মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক হত্যাকারী বখাটে রুপম ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় যশোরে গ্রেফতার

সাইদ মেমন, বরিশাল ॥ বরিশালের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্কুল শিক্ষককে হত্যাকারী বখাটে রুপম চন্দ্র দে ওরফে রুপাকে (১৮) পুলিশ আজ সোমবার সকালে যশোরের Rupomখাজুরা বাসষ্ট্যান্ড থেকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতর কাছ থেকে রক্তমাখা চাক্কু উদ্ধার করা হয়। রুপম পালিয়ে ভারতে যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে বেনাপোলগামী উদয়ন এলিগেন্স পরিবহনে রওয়ানা হয়েছিলো।  

গ্রেফতারকৃতর উপস্থিতিতে বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বে থাকা উপ-পুলিশ কমিশনার জিল্লুর রহমান সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বলেন, নগরীর রুপাতলীর এ.ওয়াহেদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিন্নাত আলীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে গ্রেফতারকৃত রুপম।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য রুপম রবিবার রাতে ঢাকা থেকে বেনাপোলগামী উদয়ন এলিগেন্স পরিবহনে রওয়ানা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে এ খবর পেয়ে কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ শাহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল রবিবার রাতে বেনাপোলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পুলিশ সোমবার সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটে যশোরের খাজুরা বাসস্ট্যান্ডে বসে এলিগেন্স পরিবহনে তল্লাশী চালিয়ে খুনী রুপমকে গ্রেফতার করে। এসময় পুলিশ রুপমের ব্যাগ থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত রক্ত মাখা ছুরি, জিডি প্রত্যাহারের জন্য কাউনিয়া থানার ওসির বরাবরের একটি আবেদনপত্র ও নিজের লেখা কবিতার খাতা উদ্ধার করেছে।

সাংবাদিকদের সামনে রুপম বলে, স্যারের (জিন্নাত আলীর) মেয়ে তাজরীন জিন্নাত সুপ্তির সাথে আমার সাড়ে তিন বছর ধরে প্রেমের সর্ম্পক ছিলো। প্রায় এক বছর থেকে সে (সুপ্তি) আমাকে এড়িয়ে চলতে থাকে। এরপর বিভিন্ন সময়ে আমি রাস্তা ঘাটে বসে তার (সুপ্তির) সাথে কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। এ ঘটনা সুপ্তি স্যারকে জানালে সে (জিন্নাত আলী) আমার বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেন। এরপর থেকে পুলিশ বিভিন্ন সময় আমার বাড়িতে অভিযান চালায়। উপায়অন্তুর না পেয়ে আমি তখন ঢাকায় চলে যাই। গত ঈদুল আযহা উপলক্ষে আমি বাড়িতে আসলে পুলিশ আবার আমার বাসায় অভিযান চালায়। ওই দিনই আমি পুর্নরায় ঢাকায় চলে যাই। এর পর সুপ্তিকে ফোন করে সাধারন ডায়েরীটি প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু সে (সুপ্তি) আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখায়। কয়েকদিন আগে স্যারকে (জিন্নাত আলীকে) মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জিডিটি প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করলে সে আমাকে বাসায় আসতে বলে। তার কথা অনুযায়ী গত ২৫ নবেম্বর থানায় জিডি প্রত্যাহারের একটি লিখিত আবেদন নিয়ে আমি স্যারের বাসায় যাই। কিন্তু স্যারে জিডি না উঠিয়ে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। ঘরের বাইয়ে বের হয়ে আসার সময়ে স্যার পুলিশকে ফোন করতে চাইলে আমি তার পেটে চাক্কু ঢুকিয়ে দেই। এতেই যে স্যারে মারা যাবে তা বুঝতে পারিনি।

এদিকে শিক্ষক হত্যার প্রতিবাদে সোমবার বেলা ১১টায় নগরীর রুপাতলী সড়কে নিহত শিক্ষক জিন্নাত আলীর নিজ কর্মস্থল এ.ওয়াহেদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এবং সাড়ে ১১টায় জিলা স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা মানববন্ধন করেছেন। এছাড়াও জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য ফ্রন্ট নিজ কার্যালয়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করে খুনীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেছেন।