সরকার পতনে এক দফার আন্দোলন শুরু করবে বিএনপি – ডিসেম্বর থেকে লাগাতার কর্মসূচি

খোন্দকার কাওছার হোসেন : বিভাগীয় শহর অভিমুখে রোডমার্চ, ১৯ জেলায় জনসভা, অবস্থান কর্মসূচি, মহাসমাবেশ ও ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচিসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপি সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন শুরু করতে চায়। এ লক্ষ্যে তারা দলের প্রতিটি নেতাকর্মীসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং জোট ও সমমনা দলের নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় করতে প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে নামার জন্য দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে প্রস্তুত করার জন্যই খালেদা জিয়া রোডমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এ কর্মসূচি শেষ করেই তিনি ধারাবাহিক নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। যা সরকার পতনের চুড়ান্ত আন্দোলন হিসেবে বিবেচনা করছে বিএনপি ও তার মিত্র সকল রাজনৈতিক শক্তি।

কি কর্মসূচি আসছে
চলমান রোডমার্চ কর্মসূচি শেষে বৃহত্তর ১৯ জেলায় জনসভার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সকল জনসভায় খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন। এর সঙ্গে যুক্ত হবে জেলা উপজেলা ও পৌর এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি। এরপরই ঘোষণা করা হবে ঢাকায় মহাসমাবেশ বা ঢাকা ঘেরাও কর্মসুচি। এ কর্মসূচি চলাকালে সরকার বাধা দিলে কিংবা হামলা, গ্রেপ্তার বা ভ্রাম্যমান আদালত ব্যবহার করে নেতাকর্মীদের সাজা দিলে আন্দোলনে হরতাল কর্মসূচি যোগ হতে পারে।  আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে ধারাবাহিক ও লাগাতার কর্মসূচি শুরু হবে।

বিএনপির চলমান রোডমার্চ কর্মসূচিতে ব্যাপক জনসমর্থন ও সাফল্যের কারণে তারা আগামী ২৬ ও ২৭ নভেম্বর খুলনা বিভাগে রোডমার্চ করবে। এরপর তারা পর্যায়ক্রমে রংপুর ও চট্টগ্রামে রোডমার্চ করবে এরপরই তারা শুরু করবে ১৯ বিভাগে জনসভা।

চলমান কর্মসূচি
জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মঙ্গলবার জেলায় জেলায় এবং বুধবার ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে  বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে তারা।  আজ ১৭ নভেম্বর মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুদিবস উপলক্ষে আলোচনাসভা, ১৯ নভেম্বর তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকায় ও ২০ নভেম্বর সারাদেশে আলোচনা সভা, ২৭ নভেম্বর ডা. মিলনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা, ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবস পালন, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে ৭ দিনের কর্মসূচি আপাতত ঘোষণা করা হয়েছে।

এসব কর্মসূচি চলমান থাকা অবস্থায় আরো ধারাবাহিক কর্মসূচি আসবে সেসব ধারাবাহিক কর্মসূচি থেকেই ঢাকা ঘেরাও করে সরকারের পতন নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি জামাত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। সে লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণ করেছে তারা। আগামী বছরের মার্চ মাসকে চুড়ান্ত বিজয়ের টার্গেট করেই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে লাগাতার আন্দোলনের ছক তৈরি করেছে তারা।  

বরিশালে রোডমার্চ হবেনা- সেখানে হবে জনসভা
ইতিমধ্যেই শুরু হওয়া রোডমার্চ কর্মসূচির প্রতি জনগণের ব্যাপক সমর্থনের কারণে আরো কয়েকটি রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে। এগুলো হবে ঢাকা থেকে খুলনা, চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগীয় সদরে। এরপর রয়েছে কয়েকটি বড় বড় শহরে জনসভা। বিভাগীয় শহর বরিশালে রোডমার্চ না হয়ে সেখানে জনসভা হবে। রোডমার্চের গাড়ীবহর ফেরিপারাপার সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বরিশালে রোডমার্চ হবেনা।

এছাড়া ফরিদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, যশোরসহ বৃহত্তর ১৯ জেলায় জনসভা হবে এসব জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভাষণ দেবেন।

জনসভা শেষ করেই ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি। ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচির মাধ্যমেই সরকারকে বিদায় জানাতে চায় বিরোধীদল। বিরোধী দল ঢাকা ঘেরাওয়ের জন্য জাতীয় সংসদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বাংলাদেশ সচিবালয় ঘেরাওয়ের পরিকল্পনা করছে।

তাদের চিন্তা থাইল্যান্ড, মিশর, লিবিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে সরকার পতনে ঘেরাও কর্মসূচি যেভাবে কার্যকর হয়েছে তাদের ঘেরাও কর্মসূচিও সেভাবেই কার্যকর হবে।

বিএনপি নেতারা জানান, কর্মসূচিতে সরকার বাধা দিলে হরতাল ও অবরোধের মত কঠোর কর্মসূচি দেয়ারও নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। ঘোষিত ৬ বিভাগে রোডমার্চ ও ১৯ জেলার মহাসমাবেশ সফল করতে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গে চারদল ও সমমনা দলগুলোর নেতারা ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছেন।

আন্দোলনে সরকারের বিরুদ্ধে ইস্যু
সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পূণ:প্রবর্তন ও মধ্যবর্তী নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করা এই দুই ইস্যু প্রধান ইস্যু হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য ও জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও রাস্তাঘাটের দুরাবস্থার কারণে মানুষের যে দুভোর্গ হচ্ছে তা কাজে লাগাতে সে ইস্যুগুলো নিয়েও বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে দলটির।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে প্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি, নতুন নতুন মামলায় জড়ানো, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংকটে জনজীবনে নাভিঃস্বাস, সরকারি জুলুম, নির্যাতন-হয়রানি, মামলা-হামলা, অপহরণ, গুম, খুন, নিয়োগ-বাণিজ্য, দেশবিরোধী চুক্তি, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনে দলীয়করণ, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন দাবি আন্দোলনের মুল ইস্যুর সঙ্গে যোগ হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র আরো জানায়, আপাতত অবস্থান কর্মসূচি, রোডমার্চ ও জেলার মহাসমাবেশ সফল করতে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো আগাম প্রস্তুতি শুরু করেছেন। ধারাবাহিকভাবে আগামী ৩ মাসের মধ্যে এসব কর্মসূচি পালিত হবে।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনা প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের জাতীয় রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতিতে বিরাট ঝড় বয়ে যাচ্ছে। দলমত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ ঝড় মোকাবেলা করতে হবে। এসবের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, দেশ আজ মারাত্মক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, যোগাযোগ ব্যবস্থা সবকিছুই আজ হুমকির মুখে। বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে হামলাবাজ, মামলাবাজ, স্বৈরাচারী এ সরকারের পতন ঘটানো হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার দেশকে একটি পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে। এ থেকে একমাত্র খালেদা জিয়াই মুক্তি দিতে পারেন। তাই আগামি দিনে খালেদা জিয়া যখন যে রকম আন্দোলনের ডাক দিবেন তাতে সবাই শরীক হবেন। তিনি বলেন, ইতিহাস সাক্ষি ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার কোনো চেষ্টা এদেশের মানুষ সফল হতে দেয়নি, আগামীতেও দেবে না।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই ব্যর্থ সরকারকে চলে যেতে হবে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সরকারকে হটাতে খুলনা ও চট্টগ্রাম রোড মার্চের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক দিবেন। এ লক্ষ্যে তিনি আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। দেশের এই দুঃসময়ে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে এমন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে যে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।