বন্ধুদের নিয়ে স্ত্রীকে গণধর্ষণের পর হত্যা

বিল্লাল হোসেন, কালকিনি ॥ মুঠোফোনে ডেকে স্বর্ণালংকার ও টাকা ছিনিয়ে নিয়ে বন্ধুদের দিয়ে গণধর্ষণের পর স্ত্রীকে পাষন্ড স্বামী হত্যা করেছে। বিভৎস এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ধর্ষণের পর হত্যা ও লাশ গোপন করার অভিযোগে অজ্ঞাতনামা আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছে। এই ঘটনার ১৩ দিন পার হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। নিহতের পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকী দিয়েছে খুনীরা এবং পুলিশ ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য চাপ দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হতভাগিনী মেয়েটির বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনিতে।

নিহতের পরিবার ও পুলিশ জানায়, ২০১০ সনের ২ জুলাই চট্টগ্রাম আদালতে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার এনায়েতনগর ইউপির মৌলভীকান্দি গ্রামের আবদুস সালাম হাওলাদারের মেয়ে শাহানাজ (৩০) ও পাশ্ববর্তী মুলাদির উপজেলার চর সাহেবরামপুর গ্রামের জলিল সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেনের (৩৫) বিয়ে হয়। বিয়ের পর ঢাকায় শাহানাজ একটি গার্মেন্টসে কাজ করলে তার বেতনের টাকা আলমগীর নিয়ে যেত এবং আরো টাকার জন্য শারীরিক নির্যাতন করতো। বাড়ি থেকে টাকা এনে না দেয়ায় কয়েক মাস পর আলমগীর হঠাৎ গা ঢাকা দেয়। শাহানাজ স্বামীকে খুঁজতে তার ছোট ভাই মারুফকে নিয়ে শশুর বাড়ী গিয়ে দেখে বিয়ের কাবিননামায় বড় ভাই হাবিব সরদারকে বাবা ও ভাবী সামচুন নাহারকে মা পরিচয় দিয়েছে এবং বাড়িতে তার আরো একজন স্ত্রী রয়েছে। তারপরও সেখানে ৩/৪ দিন থাকলে স্বামীর বাড়ীর লোকজন তাকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। নিরূপায় হয়ে গত মাসে শাহনাজ মাদারীপুর আদালতের এডভোকেট বদিউজ্জামান বাদলের কালকিনি পৌরসভার বাসায় আশ্রয় নিয়ে মামলা করার প্রস্তুতি নেয়। আলমগীর হোসেন এ খবর পেয়ে শাহানাজকে মুঠোফোনে বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে আসলে আলাদা ঘর তুলে রাখবে বলে অনেক অনুনয়-বিনয় জানায়। এতে রাজী হয়ে শাহানাজ গত ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় আলমগীরের কাছে যাওয়ার জন্য উপজেলার সাহেবরামপুর এলাকার আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ে লঞ্চ ঘাটে যায়। সন্ধ্যার পরে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে আলমগীর হোসেন একটি নৌকাযোগে লঞ্চঘাট থেকে শাহনাজকে নিয়ে যায়। পরের দিন বিভৎস অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে মুলাদী থানা পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই নিহতের শশুর বাড়ির লোকজন পলাতক রয়েছে। এদিকে নিহতের ভাই মারুফ হোসেন মামলা করার জন্য মূলাদী থানায় গেলেও বাদী হয়ে পুলিশ মামলা করায় ও থানায় যোগাযোগে বিলম্ব হওয়ায় মামলা নেয়নি পুলিশ।

নিহতের ভাই মারুফ হোসেন বলেন, আলমগীরের কয়েক ভাই ডাকাতি ও মাদকচক্রের সাথে জড়িত, বর্তমানে সে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। এদিকে তার মা পরিচয় দানকারী মাদক সম্রাজ্ঞী সামচুন নাহার ঢাকায় বসে ফোনে হুমকী দিয়ে বলেন, এই মামলায় কিছুই হবে না। মামলার তদন্তকারী অফিসারের সাথে কথা হয়েছে। বাঁচতে চাইলে আর সামনে যাবি না। আড়িয়াল খাঁ নদীর জেলে খোকন মিয়া বলেন, ‘ঐ দিন রাত অনুমান ৩ টার দিকে চর সাহেবরামপুর লক্ষীরহাটের পুর্ব পাশে খাল দিয়ে নৌকাযোগে যাওয়ার সময় একটি ধইঞ্চা ক্ষেত থেকে ৪/৫ টি ছেলে আমার দিকে লাইটের আলো দেয় যাতে ওদের আমি না দেখি। ভয়ে আমি একটু সামনে এগিয়ে গেলে তারা পালিয়ে যায়। সকাল পুলিশ এখান থেকে মেয়েটির লাশ উদ্ধার করে।’

মামলার বাদী মূলাদী থানার সহকারী পরিদর্শক উত্তম কুমার দাস জানান, নিহতের লাশটি একটি ওড়না দিয়ে ঢাকা ছিল। যৌনাঙ্গে ক্ষত, দুই কানের লতি দিয়ে তাজা রক্ত পড়তে ছিল। শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন ছিল। তাকে নির্যাতনের পর খুন করে লাশ গোপন করার জন্য ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনায় এসপি স্যারের নির্দেশে (পুলিশ সুপার) আমি বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছি।

আলমগীরের ভাই লোকমান সরদার বলেন, ‘শাহানাজকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। তাকে যে অবস্থায় দেখেছি তাতে খুনি আমার ভাই হলেও তার শাস্তি পাওয়া উচিত।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বোয়ালীয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নজরুল ইসলাম বলেন, নিহতের স্বামী পলাতক থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করতে পারছি না। ঘটনাস্থল থেকে একটি ভেনিটি ব্যাগ ও ঘড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। খুনীদের সাথে সখ্যতার অভিযোগ সত্য নয়।