আজ সূর্যদয়ের সাথে সাথে সমুদ্রে পূন্যস্নান করবে হাজার হাজার পূর্ন্যার্থী

ফিরোজ মোস্তফা, বরিশালঃ কুয়াকাটায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী শত বছরের ৩ দিন ব্যাপী রাসমেলা বুধবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্র্নালয়ের প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব মোঃ মাহাবুবুর রহমান তালুকদার এমপি এ মেলার শুভ উদ্বোধন করেন। রাস মেলাকে কেন্দ্র করে কুয়াকাটর শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমসহ অনন্যা ভিলাস্থ  রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে আলাদা আলাদা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। পূন্যঅর্জনে অনন্যা মন্দিরের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় নামকীর্তন ও প্রার্থনা, সাড়ে ৮ টায় শ্রীমৎভাগভদ পাঠ ও আলোচনা। পূন্যার্থীদের জন্য আলোচনা করবেন লক্ষ্মীপুর জেলার কাব্যতীর্থ এ্যাড শ্যামল কান্তি চক্রবর্তী, সাড়ে ১০ টায় পদাবলী অনুষ্ঠান। পদাবলী কীর্তন করবেন আরতী রানী বৈরাগী ও অনন্যা শিল্পী বৃন্দ।

অনন্যা রাধাকৃষ্ণ মন্দিরের পরিচালক অনন্ত মূখার্জী জানান, রাস উৎসব তথা মেলার আগত পূর্নার্থী ও দর্শনার্থীদের জন্য বুধবার থেকে শুরু করে দু’দিন ব্যাপী প্রসাত বিতরন করা হবে। তিনি আরও জানান, অনন্যা মন্দিরের ৪ফুট উচু ১৬৩ কেজি ওজনের  রাধাকৃষ্ণ পিতলের যুগল মুর্তিটি  বাংলাদেশের অন্যতম।

সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, বুধবার থেকে শুরু করে বৃস্পতিবার রাত পর্যন্ত কুয়াকাটায় সমাবেশ ঘটছে রাসভক্ত হাজার হাজার পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর। সনাতন ধর্মের হিন্দুরা  বিশ্বাস করে এ পূর্নিমার রাতে নানা ধর্মীয় অন্ষ্ঠুান শেষে সমূদ্রে পূন্য স্নান করলে সারা জীবনের কলহিত দুঃখ মোচন ও সুখ অর্জিত হয়। তাই পূণ্যার্থীরা রাতভর কুয়াকাটা রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থ যাত্রী সেবাশ্রম প্রাঙ্গনে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে সকালে সমূদ্র স্নান করে নিষ্পাপ হয়ে বাড়ী ফিরে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। পুরোহিতদের মতে, দ্বাপর যুগে বৃন্দাবনে যমুনার তীরে গোপীগণ শ্রীকৃষ্ণ ও রাধীকার সঙ্গে লীলা বিলাস করার সময় যমুনাতে স্নান করেছিল লীলার আগে ও পরে। স্নান করে বিশুদ্ধ হয়ে পূন্যার্জন করে শ্রীকৃষ্ণকে শুধু পতি রূপে নয় জগৎপতি রূপে পাওয়ার মানষেই রাস স্নানের প্রথা প্রচলিত হয়ে আসছে কুয়াকাটায়। এর ধারাবাহিকতায় শত বছরের ঐতিহ্য সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন পূর্নিমার এ রাতে ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠান শেষে উষালগ্নে সমুদ্রে পূন্যস্নান করলে সারা বছরের পাপ মোচন হয়। তাই পূর্নার্থী ও দর্শনার্থীরা রাতভর অধিবাসের মধ্য দিয়ে কুয়াকাটা রাধা কৃষ্ণ,তীর্থ সেবাশ্রম ও সৎসঙ্গ আশ্রমে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করে সূর্যোদয়ের পূর্বে হরে কৃষ্ণ,হরে কৃষ্ণ ধ্বনি উচ্চরিত করে পুরোহিত কাছে দীক্ষা নিয়ে কুয়াকাটার সমুদ্র তটে স্নান করেছে।

কুয়াকাটায় এ রাস মেলা উপলক্ষে প্রশাসনিকভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সমূদ্র সৈকত সংলগ্ন রাধাকৃঞ্চ মন্দিরে রাধাকৃষ্ণের সতেরো জোড়া যুগল স্থাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে কুয়াকাটায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পূন্যার্থীদের পাশাপাশি লাখো দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। পূন্যার্থীরা পাপ মোচনে মন্দিরে রাতভর প্রার্থনায় মগ্ন থাকবেন। অপরদিকে দর্শনার্থীদের টিত্তবিনোদনের জন্য ধর্মীয় সংগীতসহ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাউল শিল্পী  কিরণ চন্দ্র রায় এর পরিবেশনায় সংগীত পরিবেশন করবেন, বাংলাদেশ বেতার বাউল শিল্পী চন্দনা মজুমদার, বাউল শিল্পী জীবনানন্দ কানাই ও বেতার শিল্পী তপন মজুমদার।

আয়োজকদের পক্ষ থেকে কুয়াকাটা রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থ যাত্রী সেবাশ্রম-এর সভাপতি বিপুল হাওলাদার জানিয়েছেন, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই রাস উৎসবকে শান্তি পূর্ণভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে সরকারের প্রশাসন ও সর্বস্তরের মানুষ সার্বিক সহায়তা করেছে।

কুয়াকাটা পৌর কাউন্সিলার তোফায়ের আহম্মেদ তপু জানান, ইতোমধ্যে পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য নিরাপদ পানি এবং পয়ঃনিষ্কানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর সচিব কবির হোসেন জানান, রাস মেলায় আগত লোকদের জন্য রয়েছে ভ্রাম্যমান মেডিকেল টিম, শৃঙ্খলার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মাদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, রাসমেলাকে কেন্দ্র করে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের টহল জোড়দার করা হয়েছে এবং স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিপুল পরিমান আনছার রয়েছে। তিনি আরও জনান, এ বছর কয়েক লক্ষ পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটবে।