খুলনা বিভাগে দুইদিনের রোডমার্চ আজ শুরু – দুইটি জনসভা ও তিনটি পথসভায় ভাষণ দেবেন খালেদা জিয়া

খোন্দকার কাওছার হোসেন : খুলনা অভিমুখে ২দিন ব্যাপী রোডমার্চ আজ শনিবার শুরু হচ্ছে। রোডমার্চের গাড়ীবহর রাজধানীর উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় অবস্থান করবে। সকাল ১০টায় খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসভবন থেকে বেড়িয়ে গাড়ী বহরের নেতৃত্ব গ্রহন করবেন।

উত্তরা  থেকে রওয়ানা হয়ে রোডমার্চটি গাজীপুর, টাঙ্গাইল হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে পাবনা হয়ে লালনশাহ সেতু অতিক্রম করে কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ, যশোর হয়ে খুলনা যাবে। সেখান থেকে বাগেরহাট পর্যন্ত যাবে।

তিনটি পথসভা ও দুটি জনসভা
দুদিনের রোডমার্চে খালেদা জিয়া তিনটি পথসভা ও দুটি জনসভায় বক্তৃতা করবেন। প্রথম পথসভাটি হবে আজ পাবনার দাশুরিয়ায়। বিকালে কুষ্টিয়া  স্টেডিয়ামে জনসভা হবে। জনসভা শেষ করে কুষ্টিয়া থেকে যশোর যাওয়ার পথে রাতে ঝিনাইদহে আরেকটি পথসভা ও আগামীকাল রোববার সকালে যশোরে পথসভায় ও বিকালে খুলনা  সার্কিট হাউস মাঠে চারদলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন বলে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান। বাগেরহাটে হযরত খান জাহান আলী (র.) মাজার জিয়ারত করবেন বলেও জানা গেছে।
বাগেরহাটে খানজাহান আলী (র.)-এর মাজার জিয়ারত এরপর রোডমার্চ খুলনা হয়ে বাগেরহাটে যাবে । খালেদা জিয়া সেখানে হজরত খানজাহান আলী (র.) এর মাজার জিয়ারত করবেন। বিকালে খুলনায় পৌঁছে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে চারদলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা করবেন।

খুলনা থেকে গণআওয়াজ তোলা হবে
সরকারের নির্যাতন-নিপীড়ন ও দেশের স্বার্থরক্ষায় ব্যর্থতার বিরুদ্ধে খুলনা থেকে গণআওয়াজ তোলা হবে বলে জানিয়েছেন রোডমার্চ আয়োজকরা। নিপীড়িত মানুষের জোয়ারে পথে পথে এমনই শ্লোগান উঠবে বলে আশা প্রকাশ করেন তারা।

ব্যস্ত সময় পার করছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা
রোডমার্চ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা। কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক গণসংযোগ চালাচ্ছেন তারা। রোডমার্চের পথে পথে ব্যাপক জনসমাগম ঘটাতে খুলনা বিভাগের সব জেলার পাশাপাশি পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নাটোরে চলছে প্রস্তুতি। পথসভা ও জনসভাকে সফল করতে স্থানীয় নেতারা রাত-দিন প্রচারণা চালাচ্ছেন।
সময়সূচি ও রুট ঘোষণার পর থেকে রাত-দিন খুলনা অঞ্চলে বিএনপি ও চারদলীয় জোটের শরিক জামাতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। হরতালের বিকল্প রোডমার্চ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তারা বিভিন্ন লিফলেট ও হ্যান্ডবিল বিলি করছেন।
খুলনায় নগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপি এবং জেলা সভাপতি অধ্যাপক মাজেদুল ইসলামসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা জনসংযোগ চালাচ্ছেন। মেহেরপুরে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি মাসুদ অরুন, মাগুরায় জেলা বিএনপির সভাপতি কবীর মুরাদ, সাধারণ সম্পাদক আলী আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, সদর উপজেলা সভাপতি সৈয়দ মোকাদ্দেস আলী, পৌর সভাপতি আবদুল গফুর, যুবদল নেতা আবু সাইদ মামুন, ছাত্রদল নেতা গোলাম জাহিদসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের স্থানীয় নেতারা প্রতিটি উপজেলায় ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন।
 
গেট, ফেস্টুন, ব্যানার, তোরণ দিয়ে ছেয়ে ফেলা হয়েছে
রোডমার্চের শুরু উত্তরা থেকে খুলনা পর্যন্ত রাস্তার দুধারে ফেস্টুন, ব্যানার, তোরণ দিয়ে ছেয়ে ফেলা হয়েছে। এসব তোরনে জিয়া, খালেদা ও তারেক রহমানের হরেক রকমের ছবি শোভা পাচ্ছে। এর বাইরে স্থানীয় নেতাদের ছবিও রয়েছে প্রতিটি এলাকায়।
নাটোরে খালেদা জিয়াকে ব্যাপক সংবর্ধনা দেবে স্থানীয় বিএনপি। নাটোরের সীমানা গুরুদাসপুর উপজেলার কাছিকাটা টোল প্লাজা থেকে বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজাপুরহাট পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কিলোমিটার রাস্তার দুপাশে দলীয় নেতাকর্মী এবং সমর্থকরা ব্যানার, ফেস্টুন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে দাঁড়িয়ে তাকে সংবর্ধনা জানাবেন। এ রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাসহ বিভিন্ন এলাকায় দৃষ্টিনন্দন তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে।
বরিশাল বিভাগে রোডমার্চ কর্মসূচি না হলেও খুলনার কর্মসূচির ঢেউয়ে এ বিভাগ জুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে বিপুল উৎ্সাহ-উদ্দীপনা। খুলনার কর্মসূচিতে অংশ নিতে বিভাগের সব জেলা উপজেলায় চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। হাজার হাজার নেতাকর্মী বাগেরহাট ও খুলনায় খালেদা জিয়ার সমাবেশে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে।
রোড়মার্চ সফল করতে চুয়াডাঙ্গায় দিনভর ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী শহরের নিউমার্কেট, বড় বাজার, পুরাতন বাজার, নিচের বাজার, ফলপট্টিসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন।
যশোরের কেশবপুরে চারদলীয় জোটের উদ্যোগে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে চারদলীয় জোটের নেতাকর্মীরা মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেয়।

রোডমার্চ বানচালের চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার
বিএনপি অভিযোগ করেছে, রোডমার্চে মানুষের ঢল দেখে সরকার টালমাটাল হয়ে পড়েছে। তারা গতানুগতিক ফ্যাসিবাদী আচরণ শুরু করেছে। পুলিশ ও দলীয় ক্যাডার দিয়ে এই রোডমার্চ বানচালের চেষ্টা চালাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন।
তিনি খুলনা মহানগরী সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু এমপির বরাত দিয়ে বলেন, খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ছাত্র ছাত্রীরা রোডমার্চের সমর্থনে মিছিল করার প্রস্তুতি নেয়ার সময় সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে। এতে ছাত্রদলের ১২ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
রিজভী বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, কয়েকদিন ধরে রোডমার্চকে ব্যাহত করার জন্য বাগেরহাট, ঝিনাইদহ ভেড়ামারায় পুলিশ হুমকি দিচ্ছে। প্রচারপত্র বিলি ও পোস্টার লাগাতে গেলে শারীরিকভাবে আক্রমণ করছে। গতকাল পাবনার দাশুরিয়ায় রোডমার্চের সমর্থনে পথসভার সময় সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, লাঠি পুলিশ কাঁদানে গ্যাস দিয়ে জনগণের আন্দোলন কখনো দমন করা যায়নি।

সরাসরি সম্প্রচার
রোডমার্চ সরাসরি সম্প্রচার করবে বিএনপি www.bnplive.com এ ওয়েব সাইটে দেখা যাবে। এছাড়া সময় টেলিভিশন, একুশে টেলিভিশন, বাংলা ভিশন এনটিভিসহ কয়েকটি বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করবে বলে জানা গেছে।