নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশালে-ঢাকা মহাসড়কসহ আঞ্চলিক ও জেলা সড়ক সংস্কারের দাবিতে দক্ষিণাঞ্চলের ২৮ রুটের ডাকা অনিদৃষ্টকালের ধর্মঘট সাত ঘন্টা পরেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে বরিশাল জেলা বাস মালিক সমিতি এক জরুরি সভা করে আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ২৮ রুটে অনিদৃষ্টকালের জন্য বাস, পরিবহন, ট্রাক ও মাইক্রোবাস চলাচল বন্ধের ঘোষনা করেন। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টায় বাস মালিক ও শ্রমিক সমিতি, ট্রাক মালিক ও শ্রমিক সমিতির নেতৃবৃন্দ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা করেন জেলা প্রশাসক। সভা শেষে বরিশাল বাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক শাহ আলম ফকির জানান, আজ বুধবার থেকে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরুর আশ্বাস দেয়া হয়েছে। সেমতে দুপুর ১টা থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
বরিশাল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জরুরী সভায় সভাপতিত্ব করেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এস. এম আরিফ-উর-রহমান। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস, বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র দাস, সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান, মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার আসলাম খান, বাস মালিক সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক শাহ আলম ফকির, বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি তৈয়ব আলী মৃধা, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বাশার বাদশা প্রমুখ।
এদিকে বিভিন্ন জেলা পরিবহন সমিতি নেতৃবৃন্দ ও শ্রকিকেরা আন্দোলনের সাথে একত্মতা ঘোষনা করে মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত সকল যানবাহন বন্ধ রাখে। ফলে দক্ষিণাঞ্চল থেকে দেশের বিভিন্নস্থানে যাতায়াতের হাজার-হাজার যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সকালে কর্মসূচীর অংশ হিসেবে নতুল্লাবাদ ও গৌরনদীর সীমান্তবর্তী ভূরঘাটা বাসষ্ট্যান্ডে বাস ও পরিবহন শ্রমিকেরা রাস্তা অবরোধ করে রাখেন।
বরিশাল জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক শাহ আলম ফকির বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের সংস্কার না হওয়ায় বেহাল দশা হয়েছে। এছাড়া বেশীর ভাগ জেলা সড়কের অবস্থাও মরন ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের বরিশাল থেকে ভুরঘাটা পযর্ন্ত বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। জয়শ্রী এলাকা থেকে গাড়ী চালাতে হিমশিম খেতে হয় চালকদের। গৌরনদীর ভূরঘাটা থেকে গড়িয়ারপাড় পযর্ন্ত রাস্তার অবস্থা খুই নাজুক। ওই সকল সড়ক দিয়ে চালকেরা ঠিকমত গাড়ি চালাতে পারছেন না। এক ঘন্টার পথ অতিক্রম করতে কমপক্ষে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে। এছাড়াও প্রতিদিনই অসংখ্য দুর্ঘটনা লেগেই আছে। দক্ষিণাঞ্চলের সাথে স্থলপথে যোগাযোগের একমাত্র বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের নাজুক অবস্থার কারনে বাস, পরিবহন, ট্রাক ও মাইক্রোবাসের মালিকদের এখন পথে বসার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ১২ ডিসেম্বর সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। ওইদিন জরুরি ভিত্তিতে মহাসড়কসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২৮টি রুটের সড়ক সংস্কারের জন্য ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু মহাসড়ক ও সড়ক সংস্কারের কোন উদ্যোগ না নেয়ায় বাস মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে গত সোমবার রাতে জরুরি সভায় পরিবহন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক তার সভাকক্ষে মালিক সমিতির সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে করে বুধবার থেকে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করা আশ্বাস দেয়ার পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।