সরিকলের ৩১টি পরিবারের সম্পত্তি জাল দলিলের মাধ্যমে দখলের চেষ্টা – মামলা করায় হত্যার হুমকি

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সরিকল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, আত্মগোপনে থাকা সর্বহারা আঞ্চলিক নেতার পরিবার ও তাদের সহযোগীরা জাল দলিলের মাধ্যমে ৩১টি পরিবারের ভোগদখলীয় সহয় সম্পত্তি দখলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অসহায় ওই পরিবারগুলো তাদের সহয় সম্পত্তি রক্ষার জন্য বরিশাল আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার বাদি সুলতার মোল্লা অভিযোগ করেন, মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রভাবশালীরা তাকে ও অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি অব্যাহত রেখেছে। তাদের অব্যাহত হুমকির মুখে তারা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ ব্যাপারে তারা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা গেছে, সরিকল ইউনিয়নের আধুনা গ্রামের প্রয়াত জমিদার প্রফুল্ল চন্দ্র দত্তের পুত্র মৃত ভোলানাথ দত্তের একমাত্র ওয়ারিশ তার পুত্র শুভদ্বিপ দত্ত। শুভদ্বিপ ও তার মা রিতা দত্তের কাছ থেকে বিভিন্ন দাগে আধুনা গ্রামের আকবর মোল্লা, সুলতান মোল্লা, হানিফ আকন, হারুন আকন, খোকন মৃধা, রতন মৃধা, ইউনুস সিকদার, গোলাম হোসেন সিকদার, উত্তম দাস, বেলায়েত সাঝি, হারুন সাঝি, জামাল সরদার, সিদ্দিক সাঝি, মাখন ঢুঙ্গী, খোকন ঢুঙ্গী, মাধব ঢুঙ্গী, গোকুল চন্দ্র রায়, বীবেক রায়, বিদেশ রায়, গোপাল শীল, রতন শীল, সঞ্জয় শীল, রেজাউল আকন, আবুল হোসেন, গিয়াস উদ্দিন, আঃ হাই সরদার, আনিচ সরদার, আপ্তার আলী বেপারী, আনোয়ার সিকদার, মনীষ চন্দ্র ঘোষ ও ইউনুস মোল্লা সর্বমোট সাড়ে ১১ একর জমি ক্রয় করেন। বিগত ২০০৮ সন থেকে সর্বশেষ ২০১০ সন পর্যন্ত ওই জমির দলিল সম্পাদন করা হয়। উল্লেখিত ব্যক্তিরা তাদের ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে বসত বাড়ি ও পানের বরজ নির্মান করে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছেন। এরইমধ্যে গত দু’মাসপূর্বে জালজালিয়াতির মাধ্যমে দুটি দলিল সম্পাদন করে উল্লেখিত সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে সরিকল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, আওয়ামীলীগ নেতা ও আইন শৃংখলা বাহিনীর গ্রেফতার আতংকে দীর্ঘদিন থেকে আত্মগোপনে থাকা সর্বহারা কামরুল গ্র“পের আঞ্চলিক নেতা সুভাষ চন্দ্র হালদারের স্ত্রী রেনুকা রানী বাড়ৈ, সুভাষের ভাই পলাশ হালদার এবং সুভাষের ঘনিষ্ঠ সহযোগী একই গ্রামের ফরিদ ঘরামী।

অভিযোগে আরো জানা গেছে, আধুনা গ্রামের সুভাষ হালদারের স্ত্রী রেনুকা রানী বাড়ৈ ও একই গ্রামের মৃত নজির আলী ঘরামীর পুত্র ফরিদ ঘরামীর নামে জাল দলিলের স্বাক্ষী করা হয়েছে জনৈক শান্তি রঞ্জন সিকদারকে। স্বাক্ষী শান্তি রঞ্জন জানান, এ দলিল সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। এছাড়া দলিলের পরিচিত করা হয়েছে আধুনা গ্রামের মৃত গনেশ বলের পুত্র বিপ্লব বল ও দাতা করা হয়েছে একইগ্রামের গনেশ বলের স্ত্রী মনিবলকে। বিশেষ অনুসন্ধান ও সরিকল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানের দেয়া প্রত্যয়নপত্রে জানা গেছে, ওই দুটি নামে আধুনা গ্রামে কোন ভোটার বা বাসিন্দার অস্তিত্ব নেই।

৩১ জনের কাছে জমি বিক্রির সত্যতা স্বীকার করে মৃত ভোলানাথ দত্তের স্ত্রী রিতা দত্ত জানান, রেনুকা রানী বাড়ৈ ও ফরিদ ঘরামী জালজালিয়াতির মাধ্যমে সম্পত্তি দখলের চেষ্ঠা চালাচ্ছে। তিনি আরো জানান, দীর্ঘদিন থেকে সুভাষ হালদার ও তার লোকজনে তাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে পুরো সম্পত্তি দখল করে নেয়ার চেষ্ঠা করেছেন। সুভাষের আত্মগোপনের পর পরই তিনি ও তার পুত্র শুভদ্বিপ ওই সম্পত্তি উল্লেখিত ৩১ জনের কাছে বিক্রি করেছেন। জালদলিলের খবর পেয়ে তিনি ওই ৩১ জন ক্রেতাকেই মামলা দায়ের করার জন্য পরার্মশ দিয়েছেন।

সেমতে ওই ৩১ জনের পক্ষে সুলতান মোল্লা বাদি হয়ে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৬ জনকে আসামি করে জালজালিয়াতির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। বিচারক মামলাটি আমলের নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য গৌরনদীর সাবরেজিষ্টারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

এ খবর পেয়ে মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রভাবশালীরা মামলার বাদি ও ওইসব পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি অব্যাহত রেখেছে। তাদের অব্যাহত হুমকির মুখে তারা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ ব্যাপারে তারা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত রেনুকা রানী বাড়ৈ ও ফরিদ ঘরামী বলেন, প্রয়াত প্রফুল্ল চন্দ্র দত্তের কন্যা মনিবলের কাছ থেকে আমরা জমি ক্রয় করেছি। দীর্ঘদিন ১৫ বছর ধরে মনিবল ভারতে অবস্থান করায় কিভাবে সে স্ব-শরিরে গৌরনদী সাবরেজিষ্ট্রি অফিসে উপস্থিত হয়ে দলিলে স্বাক্ষর করেছে এমনই এক প্রশ্নের জবাবে তারা কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।