নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে কচুরিপানা দিয়ে কাগজ এবং ওই কাগজ দিয়ে তৈরি হয়েছে শুভ বড়দিনের সান্তা ক্লজসহ নানা উপহার। ওইসব উপহার সামগ্রী রফতানি করা হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে। সর্বত্র কচুরিপানার তৈরি করা উপহার সামগ্রী ব্যাপক সারা ফেলেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আজ রবিবার বিকেলে আগৈলঝাড়া উপজেলার জোবারপার এন্টারপ্রাইজে গিয়ে কথা হয়, জোবারপার গ্রামের মনি বালার (৫০) সাথে। বিধবা মনি বালার জীবনে কচুরিপানা আর বড়দিন এবার তার কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। মনিবালা হচ্ছেন কচুরিপানার কাগজ দিয়ে তৈরি করা বড়দিনের সান্তা ক্লজসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তৈরির সু-নিপুন কারিগরদের একজন। মনি বালার ন্যায় ওই এলাকার দু’হাজার অসহায় ও দুঃস্থ্য নারীরা বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি)’র উপজেলার ৫টি কেন্দ্রে পরিত্যক্ত কচুরিপানাকে পরিণত করছেন বড়দিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নানা উপহার সামগ্রীতে। ওই সংস্থার মাধ্যমে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়েছে এসব উপহার সামগ্রী।
মনি বালা বলেন-‘অভাবের সংসারে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে একসময় কচুরিপানার শিকড় আর ফুল সেদ্ধ করে খেয়ে বাঁচতাম। আর এখন আমরা কচুরিপানা দিয়ে কাগজ বানিয়ে বড়দিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বাহারী উপহার ও খেলনা সামগ্রী তৈরি করে আজ তিনবেলা ভাত খেতে পারি।’ তারা বড়দিনের ট্রি সাজানোর নানা পন্য সামগ্রী ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বাহারী উপহার ও খেলনা সামগ্রী তৈরির কাজ করে আসছেন। মনি বালার আরেক সঙ্গী বিধবা বিনা হালদার (৪৫) ও বিধবা শিউলী বেগম (৪৮) বলেন, ‘আমরা যেসব জিনিস তৈরি করেছি, সেগুলো দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে দেশ-বিদেশের খ্রীষ্টিয় সম্প্রদায়ের লোকজন শুভ বড়দিন পালন করে আসছেন।
এমসিসি’র জোবারপাড় এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার পাপরী মন্ডল জানান, বর্তমানে প্রকল্পের ৫টি কেন্দ্রে প্রায় দুই হাজার নারী শ্রমিক কাজ করছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশরাই হচ্ছেন স্বামী পরিত্যক্তা কিংবা অসহায় ও দুঃস্থ্য। তিনি আরো বলেন, উপজেলার জোবারপার এন্টারপ্রাইজ, কালুরপাড়ের বির্বতন, বড়মাগরার কেয়াপাম, নগরবাড়ির চ্যারিটি ফাউন্ডেশন ও বাগধা এন্টারপ্রাইজে সবসময় নতুন নকশা বানানো হয়। সচেতনভাবেই আমরা সবকিছুকে সাদামাটা বানাই, টেকসই করে বানাই এবং কম প্রযুক্তি ব্যবহার করি। কচুরিপানা থেকে কাগজ তৈরি করে সেই কাগজ দিয়ে তৈরি করা নানা উপহার সামগ্রী দিয়ে সাজানো অফিস ঘরে বসে কথা হয় পাপরী মন্ডলের সাথে। বড়দিনের সান্তা ক্লজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি একটা ছোটো পুতুল হাতে নিয়ে বলেন, আমাদের এখানে সান্তা আছে! তিনি আরো বলেন, এবছর দেশব্যাপী তাদের এখানকার তৈরি সান্তা ক্লজসহ বড়দিনের অন্যান্য পন্য সামগ্রী বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।