“বৃষ্টির পানি ছিলো একমাত্র ভরসা” আটলান্টিক মহাসাগরে ১১৬ দিন

জাহাজের চীফ অফিসার আশ্রাফুল আলম জানান, ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর তারা কাজে যোগদান করেন। তার অধীনে একই জাহাজে চাকুরী করতেন বাংলাদেশী আরো ১০ যুবক। চাকুরীর এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর কোম্পানীর কাছে বেতন চাইলে কোম্পানীর লোকজন তাদের সাথে নানা তালবাহানা শুরু করেন। তিনি আরো জানান, তার জাহাজে অগ্নি নির্পাপক, জীবন রক্ষাকারী কোন সরঞ্জামাদি ছিলো না। এসব চেয়ে তিনি কোম্পানীর কাছে একাধিকবার আবেদন করা সত্বেও কোন সুফল হয়নি। এছাড়া প্রথমে তাদের খাবার ছাড়া অন্যকোন কিছুই দেয়া হতো না। ২০ মার্চ তাদের জাহাজে থাকা তেল, পানি ও খাবার শেষ হয়ে যায়। তিনি (আশ্রাফুল) কোম্পানীর কাছে এসব জানানোর পর কোম্পানীর লোকজনে তাদের নানাধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। এরপর থেকেই খাবার, তেল ও পানি সংকটে মানবেতর জীবন শুরু হয় জাহাজে কর্মরত বাংলাদেশী যুবকদের।
জাহাজের এবি (ক্রু) শাহাদাত হোসেন সোহেল জানান, তেলের অভাবে জাহাজের জেনারেটরও বন্ধ ছিলো। এ জন্য মহাসমুদ্রে জাহাজে থাকা সকলকে অন্ধকারের মধ্যেই রাত্রি যাপন করতে হয়েছে। আবেগ আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, খাবার নেই, তেল নেই, পানি নেই। এ অবস্থায় জাহাজের মধ্যেই মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। তীর্থের কাকের মতো চেয়ে থাকতাম আকাশ পানে, কখন বৃষ্টি নামবে। আর বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করবো। কারন বৃষ্টির পানিই ছিলো আমাদের খাবারের একমাত্র ভরসা। পানির মধ্যে থেকেও পানি পান করতে পারিনি। সাগরের পানি ছিলো প্রচন্ড লবনাক্ত। জীবনে বেঁচে যে স্ত্রী পরিজনের কাছে ফিরতে পারবো, সেকথা ভাবিনি কখনো। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে একাধিকবার বাংলাদেশ সরকারের নৌ-পরিবহন মন্ত্রানলয় ও পরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সহযোগীতা চেয়েছিলাম, পাইনি। উপায়অন্তুর না পেয়ে দেশী-বিদেশী সাংবাদিকদের সহযোগীতা চাইলে তারা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে একাধিকবার সংবাদ পরিবেশন করার পর গত ২৭ এপ্রিল রাতে কোম্পানীর লোকজনে জাহাজের চীফ অফিসার আশ্রাফুল আলম, ক্রু শাহাদাত হোসেন সোহেলসহ ৪জনকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।
আশ্রাফুল আলম আরো জানান, প্রতারক কোম্পানীর সকল জাহাজে কর্মরত অন্যান্য বাংলাদেশীরাও মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিনি প্রতারক কোম্পানীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসহ জাহাজে থাকা বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।