বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে চলছে অবাধে ঘুষ বাণিজ্য

উম্মে রুম্মান, বরিশাল ॥ এক হাজারের সংকেত হল ১ টাকা, আর ১০ বলতে বোঝানো হয় ১০ হাজার। এমনিভাবে সংকেতের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্য চলছে বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট কার্যালয়ে। কর্তারা থাকেন নেপথ্যে। জমির মালিকদের সাথে ঘুষ বাণিজ্যের লেনদেন করেন বেঞ্চ সহকারী শহীদুল্লাহ ইসলাম। এ বিষয়ে জানতে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার প্রনয় কান্তি বিশ্বাসকে বার কয়েক মুঠোফোনের ০১৭১১-৯৫৯৩৯৭ নাম্বারে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

গতকাল বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে গেলে একাধিক জমি মালিকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নগরীর উত্তর আমানতগঞ্জ থেকে আসা বাপ্পি শাহারিয়ার জানান, আমাদের দাদার ২৪ শতাংশ জমির ৪ জন অংশীদার।  একজন পাবে ৬ শতাংশ করে। মোট ৪ জনের জমির পরিমাণ ২৪ শতাংশ। আমার বড় চাচার ৬ শতাংশ জমির আংশিক অংশ জমি মাপে ভুলের কারণে আমাদের মধ্যে চলে আসে। এই জমির সমস্যা সমাধানের জন্য উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার সুখেন্দু শেখর মিস্ত্রির দ্বারস্থ হলে তিনি বলেন, ২০ টাকা। মানে (২০ হাজার টাকা) খতিয়ানে মুড়িয়ে বেঞ্চ সহকারী শহীদুল্লাহ ইসলামের কাছে নিয়ে যান।

উত্তর আমানতগঞ্জের রোকেয়া আজিম সড়কের অসহায় এক মহিলা জানান, আমার বাবার বাড়ি থেকে ২ শতাংশ জমি ফরায়েজ পেয়েছি। কিন্তু এটেস্টেশনের জন্য পীঠ দলের প্রয়োজন। তা দিতে না পারায় আমার কাছে ২০ হাজার টাকা চেয়েছে, যা আমার পক্ষে দেয়া অসম্ভব। একই এলাকা থেকে দলিল নিয়ে আসা সেলিম হাওলাদার নামে একজন রিকসা চালক বলেন, পৈত্রিক সূত্রে আমরা ৫ ভাই মোট ১৬ শতাংশ জমি পেয়েছি। সকল ভাইর নামে ভিন্নভাবে এটেস্টেশন করতে চাইলে আমাদের কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন বেঞ্চ সহকারী শহীদুল্লাহ ইসলাম। এই অফিসে আসা অধিকাংশ জমির মালিকরা জানান, আমাদের জমির সঠিক কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও ডিস্পুট দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা চাচ্ছেন কর্মকর্তারা। তবে অনেকেই চাহিদার মোটা অংকের ঘুষের টাকা দিতে না পেরে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। জানা যায়, ঘুষ বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধির নেপথ্যে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ দালাল। এ নিয়ে দর কষাকষিকালে জমি মালিকদের বসচা থেকে কখনোবা হাতাহাতি পর্যন্ত হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেঞ্চ সহকারী শহীদুল্লাহ ইসলামের সাথে জমি মালিকদের প্রকাশ্যে ঘুষের টাকার লেনদেন সংকেত অনুযায়ী ১০ টাকা চেয়ে ১০ হাজার টাকা নিলেন। এক্ষেত্রে অসহায় জমির মালিকদের কিছুই করার থাকছে না। তবে বিষয়টিতে তারা ফুঁসে উঠছেন। ভূমির মালিকদের ক্ষোভ যেকোন সময় ভিন্ন ঘটনার সৃষ্টি হতে পারে জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের কর্তা-কর্মচারীর অনিয়মের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে কালবিলম্ব না করে ঊর্ধ্বতন কর্তাদের পদক্ষেপ নিয়ে অসহায় জমির মালিকদের হয়রানি বন্ধের দাবি করেছেন তারা।