সাতদিনের জন্য বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে বাংলাদেশ : শ্রীলঙ্কায় রিপিটার নষ্ট

ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংকট দেখা দেবে। আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগের প্রয়োজনীয় ব্যান্ডউইথের জোগানদাতা সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডও (বিটিসিএল) এখন পর্যন্ত বিকল্প ব্যবস্থায়

ব্যান্ডউইথ সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেনি। তাদের যোগাযোগের মাধ্যম পশ্চিমমুখী থেকে ঘুরিয়ে পূর্বমুখী করার কোনো উদ্যোগই এখন পর্যন্ত নিতে পারেনি। বর্তমানে বিটিসিএলের ২২ এসটিএম ওয়ানের মধ্যে ১৪টি রয়েছে পশ্চিম দিকে। পূর্বদিকে রয়েছে মাত্র ৮টি এসটিএম ওয়ান। এ আটটি এসটিএম ওয়ান দিয়ে যাবতীয় টেলিযোগাযোগ কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না বলেও বলছেন বিশেষজ্ঞরা। যোগাযোগের পথ না ঘুরিয়েও এত বিশাল ফিগারের ব্যান্ডউইথ বিকল্প কোন উপায়ে পাওয়া যাবে সে বিষয়ে তাদের যোগাযোগ এখনও শুরুই হয়নি।
এছাড়া ভারতের কোন কোম্পানির কাছ থেকে আপৎকালীন ব্যান্ডউইথ নিতে গেলে তারা অনেক বেশি দাম হাঁকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিটিসিএলের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রকিউরমেন্ট পলিসিতে কড়াকড়ি থাকায় চাইলেই যে কোনো সময় যে কোনো কিছু কেনার সুযোগ তাদের নেই। অন্যদিকে পূর্বদিকে যেতে চাইলে প্রতিটি এসটিএম ওয়ানের জন্য ২৩ হাজার টাকা করে খরচ বাড়বে।
বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) বলছে, খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। একদিকের সংযোগ বন্ধ থাকলে কিছু সমস্যা হবে ঠিক। কিন্তু এখনও হাতে যেহেতু কয়েক দিন সময় আছে সে কারণে বিকল্প আয়োজন করা যাবে। তারা বলছেন, আপৎকালীন সিঙ্গাপুরের কোম্পানিগুলোর মাধ্যমেও কাজ করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে আমাদের সব পশ্চিম দিকের যোগাযোগও তাদের মাধম্যেই করা যেতে পারে। এতে হয়তো কিছু বাড়তি খরচ হবে। কিন্তু বিএসসিসিএলের কথায় ভরসা করতে পারছেন না দেশের তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে বিটিসিএলের কাছ থেকেই যেহেতু দেশের অধিকাংশ গ্রাহক ব্যান্ডউইথ নিয়েছেন সে কারণে তারা উদ্বিগ্ন।
জানা যায়, তিন-চার দিন আগে সি-মি-উই-৪-এর কলম্বো শাখায় রিপিটার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মেরামতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। কিন্তু মেরামত করতে গেলে পুরো নেটওয়ার্ক বন্ধ করতে হবে। একই সময়ে ভারতের চেন্নাই এবং মুম্বাইয়েও মেরামত কাজ করা হবে। ভারতের সাবমেরিন কেবলের ৬টি বিকল্প সংযোগ থাকায় তাদের সমস্যা হবে না। শ্রীলংকারও কয়েকটি বিকল্প সংযোগ রয়েছে। তারপরও আমাদের কথা চিন্তা করেই তারা তাৎক্ষণিকভাবে মেরামত কাজ শুরু করেনি। বরং আমাদের বিকল্প নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা চালু করার সুযোগ দিতে সময় দিয়েছে তারা।
এ বিষয়ে সাবমেরিন কেবল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, কালবিলম্ব না করে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া গেলে হয়তো ক্ষতি তেমন একটা হবে না। সব আন্তর্জাতিক গেটওয়ে, ইন্টারনেট গেটওয়ে বা অন্যান্য টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানকে বিকল্প আয়োজনের কথা ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। অথচ গতকাল সন্ধ্যায় বিটিসিএলের এমডি এসএম খাবীরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত তাদের কিছুই জানানো হয়নি। তবে এমন কিছু হলে নিশ্চয়ই বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে তিনি জানান, হয়তো কিছু ঝামেলা হবে, কিন্তু চালিয়ে নেওয়া যাবে।
আজ ভি-স্যাট ব্যবহারের শেষ দিন। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় ভি-স্যাটের মাধ্যমেই দেশে ইন্টারনেটের যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে অবৈধ কল টার্মিনেশনের সঙ্গে ভি-স্যাটের সম্পর্ক থাকতে পারে আশঙ্কা করে এই লাইসেন্স আর নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আজ দেশে বৈধভাবে ভি-স্যাট ব্যবহারের শেষ দিন। এত দিন পর্যন্ত সাবমেরিন কেবলে কোনো সমস্যা হলে ব্যাকআপ হিসেবে ভি-স্যাট ব্যবহার করা হতো। এক্ষেত্রে ভি-স্যাট ব্যবহার বন্ধ হওয়ার পর সাবমেরিন কেবলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াকে কেয়ামতের সঙ্গে তুলনা করেছেন আইএসপি ব্যবসায়ীরা। তারা দাবি করেন, আরও কিছুদিনের জন্য যেন ভি-স্যাটের লাইসেন্সের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। না হলে এ পরিস্থিতি উত্তরণ করা কোনো অবস্থায় সম্ভব হবে না।

Source : IBNewsOnline.com