খোন্দকার কাওছার হোসেন : র্যাব-পুলিশের বাধায় হরতালসহ অধিকাংশ কর্মসূচি পালন করতে না পারায় রাজনৈতিক হতাশায় ভুগছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। কোনো কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে তা পালন করতে না পেরে তাদের মধ্যে এ হতাশা বিরাজ করছে। অবশ্য হতাশার সঙ্গে তারা প্রচন্ড ক্ষোভের আগুনেও জ্বলছেন। এ ক্ষোভ সরকার, পুলিশ-র্যাব ও নিজ দলের কর্মীদের ওপর। বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বললে তাদের এ হতাশা ও ক্ষোভের চিত্র ফুটে ওঠে।
নেতাদের মতে, বিএনপি একটি প্রকাশ্য রাজনৈতিক দল। জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল। স্বাধীনতার পরে এ দলটি সবচেয়ে বেশী সময় সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করেছে। দলটির চেয়ারপারসন এখনো সংসদের বিরোধী দলের নেতা। বর্তমান সংসদে দলটির অনেক সংসদ সদস্য রয়েছে। এমন দল ঘোষিত যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি সরকার র্যাবÑপুলিশ বাহিনী দিয়ে প্রতিহত করে কিংবা ভন্ডুল করে দেয়। এটা গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। গণতন্ত্রে হরতাল মিছিল সমাবেশ গণতান্ত্রিকভাবে স্বীকৃত।
অন্যদিকে এসব কর্মসূচিতে দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেন না। যারা অংশ নেন তারা র্যাব পুলিশকে মোকাবেলা না করে দ্রুত মাঠ ত্যাগ করেন অথবা পুলিশের হাতে ধরা দিয়ে নিজেদের সেইভ করেন। নেতাকর্মীরা এভাবে কৌশলে পিঠ বাঁচিয়ে রাজনীতি করেন। এসব কারণে দলের সিনিয়র নেতারা রাজনৈতিকভাবে হতাশ। র্যাব পুলিশের কর্মকান্ডে তারা যেমন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর ক্ষুদ্ব তেমনি নেতাকর্মীদের এ কৌশলের কারণে তাদের ওপরও ক্ষুদ্ব। কিন্তু এ হতাশা বা ক্ষুদ্ধতার কথা তাদের বরাতে মিডিয়ায় প্রকাশিত হোক তা ও তারা চান না। দলে সমস্যা হতে পারে এ আশঙ্কা রয়েছে তাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, সরকারের মারমুখি আচরন ও নেতাকর্মীদের ভুমিকায় সিনিয়র নেতাদের হতাশ হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই। দলের অনেক অভ্যন্তরীন সমস্যা রয়েছে সেগুলোর সমাধান না করে সরাসরি সরকার বিরোধী আন্দোলনে নামার কারণেই বিএনপিকে এ রাজনৈতিক সমস্যায় পরতে হয়েছে।
তার মতে, দলের অভ্যন্তরীন সমস্যার সমাধান করে মাঠে নামলেই নেতাকর্মীরা মাঠে নামতো যেকোনো পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিতো, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন বেগবান হতো, সিনিয়র নেতাদের হতাশ বা ক্ষোভ প্রকাশ করতে হতো না।
কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তা মানতে নারাজ। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, হতাশা আসবে কেন, রাজনীতিতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, তবে ক্ষুদ্ধতো অবশ্যই, দেখছেন না কর্মসূচি পালন করতে না দিয়ে সরকার আমাদের মৌলিক অধিকার হরন করছে। তারা দেশটাকে পুলিশী রাষ্ট্রে পরিনত করেছে। র্যাব পুলিশ দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে বিরোধী দলকে দমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, এসব দমন পীড়ন চালিয়ে সরকার গদি রক্ষা করতে পারবেনা। এভাবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে রাজনৈতিক দলের কার্যালয় ঘিরে রাখার ইতিহাস আর কোথাও নেই। পুলিশের অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে এটা একটা যুদ্ধক্ষেত্র।
তিনি বলেন, নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে পারছেন না, ঘরে থাকতে পারছেন না। মাঠে নামলে পুলিশ বাধা দেয়, নির্যাতন করে, আহত করে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠায়। ঘরে থাকতে পারেন না একটার পর একটা মামলায় মিথ্যা আসামী করে ঘরে ঘরে তল্লাশী চালায়। গুম করে হত্যা করে, এখানে ওখানে লাশ পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, গত ১৮ ডিসেম্বরের মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের দিন সকালে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় ৮ হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা দেয় পুলিশ। এসব মামলার আসামি করা হয়েছে মহানগর বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের। অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা বেশি হওয়ায় পুলিশ যে কাউকে গ্রেপ্তার করে ওই মামলায় জড়াতে পারবে। যা আমাদের নেতাকর্মীদের জন্য অবশ্যই আতঙ্কের।
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি কোনো আন্ডারগ্রাউন্ড দল নয়, সন্ত্রাসী দল নয়। বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি পুলিশ দিয়ে নয়, রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করুন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, আমাদের দলে হতাশা নেই, বরং দিন দিন দল আরো সংগঠিত হচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের মনোবল আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বরং আওয়ামী লীগ এখন অনেক উল্টোপাল্টা কা- ঘটাবে। কারণ তারা সরকার চালাতে ব্যর্থ হয়েছে, হয়ে পরেছে জনবিচ্ছিন্ন। পায়ের তলায় এখন আর মাটি নেই তাদের।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা নিজেও দিশেহারা। সে জন্যই তিনি দেশে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে এবং মানুষকে পুলিশের বুটের তলায় পিষে বিদেশে শান্তির মডেল উপহার দিচ্ছেন। ক্রিকেটের পরিভাষায় বলতে হয়, শেখ হাসিনা এখন নার্ভাস নাইন্টিতে আছেন। নিশ্চিত, যেকোনো সময়ে আউট হয়ে যাবেন তিনি। নার্ভাসনেস কাটানোর জন্যই আমাদের দলীয় কার্যালয় পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে, নেতাকর্মীদের নামে গয়রহ মিথ্যা মামলা দেয়।
ঢাকা মহানগরী বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বলেন, পুলিশের আচরন পাকিস্তানী বাহিনীর শাসনকেও হার মানিয়েছে। আমাদের কোনো সভা সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারি না করেও পুলিশ মিছিল সমাবেশ করতে বাঁধা দিচ্ছে। এটা করে তারা গনতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই আমাদের বিজয় অর্জন করতে হবে।
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণ করছে আমাদের কোনো কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছেনা। তিনি বলেন, বিরোধীদলকে এভাবে কর্মসূচি পালনে বাধা দিলে সরকার বেশি দিন টিকে থাকতে পারবে না।