এটা চায় না। জনগণ যখন তাদের পছন্দমতো সরকার গঠনের জন্য ভোট দিতে পারে না। তখন একটা অভ্যুত্থান হয়।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল না করে কোনো নির্বাচন হবে না। সরকার যদি গায়ের জোড়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায় তাহলে জনগণ তা প্রতিহত করবে। গণবিক্ষোভের সামনে এরশাদের মতো একটি সরকারের পতন ও তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণঅভ্যুথান হয়েছে।