কম্পিউটার ভাইরাসমুক্ত রাখতে করনীয়

মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেনঃ প্রায় সব কম্পিউটার ব্যবহারকারীই কোন না কোন ভাবে ভাইরাসের দ্বারা কম বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ভাইরাসের প্রথম ভয়ংকর দিকটি হচ্ছে এরা কম্পিউটার ব্যবহারকারীর অগোচরে নিজেরা নিজেদের কপি তৈরি করতে পারে। সচেতন থাকলে ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে প্রতিকার করা থেকে প্রতিরোধ করাই উত্তম। কম্পিউটারে বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে। নির্দিষ্ট কোন লক্ষণ দ্বারা কম্পিউটার ভাইরাস শনাক্ত করা সম্ভব নয়। কারণ প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩০০টি নতূন ভাইরাস যুক্ত হচ্ছে সাইবারজগতে। লক্ষণসমূহ ভাইরাস প্রোগ্রাম ডিজাইনার যেভাবে চেয়েথাকেন সেভাবেই প্রকাশ পায়। অনেক ভাইরাস কোন লক্ষণ প্রকাশ করা ছাড়াই ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে কম্পিউটারের ক্ষতি সাধন করে। তবে কম্পিউটার অস্বাভাবিক আচরণ করলেই ভাইরাস আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা যায়। তবে মনেরাখতে হবে, প্রতিটি ভাইরাসের আক্রমণ কৌশল এক ও অভিন্ন নয়।

ভাইরাস প্রতিরোধ ও ধ্বংস করার জন্য কোম্পানিগুলোও বসে নেই। তারা বের করে চলছে একের পর এক অ্যান্টিভাইরাস, সেগুলির আবার আপডেটেড ভার্সন। বর্তমানে বেশিরভাগ কম্পিউটার ব্যবহারহারকারীই তাদের কম্পিউটারে অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করে থাকেন। অ্যান্টিভাইরাস কিংবা অ্যান্টিভাইরাস তৈরিকারী কোম্পানিগুলো যেহেতু সর্বশক্তিমান নয়, স্বাভাবিকভাবেই তাদেরকে ভাইরাসকে সনাক্ত করতে কিছু কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করতে হয়। তবে এই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সকল ক্ষেত্রে সফলকাম নাও হতে পারে। সাধারণতঃ অ্যাণ্টিভাইরাস সফটওয়্যার তৈরীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিভাইরাস তৈরিকারী কোম্পানিগুলো দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। প্রথম ও সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতিটি হল ভাইরাস সিগনেচার। এই সনাক্তকরণ পদ্ধতির প্রধান সমস্যা হল ব্যবহারকারীরা কেবল সেসব ভাইরাস থেকেই রক্ষা পান যেগুলো পুর্বোক্ত ভাইরাস সঙ্গার আপডেটে (ডাটাবেইসে) উল্লিখিত থাকে। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হল হিউরিস্টিক এলগরিদম যা ভাইরাসের সাধারণ সঙ্গা থেকে সনাক্ত করা হয়। এই পদ্ধতিতে অ্যাণ্টিভাইরাস সিগনেচার ফার্ম কর্তৃক সঙ্গায়িত ভাইরাস না হলেও তা সনাক্ত করতে পারে। অনেকেই মনে করেন কম্পিউটারে অ্যান্টিভাইরাস ইন্সটল করলেই তা  প্রতিরোধ করার জন্য যথেষ্ঠ, কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহারের পরও অনেক সময় কম্পিউটার ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। কোনো অ্যান্টিভাইরাসই সব ভাইরাস চিহ্নিত করতে সক্ষম নয়, তা যত ভাল অ্যান্টিভাইরাস হোক না কেন। তাই বলে একটা কম্পিউটারে একাধীক অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করাটাও বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারেনা। একাধিক অ্যান্টিভাইরাস কম্পিউটারে ইনস্টল করলে কম্পিউটারের পারফর্মেন্স কমে যাবে, কারন এক অ্যান্টিভাইরাস অপর অ্যান্টিভাইরাসকে ভাইরাস মনে করে তা ধ্বংস করার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে থাকবে ফলে কম্পিউটারটি ধীরগতি হয়ে যেতে পারে। যা কম্পিউটারের স্বাভাবিক কর্যিক্রমকে ব্যহত করবে। এজন্য বিকল্প একটা ব্যবস্থা হতে পারে পোর্টেবল অ্যান্টিভাইরাস যা ইউএসবি ড্রাইভ থেকে রান হবে। এধরনের কিছু অ্যান্টিভাইরাস হল ক্লেম উইন পোর্টেবল (ClamWin Portable), আইআর ক্লিন (IRClean), মাল্টি ভাইরাস ক্লিনার (Multi Virus Cleaner), রোটকিট রিভেলার (Rootkit Revealer). অন্যদিকে, আপনার কম্পিউটারে সন্দেহজনক কোন ফাইল চোখে পড়লে তা সাথে-সাথে ভাইরাসটোটাল ডট কম (http://www.virustotal.com) সাইটে গিয়ে চেক করে নিতে পারেন। এই সাইটে বর্তমানে জনপ্রিয় প্রায় ৪৫টা অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে আপনার দেওয়া ফাইলটি চেক করে চেককৃত প্রতিটি অ্যান্টিভাইরাসের নাম, ভার্সান, শেষ আপডেট ও রেজাল্ট অপসনে কোন অ্যান্টিভাইরাস আপনার দেওয়া ফাইলটিকে কিভাবে দেখছে তা দেখাবে। লিস্ট দেখে আপনি বুঝতে পারবেন ফাইলটি ভাইরাস কিনা এবং ভাইরাস হলে কোন-কোন অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করে তা প্রতিহত করতে পারবেন। তবে প্রচলিত অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম দ্বারা ভাইরাস মুক্ত করা না গেলে ফাইল ডিলিট করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। অনেক সময় ডিক্স ফরমেট ও নতূন করে অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করা লাগতে পারে। তবে যারা উন্মুক্ত সফ্টওয়ার, বিশেষ করে উন্মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন তারা এখনো পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রেই ভাইরাসের মতো অনাকাঙ্খিত সমস্যা হতে নিরাপদ দূরত্বে রয়েছেন। সুতরাং ভাইরাসমুক্ত কম্পিউটার ব্যবহার করতে চাইলে উন্মুক্ত সফ্টওয়ার ব্যবহারের বিষয়েও গুরুত্ব দেয়া উচিত। এতে করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়াসহ কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভাইরাসমুক্ত থাকা সম্ভব অনেকক্ষেত্রেই।  

লেখকঃ প্রোগ্রামার, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, ঢাকা।